জাহিদ রহমান : ‘সেই কৈশরে-তারুণ্যে মাগুরার বিভিন্ন মাঠে ফুটবল খেলার কথা মনে পড়লে বড় নষ্টালজিক হয়ে পড়ি। সত্তর দশকে যখন স্কুলে পড়ি তখনই প্রথম মাগুরাতে খেলতে যাই। তখন আমি যশোর মুসলিম একাডেমি স্কুলের ছাত্র। আন্তস্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলতে যাই মাগুরাতে। এরপর আরও কত গেছি। মাগুরা কোর্টবিল্ডিং, নোমানী ময়দান মাঠ-এর কথা বড় বেশি মনে পড়ে। এর বাইরে খুব সম্ভবত আলোকদিয়ার মাঠেও খেলেছি। সবার কথাই ভীষণ মনে পড়ে।’
মাগুরার মাঠে ফুটবল খেলার স্মৃতি প্রসঙ্গে এক নিঃশ্বাসে এসব কথা বলে গেলেন জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার রকিব। পুরো নাম খোন্দকার রকিবুল ইসলাম। লেফট ব্যাক পজিশনে খেলতেন। সত্তর ও আশির দশকের ফুটবলমোদীদের কাছে বড় চেনা এক নাম। এখন রকিব প্রসঙ্গ এলে কেউ বলেন ‘মোহামেডানের রকিব’, আবার কেউ বলেন ‘যশোরের রকিব’। ফুটবলমোদীদের হ্নদয় থেকে এই নামটি এখনও মুছে যায়নি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বৃহত্তর যশোরের যে সব তরুণ সেসময় যশোর থেকে এসে ঢাকার মাঠ আলোকিত করেন তাঁদের মতো অন্যতম একজন রকিব। যশোর লীগে তাঁর শুরু ছিল টাউন ক্লাবের হয়ে। খুলনা, যশোর হয়ে ঢাকার ফুটবলে তাঁর প্রথম অভিষেক ৭৩ সালে মোহামেডান স্পোর্টি ক্লাবের হয়ে। ৭৭ সাল পর্যন্ত মোহামেডানেই হয়েই খেলেন। এরপর আবাহনীতে খেলেন দুবছর। ৮১ সালের দলবদল করে চলে আসেন বিজেএমসিতে। মাঝে রহমতগঞ্জে খেললেও ফুটবল থেকে অবসর নেন বিজেএমসি ক্লাব থেকেই। জাতীয় দলেও তাঁর ক্যারিয়ার ছিল অনবদ্য। ৭৫ সালে জাতীয় যুব ফুটবলে খেলার সুযোগ পান। এরপর কাজী সালাহউদ্দিন, চুন্নুদের সাথে জাতীয় দলে লেফট পজিশনে নিজেকে অনিবার্য করে তোলেন দীর্ঘদিন। ৭৭ সালে আগা খান গোল্ডকাপে মোহামেডানের ক্যাপ্টেন-এর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এ ছাড়া ঢাকা লীগে বিজেএমসি এবং রহমতগঞ্জ ক্লাবেরও কৗাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সত্তর দশকে বৃহত্তর যশোরের ফুটবলে সব সাফল্যের সারথী খোন্দকার রকিব। নিজ জেলার জন্য সবসবময় নিজেকে উজাড় করে খেলেছেন। বললেন, ‘৭৬ সালে জাতীয় ফুটবলে যশোরের চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা ছিল এক বিশাল অর্জন। তখন বৃহত্তর যশোরে ফুটবলারের ছড়াছড়ি। ফুটবলার হাকিম ভাই, গাজী ভাই, শফিকুজ্জামান ভাই, মান্নান ভাই, সাঈদ ভাই, রউফ ভাইসহ আরও কত ফুটবলার। ৭৬ সালে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত শেরেবাংলা কাপের ফাইনালে আমি খেলতে পারিনি। কেননা সেসময় আমি থাইল্যান্ডে খেলতে যাই যুবদলের সাথে। ফাইনালের দিন থাইল্যান্ড থেকে এসে মাঠে উপস্থিত হলেও দর্শক হিসেবে ছিলাম, খেলোয়াড় হিসেবে নয়।’
মাগুরার মাঠে ফুটবল খেলা প্রসঙ্গে রকিব আরও বলেন, ‘এখন আমার স্মৃতিতে মাগুরার ফুটবলার খবির ভাই, পান্না ভাই ভীষণ উজ্জ্বল হয়ে আছে। উনারা দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিয়ে চলে গেছেন। পারলা’র মোহনও মারা গেছে। উনাদের পাশে থেকে খেলেছি। কত দর্শক, কত মধুর দিন! সেই দিনের কথা মনে পড়লে মনটা খারাপ হয়ে যায়। এ ছাড়া মকবুল, লোভন, কাজী ফিরোজসহ আমরা আরও অনেকেই একই সাথে কত ফুটবল ম্যাচ খেলেছি। এখনও তাই মাগুরা ভীষণ টানে।’
রকিব-জিল্লুর জুটি প্রসঙ্গ টানলে বলেন, এটি এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে, এটিই জীবনের সার্থকতা। স্মরণ করেন সতীর্থ পুটবলার সাথী, কালাম, আজাদ, ইসরাফিলকে।
সাবেক জাতীয় ফুটবলার রকিব বর্তমানে ঢাকার কল্যাণপুরে থাকেন। ফুটবলের উন্নয়নে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন নিজেকে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা অনুর্ধ্ব ১৭ জাতীয় ফুটবল কমিটির অন্যতম সদস্য তিনি। ফুটবলের বর্তমান অবস্থাতে অন্যদের মতো তাঁর মনেও ঢের আক্ষেপ। তাঁর মতে, দেশে এখন ফুটবল মাঠ আছে কিন্তু ফুটবলার নেই। ফুটবলের প্রতি সেই বাঁধভাঙা ভালোবাসা নেই। আর তাই ফুটবলের প্রতি ক্রমে আগ্রহ কমেই যাচ্ছে। নিজের সময়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘সেসময় যেখানে গিয়েছি সেখানেই হাজার হাজার মানুষ এসেছে। কত ভালোবাসা পেয়েছি! ফুটবলের সেই দিনের কথা এখন আর কল্পনাও করা যায় না।’
লেখক : সম্পাদক, মাগুরা প্রতিদিন ডটকম