মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : মাগুরা-ফরিদপুর সড়কের কামারখালী-গড়াই সেতু চালুর পর ৩ দশক পেরিয়ে গেলেও পারাপারের টোল আদায় বন্ধ হচ্ছে না। এই সময়ে নির্মাণ ব্যায়ের ৪ গুন অর্থ রাজস্ব আয় হলেও ‘টোল আদায় সরকারের উপার্জনের একটি খাত’ উল্লেখ করে এটি বন্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা।
ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার মধুখালী উপজেলার গড়াই নদীর উপর প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত ৬২২ মিটার দৈর্ঘের সেতুটি ১৯৯১ সালের ১৬ জুলাই চালু করা হয়। উদ্বোধনের পর থেকেই প্রতি ৩ বছর অন্তর সেতুটি দিয়ে পারাপার হওয়া বিভিন্ন প্রকারের পরিবহন থেকে টোল আদায়ের জন্যে নিয়োগ করা হয় ইজারাদার। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১ জুলাই ৫০ কোটি ১৬ লক্ষ টাকার চুক্তিতে ৩ বছরের জন্যে ইজারা দেওয়া হয়েছে চুয়াডাঙ্গার ডেফোডিল কনস্ট্রাকশনকে। আর সেতু নির্মাণের পর বিগত ৩ দশকে নিয়োগকৃত ইজারাদারদের কাছ থেকে সর্বসাকূল্যে আদায় হয়েছে ১৯৭ কোটি ৩৫ লক্ষ ১৪ হাজার টাকা। যা সেতু নির্মাণ ব্যায়ের প্রায় ৪ গুন।
মধুখালী উপজেলার কামারখালী টোল ঘর সূত্রে জানা গেছে, গড়াই সেতু পারাপারের জন্যে প্রতি ট্রেইলরের জন্যে ৫৬৫ টাকা, ভারি ট্রাক ২৪০ টাকা, মিডিয়াম ট্রাক ১৭০ টাকা, বাস ৯০ টাকা, মাইক্রোবাস ৭৫ টাকা, মিনি বাস ৫০ টাকা, লোকাল পরিবহন ৪০ টাকা, মাহেন্দ্র ২০ টাকা, অটোরিক্সা ১০ হারে আদায় করা হয়ে থাকে।
এ বছরের ২৫ আগস্ট পদ্মা বহুমুখী সেতু চালুর পর গড়াই সেতু হয়ে পরিবহন চলাচল কিছুটা কমে এসেছে। আগে এই সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৩ হাজারেরও বেশি পরিবহন চলাচল করছিলো। যেখান থেকে দৈনিক আয় ছিল প্রায় ৭ লক্ষ টাকা। পরিবহন কমে আসায় এখন দৈনিক টোল আদায়ের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা। তারপরও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত সময়ে ৬৫ থেকে ৭০ কোটি টাকার টোল আদায় করতে সমর্থ হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে এই আদায়ও বন্ধ চান সড়কে চলাচলরত পরিবহন মালিকরা।
গড়াই সেতু হয়ে চলাচলরত বিভিন্ন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, ইজারাগ্রহিতা অধিকহারে টোল আদায় করছে। যা নিয়ে প্রায়ই তাদের সঙ্গে নানা হাঙ্গামার সৃষ্টি হচ্ছে। ইতিপূর্বে লাভলু মণ্ডল নামে একজন টোল শ্রমিক নিহতের পাশাপাশি মটর শ্রমিকদের সঙ্গে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
মতিয়ার রহমান, দূর্জয় বিশ্বাস সহ একাধিক পরিবহন মালিক বলেন, সরকার সেতু পারাপারের জন্যে টোল নিতেই পারে। কিন্তু ইজারাদার যে অর্থ বিনিয়োগ করছে তারচেয়ে কয়েকগুন বেশি অর্থ আদায় করতে গিয়ে অত্যাচার চালাচ্ছে।
মাগুরা ও ফরিদপুর জেলা মটর মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ অধিক টোল আদায়ের অভিযোগের পাশাপাশি গড়াই সেতুর টোল আদায় বন্ধের দাবি করলেও টোল ইজারা গ্রহিতা জানিয়েছেন ভিন্ন কথা। ইজারাগ্রহিতা ডেফোডিল কনস্ট্রাকশনের মালিক তৌহিদ হোসেন অধিক টোল আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে লেন, পদ্মাসেতু চালুর পর পরিবহন চলাচল কমে গেছে এতে আমাদের টোলও কমে এসেছে। বিধায় ইজারামূল্য সমন্বয়ের জন্যে আমরা সড়ক বিভাগকে অনুরোধ করেছি।
এদিকে ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইমরান ফারহান সুমেল বলেন, সেতু নির্মাণ ব্যায় কিংবা নির্মাণ সময়ের সাথে টোল আদায়ের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি সরকারের রাজস্ব আয়ের একটি খাত। এটি কখনও বন্ধ হবে না।