মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : ১০দিন হাসপাতালের বারান্দায় পড়ে থেকে শেষ পর্যন্ত শনিবার সকালে মারা গেছেন মাগুরার সদর উপজেলার ধর্মদাহ গ্রামের গরীব বৃদ্ধ কৃষক মোসলেম শেখ (৬৫)। অথচ মৃত্যুর তিনদিন আগে ১৭ মার্চ মোসলেম শেখের স্ত্রী আমেনা খাতুন সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। যে মামলাটি রুজু হলো মৃত্যুর পর শনিবার দুপুরে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার এবং গ্রামবাসিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মাগুরা সদর থানা সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মোসলেম শেখের মৃত্যুর পর দুপুর ১২.১৫ মিনিটে থানায় প্যানাল কোডের ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলাটি রুজু হয়েছে। এ মামলাটি তদন্তের জন্যে শত্রুজিতপুর ফাঁড়ির এসআই কামালকে দায়িত্বও দেয়া হয়েছে বলে দায়িত্বরত ডিউটি অফিসার জানান।
জেলার শত্রুজিতপুর ইউনিয়নের ধর্মদাহ গ্রামের গবাদি পশুর কথিত খোয়াড় মালিক কালাম শেখের দাবিকৃত অন্যায্য অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় লাঞ্ছিত হয়ে মোসলেম শেখ গত ১০ মার্চ বাড়ি ফিরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। কিন্তু পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করেন।
অবস্থা নাজুক হওয়ায় স্থানীয় চিকিৎসকরা তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। বৃদ্ধ মোসলেম শেখের স্ত্রী আমেনা বেগম তাকে সেখানে নিয়ে গেলে তারাও রেফার্ড করেন ঢাকা মেডিকেলে। কিন্তু আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় আমেনা বেগম বাধ্য হয়ে স্বামীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে মাগুরায়।
মোসলেম শেখের স্ত্রী আমেনা বেগম জানান, ক্ষেতের ফসল নষ্ট করার অভিযোগে তারই প্রতিবেশি নজরুল শেখ গত ১০ মার্চ দুপুরে দুটি বাচ্চাসহ তাদের একটি রাম ছাগল প্রতিবেশি কালাম শেখের খোয়াড়ে দিয়ে আসে। খবর পেয়ে তার স্বামী ছাগল ফিরিয়ে আনতে গেলে কালাম শেখ ১ হাজার টাকা দাবি করে। বাধ্য হয়ে হয়ে গ্রামের কয়েক জনের কাছ থেকে ৩শত টাকা ধার করে আবার সেখানে যান। কিন্তু পুরো টাকা নিয়ে যেতে না পারায় খোয়াড় মালিক তার স্বামীকে গলা ধাক্কা দিয়ে মারধর করে ফিরিয়ে দিয়েছে। এ অপমানে সেখান থেকে ফিরে তিনি বাড়ির পেছনে বাগানের মধ্যে গলায় ফাঁস নেন।
এদিকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় আমেনা খাতুন স্বামীর এমন পরিণতির বিচার চেয়ে ১৭ মার্চ মাগুরা সদর থানায় একটি অভিযোগ দেন। কিন্তু অভিযোগ দায়েরের পরও পুলিশের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় মোসলেম শেখের স্বজন এবং প্রতিবেশিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তারা জানান, কালাম শেখের খোয়াড়ের সরকারি কোনো অনুমোদন নেই। অথচ অবৈধভাবে গত দুই বছর ধরে তিনি গ্রামের সাধারণ মানুষের গরু ছাগল আটকে রেখে যথেচ্ছা অর্থ আদায় করছে। মাগুরার প্রশাসন বিষয়টি আমলে নেয়নি বলেই একজন বৃদ্ধ মানুষকে আত্মহত্যা করতে হয়েছে।
এদিকে ধর্মদাহ গ্রামে কথিত খোয়াড় মালিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। বাড়ির মধ্যে তৈরি খোয়াড় পাহারা দিচ্ছেন তারই পুত্রবধূ মৌসুমি খাতুন।মৌসুমি খাতুন বলেন, খোয়াড় ইজারার সরকারি কোনো কাজগপত্র নেই। কিন্তু পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের টাকা দিয়ে ইজারা নিতে হয়েছে।
তবে তার এই বক্তব্যকে অস্বীকার করেছেন শত্রুজিতপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সনজিত বিশ্বাস। তিনি বলেন, খোয়াড় নিয়ে এলাকায় বাধ-বিবাধ হয় অনেক। যে কারণে গত দুই বছর কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি। তারপরও কালাম শেখ অবৈধভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এতে সাধারণ গ্রামবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও শুনেছি।
মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন জানান, মৃত্যুর খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া এ বিষয়ে আত্মহত্যা প্ররোচনার একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে।