মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার নানা অভিযোগে মাগুরার সদর উপজেলার শত্রুজিত্পুর কলেজের অধ্যক্ষ মাহাবুবুল ইসলামকে তার পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কলেজ পরিচালনা পরিষদ।
প্রথমিক তদন্তে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত ডিসেম্বর থেকে মাহাবুবুল ইসলামের বেতন ভাতাদি বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে দুর্নীতি পরায়ন অধ্যক্ষকে দিয়ে কলেজ পরিচালনা না করানোর জন্য স্থানীয় অভিভাবকরা কলেজ পরিচালনা পরিষদের কাছে দাবি তুলে আসছিল। যার প্রেক্ষিতে শনিবার বিকালে এ বিষয়ে বৈঠকে বসেন কলেজ পরিচালনা পরিষদ। যেখানে পরিচালনা পরিষদের ৯ সদস্যের ৮ জনসহ স্থানীয় অভিভাবকরা তার বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিলে অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
কলেজ পরিচালনা পরিষদের দাতা সদস্য সামছুদ্দিন মোল্যা এ বিষয়ে জানান, শনিবারের পরিচালনা পরিষদের সভায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষক কর্মচারি নিয়োগে বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফিস আদায়, কলেজের জমি ক্রয়ে অর্থ আত্ম স্বাথ, কলেজে কোচিং বাণিজ্যের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন, ছাত্র-ছাত্রীর উপ-বৃত্তির টাকার বিপরিতে উৎকোচ গ্রহণ, কম্পিউটার সমৃদ্ধ আইসিটি কক্ষে শিক্ষার্থী এমনকি শিক্ষকদের প্রবেশাধিকার না দেয়া, আধুনিক সুযোগ সুবিধাসহ শ্রেণী কক্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠ গ্রহন করতে না দিয়ে পুরাতন ভবনে গরমের মধ্যে পাঠ গ্রহণে করতে বাধ্য করা, কলেজে কোন শিক্ষাসফর, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রিড়া অনুষ্ঠান না করেই তার বিপরীতে ভুয়া বিল ভাউচার জমা দিয়ে টাকা উত্তোলন, একাধিক বিষয়ে ফেল করা ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট থেকে টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার ফরম পুরণের সুযোগ করে দেয়াসহ নানা অভিযোগ পরিচালনা পরিষদের সিংহভাগ সদস্যের স্বাক্ষ্য ও তথ্য প্রমাণে প্রমাণিত হয়। যার প্রেক্ষিতে তাকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেয় পরিচালনা পরিষদ।
সামছুদ্দিন মোল্যা জানান, নিয়োগ বাণিজ্যসহ মোট ৪৬টি অভিযোগে এ কলেজের ১৪ জন শিক্ষক গত ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর মাগুরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। যার তদন্ত ও পরবর্তী দাপ্তরিক পদক্ষেপে গত ডিসেম্বরে মাহাবুবুল ইসলামের বেতন ভাতা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বন্ধ করা হয়। অন্যদিকে দুর্নীতি পরায়ন এই অধ্যক্ষের অপসারণ দাবীতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা কলেজ পরিচালনা পরিষদসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে দাবী তুলতে থাকেন। যার প্রেক্ষিতে কলেজের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি শত্রুজিত্পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট সঞ্জিত কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে শনিবার বিকালে পরিচালনা পরিষদের বৈঠকে তাকে সাময়িক বাহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়।
এ কলেজের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক রতন বিশ্বাস বলেন, ‘কলেজ অধ্যক্ষ মাহাবুবুল ইসলাম গত ১০ বছরে শিক্ষক কর্মচারি নিয়োগসহ বিভিন্ন খাত খেকে অন্তত দেড় কোটি টাকা আত্মসাথ করেছেন’।
কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মতিয়ার রহমানের মেয়ে সুফিয়া খাতুন জানান, কলেজে স্নাতক শ্রেণীর অনুমোদন নেই। অথচ তাকে অধ্যক্ষ মাহাবুবুল ইসলাম সেখানে নিয়োগ দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর সাথে সেটি সমš^য়ের কথা বলে অধ্যক্ষ ৬ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু সমš^য়ের জন্য যথাযথ কোন আবেদন করেন নি’।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ মাহাবুবুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,‘আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কলেজের শিক্ষার মান ধরে রাখার জন্য শিক্ষকদের বিভিন্ন সময় চাপে রাখার কারনে আমার বিরুদ্ধে তারা এ ষড়যন্ত্র করছে’।