পৃথিবীটা একটা বাড়ি মনে হয় কখনও আমার কাছে।
আমরা বিচ্ছিন্ন হয়েছি জীবনের প্রয়োজনে।বিশ্বাস, মতবাদ এর ভিন্নতার কারণে।
সব মানুষের শুরু এবং শেষ এক।
কারো জন্য হয়তোবা একটা সুদীর্ঘ পথ সামনে থাকে,
কখনওবা কারো জন্য অল্প দৈর্ঘ্যের পথ সামনে রেখে আমরা সবাই হেঁটে চলেছি এই পৃথিবীর পথে,
জীবনের পথে।
আমি দেখি শুধু দৃশ্যমান অগণিত পথ, আর অদৃশ্য একটা জীবন পথ।
এই জীবন পথটা পাড়ি দিতে আমরা হাজারটা দৃশ্যমান পথকে অবলম্বন করে হেঁটে চলেছি।
মানুষ, ছুটে চলেছে কখনও পায়ে হেঁটে,
কখনওবা বিবিধ যানবাহনে, কোন না কোন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
কখনও চেনা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে গিয়ে অচেনা গন্তব্যের দেখা মিলে যায়।
কখনও অচেনা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে গিয়ে চেনা গন্তব্যে পৌঁছে যায়।
আমি মানুষ দেখি,
একটা শরীরের ভেতরে একটা মনকে ধারণ করে এক একটা ভিন্ন অবয়বে ছুটে যাচ্ছে,
শুধু অদৃশ্য এক জীবনপথকে অবলম্বন করে।
যদিওবা কখনও সে স্থির, তবুও সে ছুটছে সময়ের হাত ধরে।
সময় বহমান,থেমে থাকার সাধ্যি কারো নেই।
যদি কখনও ভাবনার অতল গহীনে ডুব দিয়ে বসে থাকি কেউ
হাত পা গুটিয়ে, তবুও সে থেমে নেই, একটা চিরন্তন গন্তব্য
মহাকর্ষ বলের শক্তি নিয়ে টানছে।
অদৃশ্য জীবন পথটা যেন শুন্যে ঝুলছে।
দোদুল্যমান একটা পথ, মাথার উপর একটা আকাশ।
কেউ এর বাইরে নয়,
আমরা সবাই ঠিক জন্মের পর থেকে মৃত্যু অবধি এই পথের যাত্রী।
আকাশটা কখনও নীল, সাদা মেঘের গুচ্ছ বুকে নিয়ে হাসে।
কখনওবা ধূসর গোধূলি রঙ মেখে রহস্য হয়ে থাকে,কখনও ধূসর হয়ে বিষাদ ছড়িয়ে দেয়,
কখনও ঘন কালো রঙ হয়ে আঁধারে পথ ঢাকে।
দোদুল্যমান জীবন পথের পায়ে পায়ে জড়িয়ে আছে কত শত অনিশ্চয়তার ছায়া।
প্রিয় সব কিছুকে হারাবার ভয়,
কখনও নিজেকে হারাবার,কখনও স্বজন হারাবার ভয়।
কখনওবা নিশ্চিত পথটা হারাবার ভয়।
পথে পথে থাকে আলোকিত পথের হাতছানি,
পথে পথে থাকে অন্ধকার পথের ইশারা,
কে কোন পথটা বেছে নিতে পারে সেটাও যেন এক কঠিন পরীক্ষা!
কত অচেনা মানুষ আপন হয়ে যায়, কত চেনা মানুষ পর হয়ে যায় নিমিষেই।
এই ছোট্ট জীবনে কত অচেনা মানুষকে কত ভাবে অবলম্বন করে যাচ্ছি,
আমরা কতটুকু হিসাব রাখি তার?
এই মানুষই আমাদের বন্ধু।অচেনা হয়ে, পর হয়ে, বহু
দূরত্বে থেকেও বন্ধু হয়,যখন মিলে যায় ভাবনার গতি
কিংবা মূল্যবোধ বা মানসিকতা।
আবার এই মানুষই আমাদের শত্রু হয়ে যায় স্বার্থের লেনাদেনায়, বিশ্বাস, মতবাদের ভিন্নতার কারণে। এভাবেই
বিভেদের সূচনা হয়। ধর্ম, জাতীয়তাবাদ, বর্ণবাদ, মতবাদের
মৌলবাদীত্ব এমন বহুবিধ বিষয়ের কবলে পড়ে মানুষ বুঝে না বুঝে তার অহংকারবোধ, হিংসা, প্রতিহিংসা, লোভ
এ সব রিপুর তাড়নার নিপতিত হয়।
লড়াই চলে আজীবন কতৃত্ব এবং শ্রেষ্ঠত্ব স্থাপনের লড়াই।
যেখানে অহরহ মানবিকতার কবর খোড়া হয়।
আবার কত মানুষের জীবনবোধ, দর্শন, মানসিকতা আমাদের মনে গভীর ভাবে আঁচড় কেটে যায়,
মনে আলোকিত দরজা খুলে দেয়, জীবনকে ভালোবাসতে শেখায়, হতাশার অন্ধকার অলিগলি থেকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়।
কখনও কারো একটা কথা, একটা ভাব,
একটা সিদ্ধান্ত জীবনে হয়তো গভীর ভাবে দাগ কেটে যায়, জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।
আপন পরের সংঙ্গাটা তাই ঠিক এক মাত্রায় সরলীকরণ করা যায় না সব সময়।
এ বড় গোলমেলে হিসাব!
হতে পারে জন্ম, শেকড়, বেড়ে ওঠা, ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভিন্ন।
এই ভিন্নতাকে সামনে এনে বিভেদের দেয়াল একেবারেই অমূলক, সবই মানুষের স্বার্থে সৃষ্টি।
এর কোন গুরুত্বপূর্ণ অর্থ বা অবদান মানুষের জন্য অবধারিত ছিল না।
কত শত অচেনা অজানা গন্তব্যের ভীড়ে একটা খুব চেনা, সবার জন্য অবধারিত গন্তব্য দরজা খুলে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে অবিচল।
যেখানে বিভেদের কোন জায়গা
নেই,ভিন্নতার কোন মানে কাজ করে না।
আমরা সবাই এক দোদুল্যমান অদৃশ্য জীবন পথের পথিক,কখনও আমরা খুব আপন,
কখনও সবার গন্তব্য এক এবং খুব চেনা,
নিশ্চিত, এবং সত্যি,
আমাদের সবার চিরন্তন গন্তব্য এক!
অনন্যা হক: কবি ও লেখিকা