আজ, বৃহস্পতিবার | ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | সকাল ৬:২১

ব্রেকিং নিউজ :
মাগুরা সদর উপজেলায় রানা শ্রীপুরে রাজন নির্বাচিত মাগুরা সদর ও শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মাগুরা সদরে রানা ও শ্রীপুরে রাজনের দিকেই সবার নজর মাগুরায় ঋষিপাড়ার সদস্যদের মধ্যে কৃষিব্যাংকের সহজশর্তে ঋণ বিতরণ মাগুরায় রানাকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন ছাড়লেন ভিপি জাহাঙ্গীর শ্রীপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী রাজন-সংগ্রামের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ জমে উঠেছে শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন মাগুরায় জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপন বৃষ্টির প্রার্থনায় নামাজ পড়ে কাঁদলেন শ্রীপুরের মুসল্লিরা মহম্মদপুরে সড়ক দূর্ঘটনায় শিক্ষকের মৃত্যু

ভালোবাসা বেঁচে থাক 

অনন্যা হক : চোখে ঘুম নেই। হালকা একটা তন্দ্রা ভাব এসে আবার ছুটে যায়। এভাবেই চলছে অনেক দিন ধরে। দিনের ঘুম হারাম হয়েছে আজ কতগুলো বছর। রাতের ঘুম সেও এক ছেঁড়া ছেঁড়া তারে বাঁধা। একটু ভালো ঘুমের জন্য কত হা পিত্যশে মনের ভেতরে। সব দায় এ পোড়া মনের। এ খারাপ অনিশ্চিত সময়ের।

মন বড় বেয়াড়া তার। কিছুতেই থিতু হতে শেখেনি। বড় চঞ্চল, শুধু উড়ে বেড়ায় এ আকাশ থেকে ও আকাশে। ভাবনার অতলে ডুবে জীবনওে কোন নিশানা খোঁজে সে নিজেও জানে না।

কি হয় এত ভেবে? কিছু হয় না সে নিজেও জানে। এই জীবন এক রঙ্গশালা মনে হয় তার কাছে। তাই পারে না সে শুধু বাস্তবতার নিরিখে জীবনকে পরিমাপ করতে।

মনের কোমলতাকে উপরের কাঠিণ্য দিয়ে যতই ঢাকতে চেষ্টা করি না কেন কোমলতার বাতায়ন বারবার খুলে যায়। মনের বাগানে ফুল ফোটে, ফুল শুকায়, ফুল ঝরে যায়। পারি না মনকে তবু বশে আনতে।

মেঘ গমগম আওয়াজ করে চলেছে। হালকা বৃষ্টি হয়ে আবার রোদ বের হয়ে ঘর আলোকিত হয়ে গেল। কিন্ত মন তো উচ্ছ¡ল হতে পারে না। যে উচ্ছ্বাসে একদিন নিজেকে উদ্ভাসিত করেছি ক্ষণে ক্ষণে, আজ গেল কোথায় উড়ে, ভাবতে থাকি। তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাবটা কেটটই গেল। কি এক অস্থরিতা, কবে রেহাই পাবো এর থেকে।

মহামারির কবলে আজ এই জীবন। সারা পৃথিবী জুড়ে একই চিত্র। আজ পুরো দেড় বছর হলো এই বিভীষিকাময় সময়ের। জানি না কেন বুদ্ধি হবার পর থেেক মৃত্যুকে কখনও ভুলে থাকতে পারিনি। জীবনের সব ভালো লাগার ভেতরে এ মৃত্যুচিন্তা সব সময় মনকে কুটকুট করে কাঁটার মতো বিঁধিতে থাকে। সে কাছের মানুষ হোক বা প্রতিবেশি হোক কিবা দূরের কেউ হোক, যে কারো মৃত্যুই সব সময় মনকে ভীষণ র্স্পশ করে যায়।

মানুষতো এমনিতেই চলে যায়। ক্ষণিকের এ জীবনে মানুষ শুধু এক মেহমানের মতোই আসে। এরপরে যখন তখন চলে যায় দূরে বহু দূরে, হারিয়ে যায় অজানা অচেনা ঠিকানায়। একবার চিরতরে চলে গেলে কোনোদিন তাঁকে দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না। যেন পৃথিবীতে বিরহই চিরন্তণ, বিচ্ছেদই চিরস্থায়ী। এই মৃত্যুও ভেতর দিয়ে যুগ যুগ ধরে তাইই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই তো অনেক আনন্দ, সুখের ভেতরেও একটা বিষন্নতা গ্রাস করে।

সুখ আর উচ্ছ্বাস যেন এক ক্ষণস্থায়ী এক পশলা বৃিষ্টর মতো আসে আর যায়। দুঃখ আর যন্ত্রণাগুলো মনের ভেতর চিরস্থায়ী এক আসন গেড়ে বসে থাকে আজীবন। আর আজ জীবনের আঙিনায় এ কেমন মেঘের আনাগোনা শুরু হলো? বিষাদে কাতর মৃত্যু মিছিলে আজ পৃথিবী জর্জরিত। তবুও জীবন থেমে নেই, থাকেও না, জীবন চালিয়ে নিতে হবে মনোবল অটুট রেখে।

মুষড়ে পড়লে চলবে না। জীবনীশক্তি অটুট রেেখ মনকে সতজে রাখতে হবে। এ এক কঠিন জীবন যুদ্ধ চলছে, চলছে মনের সাথে মনের অহর্নিশ যুদ্ধ।

ভালো থাকতইে হবে। সারা পৃিথবী জুড়ে কত আপন জন, পরিচতি লোক। সারা দেশে জুড়ে আত্মীয় পরিজন বন্ধু, অতি আপনজন সব দূরে। আবার সবার সাথে দেখা হতে হবে, দেখা হওয়ার আকন্ঠ লিপ্সা মনের ভেতওে তোলপাড় তোলে। মাঝে মাঝে খুব অস্থির হয়ে ওঠে, আবার মনকে শান্ত করে। কিছু করার নেই। সব এখন ভবতিব্য।

দিন রাতের কোন কোন সময় মন একদম নিথর হয়ে যায়, কত বড় একটা অনিশ্চয়তার ভেতর দিয়ে হাঁটছি আমরা! মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে, জীবন মৃত্যু পৃথিবী সব যেন এক সাথে কেমন এক রহস্যময় অনুভবের ভেতরে জট পাকিয়ে যায়। এক ধোঁয়াশার জাল তৈরি হয় নিজের অস্তিত্ব নিয়ে।

কিংবা ভোরে আজানের ধ্বনি শুনে ঘুম ভাঙলে পরিচিত পৃথিবীটাকে একদম অচেনা মনে হয়। করুণ এক আর্তিতে মন সিক্ত হয়ে ওঠে।

আজ এই মহামারির সংকটের সময় প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিল লম্বা থেকে লম্বা হচ্ছে। মানুষের এই নিষ্ঠুর হৃদয়বিদারক পরিণতি বিষাদেই তো জীবনের ইতি টেনে দিতে চাচ্ছে। এমন কওে শেষ হতে পারে না সব। কেউ এমন চায়নি, এর শেষ কোথায়?

এখনও কত কিছু বাকি, জীবনকে আরো আরো কত রকম করে দেখার সাধ হয়। দেখা হতে হবে আবার প্রিয়জনদের সাথে। সবাই আমরা এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সাথে তাল মেলাতে গিয়ে ক্লান্ত অবসন্ন।

এমন হৃদয়হীনভাবে জীবনের শেষ দৃশ্যের ছবি আঁকা হয়ে যাচ্ছে কত কত মনে, পরিবারে। আমরা কেউ জানি না পৃথিবীবাসী, এর শেষ কোথায়। তিনটা ঈদ গিয়ে আবার একটা ঈদ এসেছে দাঁড়িয়েছে দোরগোড়ায়। কোন আনন্দ অনুভূতি মনে আর দাগ কাটে না। শুরু হয়েছে বর্ষাকাল। চলছে অঝোর ধারায় বৃষ্টি আর মেঘের আনাগোনা।

বর্ষার বৃষ্টিতে ধুয়ে যাক সব জঞ্জাল,সব বেদনা,
বিনাশ হোক করোনার, থেমে যাক মহামারী, হোক অবসান মানুষের
স্বজন হারানোর কষ্ট আর যন্ত্রণার!
পৃথিবী হেসে উঠুক অচিরেই সোনা ঝরা ঝলমলে রোদে।

সব মিথ্যা হয়ে যাক, শুধু ভালোবাসা সত্যি হয়ে বেঁচে থাক,
পৃথিবী ভালোবাসুক মানবজীবন,
মানুষ ভালোবাসুক পৃথিবীকে!
ভালোবাসা বেঁচে থাক।
অনন্যা হক : কবি-লেখিকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী

শেয়ার করুন...




©All rights reserved Magura Protidin. 2018-2022
IT & Technical Support : BS Technology