আজ, শনিবার | ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | সন্ধ্যা ৬:৫৬

ব্রেকিং নিউজ :
বৃষ্টির প্রার্থনায় নামাজ পড়ে কাঁদলেন শ্রীপুরের মুসল্লিরা মহম্মদপুরে সড়ক দূর্ঘটনায় শিক্ষকের মৃত্যু মাগুরায় প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ মাগুরায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন জাহিদুর রেজা চন্দন ও নবীব আলী মহম্মদপুরে চেয়ারম্যান পদে ৯ জন শালিখায় ৫ জনের মনোনয়ন পত্র জমা স্মৃতির আয়নায় প্রিয় শিক্ষক কাজী ফয়জুর রহমান স্মৃতির আয়নায় প্রিয় শিক্ষক কাজী ফয়জুর রহমান মাগুরা সদরে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ৭ শ্রীপুরে ৪ প্রার্থীর মনোনয়ন জমা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিক কাজী ফয়জুর রহমানের ইন্তেকাল মাগুরার শ্রীপুরে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা!

জীবন চলছে জীবনের গতিতে

আসমা মিলি : আজ মধ্য বয়সে এসে মনে হয়, জীবন জীবনের গতিতে অবিরত চলছে। সে নির্দেশিত পথ চিনে না, শুধু জানে তার নির্ধারিত গন্তব্য। আমি না চাইলেও জীবন ঠিক পৌঁছে যাবে সময়ের নৌকোয় ভেসে তার কাঙ্খিত গন্তব্যে। আমি জানিনা সে পথচলা কবে, কখন, কোথায় স্থিরতা পাবে। হয় তো কেউ জানে না কার চলা কোথায় শেষ হবে। বড় বিচিত্র জীবন চক্র, কখন ফোরাবে এ নিত্য আসা যাওয়া তা অসীমে যিনি আছেন তিনিই জানেন।

নিত্য জীবন মনের মাধুরী মিশিয়ে উপভোগ করতে পারা নিতান্ত ভাগ্যের ব্যাপার । আশা নিরাশার দোলাচলে, ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে, কতো গ্রীষ্ম, কতো বর্ষা, কতো হেমন্ত, কতো বসন্ত পার হয়ে এসেছি। রঙিন শৈশব কৈশোর আজ শুধু টুকরো টুকরো স্মৃতি। স্বপ্নের আঁকিবুঁকি, দমকা হাওয়ার শিহরণ, চোখের তারায় লাল নীল প্রজাপতি, কখন পাখা মেলে উড়েছিল আজ আর মনে করতে ইচ্ছে করে না। আগে জানতাম কিশোরী মন যখন রং খুঁজে পায় তখন সবাই নাকি দু’এক লাইন কবিতা লিখে। আমিও কোনদিন দু’চার লাইন লিখেছিলাম হয়তো। তারচেয়ে পড়তে বেশী ভালো লাগতো, “যেও যেথা যেতে চাও,
যারে খুশি তারে লও,
শুধু তুমি নিয়ে যাও
ক্ষনিক হেসে,
আমারই সোনার ধান কূলে তে এসে।”

কতদিন কোন প্রিয় বই এর পাতায় চোখ পড়েনি। লাবন্য, দীপাবলী, বাবলী, কিশার সাথে ভালোলাগা মন্দলাগায় ভাসিনি। কত বছর বই মেলায় যাই নি, কোন নির্জন রাস্তায় প্রিয় মানুষের হাত ধরে হাটিঁনি। কতদিন পূর্নিমার চাঁদ দেখে গুনগুন করে গাইনি ,”ওগো চাঁদ তুমি কি জানো না……”। জ্যোৎসনা রাতে ছাদে যাই না কখনো, তবে বারান্দায় বসতে ভালো লাগতো কোন এক সময়। আজ তাও ভুলে গেছি। ঘর পালিয়ে বাংলা সিনেমার মজা মনে পড়লে হাসি পায়। ববিতার ঢঙে ছবি তোলা , বোনে বোনে হেসে কুটি কুটি , কত চঞ্চলতায় সময় গড়িয়ে যাওয়া, মনে হলে ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস বুকে চেপে বসে। সময় নেই, সুযোগ নেই, ইচ্ছেও নেই, সেই ভালো লাগা টুকু ফিরে পাবার। তারচেয়ে মনে হয় একটু থেমে থাকা, একটু একা থাকা, একটু বিশ্রাম, এক ঘন্টা বেশী ঘুমালে শত কাজে বেশী এনার্জি পাওয়া যাবে, এই তো জীবন। ফুরিয়ে যাবার আগে কত কত দায়িত্ব শেষ করার শত আকুতি।

ঘরে বাইরে এখন শুধু কাজ আর কাজ। নিজেকে যন্ত্রের মত মনে হয় প্রায়শঃই। কখনো দিনশেষে জ্যামে স্থবির রাস্তা, অসহায় যাত্রী, লাল সিগনাল বাতির দিকে দীর্ঘ চেয়ে থাকা। কোন এক সময় বাসায় পৌছে যাবো নিশ্চয়ই। তারপর ঘষেমেজে হাতমুখ ধোঁয়া, টুকটাক ঘরের কাজ, ডিনারের আয়োজন, প্রার্থনা, চেনা জানা, আপন দুরের কত মানুষের প্রয়োজন মেটানো , আগামীকালের প্রয়োজন অপ্রয়োজনের কথা কাটাকাটি, তারসাথেই কখন ঘুম, এইতো নিত্য জীবন । নিজের প্রয়োজন গুলো অজান্তেই উপেক্ষিত এখানে। মগজের খবর রাখতে রাখতে মনের খবর নেবার সময় কই? অনাদরে মরে গেছে মন।

এখন পাহাড়ের কাছে যেতে ইচ্ছে করে না আমার। সাগরের উন্মাতাল ঢেউ আমাকে উচ্ছ্বসিত করে না, নির্জনতা আমাকে আবেগী করে না। প্রকৃতির কাছে গেলে মনে হয় ওরা অনেক অযত্নে আছে, কষ্টে আছে। থাক না ওরা ওদের মত। কোন বন্ধুর কন্ঠস্বর মোহিত করে না এখন। সব কিছুতেই দায়িত্বের নেশা ।আজ দুপুরে আমার অফিস রুম এর জানালার পাশে মস্ত বড় গাছের ডালে বসেছিল এক বাজপাখি। কি উস্কো খুস্কো পালক গুলো, কতদিন বৃষ্টির জলে পাখা ডুবায় নি, ক্লান্ত শ্রান্ত মলিন চেহারায় একা বসে আছে। সঙ্গীহীন মনে হলো, কেউ পাশে নেই। মায়া হলো , আহা …..। পাখিটিও জীবনের কাছে বড্ড ক্লান্ত।
তাহলে আমারও কি অসীম ক্লান্তিতে, চোখের পাতায় কখনো গাঢ় ঘুম নেমে আসে?

“ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু……….”

তারপর আজও আমি ক্লান্তি ভুলে অবিরত চলতে চাই, আমি কবিতার মায়াজালে ডুবতে চাই, আমি দায়িত্বের সীমারেখা পেরিয়ে ভালোলাগার নীলাকাশে ভাসতে চাই। এই জীবন কেই ভালোবেসে মরতে চাই, বাঁচতে চাই প্রিয় মানুষকে সাথে নিয়ে। নতুন করে আলতো ছুঁয়ে দেখতে চাই আমার আমি কে, অতি প্রিয় আমার আবেগী মন টা কে।
বলতে ইচ্ছে করে…..
যত চাও তত লও তরণী পরে।
আর আছে? আর নাই, দিয়েছি ভরে’।
এতকাল নদীকূলে
যাহা লয়ে ছিনু ভুলে’
সকলি দিলাম তুলে
থরে বিথরে
এখন আমারে লহ করুণা করে’!

শেয়ার করুন...




©All rights reserved Magura Protidin. 2018-2022
IT & Technical Support : BS Technology