আজ, শুক্রবার | ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ভোর ৫:৩৮

ব্রেকিং নিউজ :
শ্রীপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী রাজন-সংগ্রামের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ জমে উঠেছে শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন মাগুরায় জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপন বৃষ্টির প্রার্থনায় নামাজ পড়ে কাঁদলেন শ্রীপুরের মুসল্লিরা মহম্মদপুরে সড়ক দূর্ঘটনায় শিক্ষকের মৃত্যু মাগুরায় প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ মাগুরায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন জাহিদুর রেজা চন্দন ও নবীব আলী মহম্মদপুরে চেয়ারম্যান পদে ৯ জন শালিখায় ৫ জনের মনোনয়ন পত্র জমা স্মৃতির আয়নায় প্রিয় শিক্ষক কাজী ফয়জুর রহমান স্মৃতির আয়নায় প্রিয় শিক্ষক কাজী ফয়জুর রহমান

আমার ফুপু বনানী চৌধুরী প্রথম বাঙালি মুসলিম নায়িকা

সুলতানা কাকলী : বাংলা চলচিত্রের এক কিংবদন্তী-আমার ফুপু বনানী চৌধুরী। তিনি বাংলা চলচিত্রের প্রথম বাঙালি মুসলিম অভিনেত্রী। বাংলা চলচিত্রের অনন্য ইতিহাসের অংশ বনানী চৌধুরীর বাবার নাম মুন্সি আফসার উদ্দিন আমার দাদা। আমার দাদার ছিল নয় ছেলেমেয়ে। নয় সন্তানেরা হলেন-চান্দো, বুলি, জুনি, লিলি (বনানী চৌধুরী), মীরা, বটু, কাটু, নটু এবং জটু। বনানী চৌধুরীর পারিবারিক নাম লিলি।

অভিনেত্রী বনানী চৌধুরীর জন্ম ১৯২৪ সালে-সেই বৃটিশ আমলে আমাদের সমাজ যখন ছিল রক্ষণশীল। সে সময়ের বাস্তবতায় রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থায় গড়ে উঠলেও লিলি ফুপুর ছোটোবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি ছিল অন্যরকম ভালবাসা। মাগুরার শ্রীপুরে আদিবাস হলেও বাবার চাকরির সুবাদে কলকাতাতেই লিলি ফুপুর বেড়ে উঠা। ছোটোবেলাই স্কুলের বেড়াজাল পেরিয়ে অভিনয় জগতে পদার্পণ করেন তিনি। এরপর ভারতীয় বাঙালি মুসলমান হিসেবে প্রথম নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। চলতে থাকে তাঁর একের পর এক ছবিতে অভিনয়ের ব্যস্ততা। একসময় চাচাতো ভাই আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজুর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্বামীর অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় চলচিত্রজগতে তিনি নিেেজকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হন। চলার পথে, অভিযোগ, মায়াজাল, পরশপাথর, শেষের কবিতা, পথহারা, নিয়তি, সাক্ষী, শাপমোচন তাঁর অভিনীত ছবি।

আমি বলবো আমাদের রাজু চাচা ছিলেন তার বড় পথপ্রদর্শক। রাতদিন সাথে থেকে বনানী চৌধুরীকে যেনো তিনি নিজেই তৈরি করেন। আমার মনে আছে ফুপু যখন বাংলাদেশে আমাদের বাড়িতে আসতো তখন কিছু দিন হলেও বেরিয়ে পওে যেতো দাদাবাড়ি। যে কয়দিন থাকতো কতো গল্প কতো আলাপ হতো তাঁর সাথে। তখন বুঝিনি আমার ফুপু বাংলা চলচিত্রের ইতিহাসের অন্যতম অংশ।

সেই ছোটবেলায় আমাদের কাছে তিনি বড় পর্দার অভিনেতা ছবি বিশ্বাস, উত্তম কুমার, পাহাড়ি সান্যাল সুপ্রিয়া দেবী, বিকাশ রায়, তুলসি রায়- সবাইকে নিয়ে কতো গল্প করতেন। কোন সিনেমায় কিভাবে অভিনয় করেছেন সে সব কথা বলতেন। শাপমোচন সিনেমাতে তাঁর অভিনয় আজও সবার মুখে। এই ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের কারণে বনানী চৌধুরী নামটাও আজও উজ্জ্বল এবং স্মৃতিময়। ফাল্গুনী মুখোপ্যাাধায়ের ‘সন্ধ্যারাগ’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছিল শাপমোচন। উত্তম-সূচিত্রা-বনানী চৌধুরী অভিনীত ছবিটির প্রযোজক পরিচালক ছিলেন সুধীর মুখার্জ্জী। আর সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন কিংবদন্তী সঙ্গীত শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।

শেষ বয়সে বাংলাদেশে এসেও কয়েকটা সিনেমাতে অভিনয় করেন ফুপু। নায়ক রাজ রাজ্জাক পরিচালিত বদনাম ছবিতে রাজ্জাক/বুলবুল আহমেদ-এর মায়ের ভুমিকায় অভিনয় করে অনেক প্রশংসা পান। সংসার জীবনে তাঁর ছিল দুটি সন্তান-পানু এবং বুলেট। বড় ছেলে পানু ছিলেন লন্ডন প্রবাসী ডাক্তার। ছোটো ছেলে বুলেট বাংলাদেশে গোল্ড লিফ টোবাকো কোম্পানীতে চাকরি করতেন। দুর্ভাগ্যবশতঃ দুজনের কেউই আর আমাদের মাঝে নেই।

৯৫ সালে রাজু কাকা যখন মারা গেলেন তখন লিলি ফুপু হয়ে গেলেন একেবারে একা, নিঃস্ব। জীবনের পথপ্রদর্শককে হারিয়ে ফেলায় যেনো অন্ধকার ছায়া নেমে এলো। ফুপুর জীবনে। বাংলাদেশ থেকে আত্মীয় স্বজন অনেকেই ভারতে গেলেন ফুপুকে দেখতে। সেখানে গিয়ে তার নিঃসঙ্গতাকে সবাই অনুভব করলো। অবশেষে তাঁকে সঙ্গে করে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হলো। ঢাকায় আসার পর রাজু চাচা মারা যাবার ত্রিশ বা পয়ত্রিশ দিনের মাথায় রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ৯৫ সালে ৫ই জানুয়ারি ফুপু বনানী চৌধুরীও আমাদের মায়া ত্যাগ করে পরকালের পথযাত্রা হলেন।

ফুপু বনানী চৌধুরী-আমাদের গর্ব-অহংকার। বাংলা চলচিত্রের ইতিহাসে এই নামটি সারাজীবনই উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।

শেয়ার করুন...




©All rights reserved Magura Protidin. 2018-2022
IT & Technical Support : BS Technology