আজ, রবিবার | ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | দুপুর ১:১৯

ব্রেকিং নিউজ :

উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মাগুরা সদরে রানা ও শ্রীপুরে রাজনের দিকেই সবার নজর


নিজস্ব প্রতিবেদক: ৮ মে বুধবার মাগুরা জেলার দুই উপজেলা মাগুরা সদর ও শ্রীপুর উপজেলার ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সব আয়োজন শেষ। সোমবার রাত ১২ টার পর থেকে প্রচার-প্রচারণাও বন্ধ। উপজেলা পরিষদের নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ হয় এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন।

মাগুরা জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে ৫ মে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবু নাসের বেগের সভাপতিত্বে জেলা আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষা সংক্রান্ত বিশেষ সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষায় দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।

এদিকে মাগুরা সদর ও শ্রীপুর এই দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে কে জয়ী হবে এ নিয়ে চলছে রাজ্যের জল্পনা কল্পনা। তবে সব ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন মাগুরা সদর ও শ্রীপুরে প্রথমবারের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া দুই প্রার্থী রানা আমীর ওসমান এবং শরীয়ত উল্লাহ হোসেন মিয়া রাজন।
মটর সাইকেল প্রতীকের প্রার্থী রানা আমির ওসমান জেলা আওয়ামী লীগের একটি শক্ত বলয়ের সমর্থনে মাগুরা সদর উপজেলার প্রতিটি গ্রাম চষে বেড়াচ্ছেন। তাঁর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বি হেলিকেপ্টার প্রতীকের প্রার্থী সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শেখ রেজাউল ইসলাম। তিনি সাবেক এমপি সাইফুজ্জামান শিখর সমর্থিত প্রার্থী। সাইফুজ্জামান শিখর তাঁর সমর্থিত নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন জায়গাতে শেখ রেজাউল ইসলামের সমর্থনে সভা-সমাবেশে জোরালোভাবে ভোট প্রার্থনা করছেন। অনেকের মতে তাই এই নির্বাচন সাইফুজ্জামান শিখরের জন্য এখন এক বিরাট চ্যালেঞ্জ এবং মর্যাদার বিষয়।

অন্যদিকে রানা আমীর ওসমান সত্যিই তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বি শেখ রেজাউল ইসলামকে পরাজিত করতে পারলে মাগুরার রাজনীতিতে এটি হবে একটি আলোচিত ঘটনা।

ভোটের মাঠের চিত্র বলছে মাগুরা সদর উপজেলাতে দুজনের মধ্যে লড়াই হবে জমজমাট। দুজনেই জয়ের জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন রানা আমীর ওসমানকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় বেশ সস্তিতে রয়েছেন রানা আমির ওসমান।

অন্যদিকে শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারমান পদে সবার নজর রয়েছে মটর সাইকেল প্রতীক পাওয়া শরীয়ত উল্লাহ হোসেন মিয়া রাজনের দিকে। রাজন এই প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছে। সে শ্রীকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুতুবউল্লাহ কুটির আপন ছোট ভাই। তাঁর দুই শক্ত প্রতিদ্বন্ধী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মিয়া মাহমুদুল গনি শাহীন (দোয়াতকলম) এবং এম. এম. মোতাসিম বিল্লাহ সংগ্রাম (ঘোড়া)। তবে জনমত বলছে শরীয়ত উল্লাহ হোসেন মিয়া (রাজন) এবং এম. এম. মোতাসিম বিল্লাহ সংগ্রামের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্ধীতা হবে। নির্বাচনী রেসে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছেন দুবার নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মিয়া মাহমুদুল গনি শাহীন।

মাগুরা-১ আসনের সাবেক এমপি সাইফুজ্জামান শিখর দুবারের উপজেলা চেয়ারম্যান মিয়া মাহমুদুল গনি শাহীনকে সমর্থন দিলেও শিখরের অনুগত বেশিরভাগ নেতাকর্মীই তাঁর সাথে নেই। এমন কী সাইফুজ্জামান শিখরের আনুকল্যে হঠাৎ চেয়ারম্যান হওয়া পান্না খাতুনও নেই মিয়া মাহমুদুল গনি শাহীনের সাথে। শরীয়ত উল্লাহ হোসেন মিয়া (রাজন) এবং এম. এম. মোতাসিম বিল্লাহ সংগ্রাম দুজনই শ্রীকোল ইউনিয়নের বাসিন্দা। উপজেলা নির্বাচনের ভোটের মাঠের অভিজ্ঞ সংগ্রামের সাথে নবাগত রাজনের লড়াইটা দেখার জন্য পুরো শ্রীপুরের মানুষ এখন উন্মুখ। মৃদুভাষী রাজন চষে বেড়াচ্ছেন গোটা উপজেলার গ্রাম থেকে গ্রামে। দিনরাত পরিশ্রম করছেন। সর্বত্র বিপুল সমর্থন পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর সমর্থকেরা। বিভিন্ন বক্তব্যে তিনি বলছেন প্রবাসের আয়েশী নিশ্চিত জীবনকে তুচ্ছ করে তিনি শ্রীপুরের জনগণের সেবায় পিতা আকবর হোসেনের মতো নিজেকে উৎসর্গ করতে চান। এই প্রত্যয়েই তিনি ভোটে লড়ছেন।

অন্যদিকে শ্রীপুরবাসীর কাছে এম. এম. মোতাসিম বিল্লাহ সংগ্রাম পরিচিত মুখ। মাঠ ও ভোট-দুটোই তার চেনা। অভিজ্ঞ আর নবাগতের লড়াইটা তাই শ্রীপুরে দারুণভাবে জমে উঠবে বলে সবার বিশ্বাস।

সর্বশেষ ২০১৯ সালে মাগুরা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৬০ হাজার ৯৮৫ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা আবু নাসির বাবলু। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী জাতীয় পার্টির হাসান সিরাজ সুজা পেয়েছিলেন ২৬ হাজার ৪৫৯ ভোট। এর আগে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৭২ হাজার ৩৩৪ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ নেতা পঙ্কজ কুমার কুন্ডুকে হারিয়ে জয়ী হন বিএনপি নেতা নাজিম উদ্দিন। ২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল নাজিম উদ্দিন মৃত্যুবরণ করলে ২০১৫ সালের ২২ জুলাই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা রুস্তম আলী খান ৫৫ হাজার ১৮৭ ভোট পেয়ে জয়ী হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী বিএনপি নেতা আলী আহমেদ পান ২৭ হাজার ৯১ ভোট। আওয়ামী লীগ নেতা আবু নাসির বাবলু পান ১৮ হাজার ৪৬৩ ভোট। ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হন মো. আবু নাসির বাবলু। মাগুরা সদর উপজেলাতে ৮৫ সালের ২৫ মে প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জাসদের এম এ আওয়াল।

এদিকে সর্বশেষ ২০১৯ সালে শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে আনারস প্রতীকে ৩৯ হাজার ১০৮ ভোট পেয়ে জয়ী হন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মিয়া মাহমুদুল গনি শাহীন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নৌকা প্রতীকের পঙ্কজ কুমার সাহা ২৪ হাজার ৭৭৪ ভোট পেয়ে পরাজিত হন। শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতা নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে সরাসরি কাজ করার কারণে পঙ্কজ কুমার সাহার পরাজয় ত্বরান্বিত হয়। সেই ক্ষত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পঙ্কজ কুমার সাহা। এর আগে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বদরুল আলম হীরো ৩৭ হাজার ৩৭৩ ভোট পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হুমাউন উর রশীদ মুহিত ৩৩ হাজার ১১ ভোট পেয়ে পরাজিত হন। সেসময় আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপের কৌশলগত বিরোধীতার কারণে মুহিত অনাকাঙ্খিতভাবে পরাজিত হন। এদিকে ২০০৯ সালে মিয়া মাহমুদুল গনি শাহীন প্রথমবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দাঁড়িয়ে হেভিওয়েট প্রার্থী মো. গোলাম মোক্তাদের রহমানকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

শেয়ার করুন...




©All rights reserved Magura Protidin. 2018-2022
IT & Technical Support : BS Technology