আজ, শুক্রবার | ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | দুপুর ১:০৬

ব্রেকিং নিউজ :
বৃষ্টির প্রার্থনায় নামাজ পড়ে কাঁদলেন শ্রীপুরের মুসল্লিরা মহম্মদপুরে সড়ক দূর্ঘটনায় শিক্ষকের মৃত্যু মাগুরায় প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ মাগুরায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন জাহিদুর রেজা চন্দন ও নবীব আলী মহম্মদপুরে চেয়ারম্যান পদে ৯ জন শালিখায় ৫ জনের মনোনয়ন পত্র জমা স্মৃতির আয়নায় প্রিয় শিক্ষক কাজী ফয়জুর রহমান স্মৃতির আয়নায় প্রিয় শিক্ষক কাজী ফয়জুর রহমান মাগুরা সদরে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ৭ শ্রীপুরে ৪ প্রার্থীর মনোনয়ন জমা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিক কাজী ফয়জুর রহমানের ইন্তেকাল মাগুরার শ্রীপুরে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা!

বাবা গেলেন বীরের বেশে

মাজহারুল হক লিপু  : বাবা যেদিন চলে গেলেন সেদিন সারাদিন আমি বন্ধুদের সাথে পিকনিকে ছিলাম।  আমি দোতলায় থাকি। বাবা থাকতেন নীচ তলায়, দিপু ভাইয়ের সাথে। আমার রুটিন ছিলো, সকালে বের হওয়ার সময় এবং রাতে ফিরেই আগে বাবার সাথে দেখা করা। ঐদিন খুব ভোরে বের হওয়ার সময় দেখলাম বাবা ঘুমিয়ে। দুই একদিন আগে একটু জ্বর ছিলো। দিপু ভাই বললো, আব্বা ভালো আছে,  আব্বাকে আমি বলব তুই পিকনিকে গিয়েছিস। আমি নিশ্চিন্তে পিকনিকে গেলাম। আগেরদিন দেখেছি কোট, টাই পরে আব্বাকে আদর্শ কলেজে মিটিংয়ে যেতে। সন্ধ্যায় পিকনিক থেকে ফিরেও দেখলাম আব্বা ঘুমাচ্ছেন। দুপুরে সবার সাথে ডাইনিং টেবিলে খেয়েছেন। বিকেলে হরলিক্স দিয়েছে। বলেছেন, রেখে যা খেয়ে নেব। সব শুনে দোতলায় গিয়ে ফ্রেশ  হয়ে চা নিয়ে বসেছি। দিপু ভাই দৌড়ে এসে জানালো,  আব্বা তো ওঠে নারে।

আমি একবার নীচতলায় গিয়ে আব্বাকে দেখলাম ভালো করে। একটু পরই উঠে এলাম উপরে।  একা একা একটু শুয়ে থাকব ভেবেছিলাম। কিন্তু পারিনি। একে একে বন্ধুরা উপরে আসতে লাগলো দেখা করতে। বুঝতে পারছি নীচতলা ভরে গেছে প্রিয়জনে। এমনই তো হওয়ার কথা।  ফেসবুকের যুগ। মুহূর্তেই ছড়িয়ে যাচ্ছে খবরটা। যথারীতি কণ্ঠবীথির ছেলেরা সব দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ফেলেছে। আমার কোন কাজ নেই তেমন। একটার পর একটা ফোন আসছে কিন্তু ধরতে ইচ্ছে হচ্ছে না। বারবার মনে হচ্ছে শেষ হয়ে গেলো একটা অধ্যায়।

আমার বাবা কে ছিলেন তা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। যারা আমার লেখাটি পড়ছেন তারা আমার বাবাকেও জানেন ভালো করে। ৯৫ বছরের একজন মানুষের মৃত্যু কতটুকু আর শোকের হতে পারে। তাও যদি হয় সফল একজন মানুষের মৃত্যু । হ্যাঁ,  সফলই বলব আমি। কেননা বাবার কাছ থেকে শিখেছি সফলতার সংজ্ঞা। যে সংজ্ঞা সচরাচর সংজ্ঞার সাথে মেলে না। বড় চাকরি,  বড় ব্যবসা, বড় ক্ষমতা এসব সফলতাকে আব্বা কখনো সফলতা বলে ভাবেননি। তাইতো তাঁর জীবনী খুলে দেখি,  বারবার বড় বড় সরকারি চাকরি ছেড়ে এলাকায় ফেরা। একটার পর একটা প্রতিষ্ঠান গড়ার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন তিনি।  হেরে যাননি কোথাও। আজীবন ব্যস্ততা।  এর মধ্যেই শরীরের যত্ন। সীমিত আহার। নিয়ম মাফিক ঘুম।  নিয়ম করে পড়াশোনা। এভাবেই ৯৫ বছর নিজেকে সুস্থ রেখে নিরলস কাজ করে গেছেন তিনি।

আব্বার মরদেহের পায়ের কাছে বসে অসংখ্য মানুষকে কাঁদতে দেখেছি। তাদের অনেককেই চিনি না। অনেকে এসেছেন দূর দূরান্ত থেকে। এক নজর দেখবেন তার প্রিয় শিক্ষককে। ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ,  সংস্কৃতি কর্মী, স্কাউটস, খেলোয়াড়, দোকান মালিক, শ্রমিক সবাই বলছেন স্যার আমাকে খুব ভালো বাসতেন।  জানিনা,  একটা মানুষ কিভাবে একসাথে  এতজনকে ভালো বাসতে পারেন।

আব্বার যে কোন কষ্ট ছিলো না তা বলব না। কিন্তু কষ্ট গুলো তিনি বুঝতে দেননি কাউকে।  শেষদিন পর্যন্ত কাজ করে গেছেন। আগেই বলেছি সফলতার সংজ্ঞা আব্বার কাছে অন্য রকম। জীবনভর উদ্যম নিয়ে কাজ করতে পারাই সফলতা।  মাগুরার প্রতিষ্ঠিত সামাজিক,  সাংস্কৃতিক,  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে খান জিয়াউল হক ছাড়া মাগুরার ইতিহাস অসম্পূর্ণ। কর্মবীর এই মানুষটি কাজকেই গ্রহণ করেছেন  সবচেয়ে বড় করে। মৃত্যুর আগেরদিন পর্যন্ত মিটিংয়ে গেছেন।  মৃত্যু হয়েছে ঘুমের মাঝেই। হাজারো মানুষের ভালোবাসায় বিদায় নিয়েছেন।  এ যেন এক বীরের জীবন যুদ্ধ জয় করে হাসতে হাসতে বিদায় নেওয়া।

বাবা চলে যাওয়ার পর কয়েক হাজার মেসেজ ও ফোন এসেছে। সব পড়তে পারিনি। সবগুলো ফোন ধরতে পারিনি৷ আপনারা আমাকে ক্ষমা করবেন।  তবে একটা মেসেজ আমাকে অন্যরকম সান্ত্বনা দিয়েছে। আমার বন্ধু গীতলেখা কুন্ডু জবা লিখেছে- বন্ধু, তোমার বাবা ছিলেন মাগুরাবাসীর প্রাণে প্রাণে। তাঁর চলে যাওয়ার শোকও ছড়িয়ে গেছে প্রাণে প্রাণে।  আমি বারবার পড়েছি জবার মেসেজ। তাইতো,  আমার বাবা তো আমার একার নয়। এই শোক আমার একাকী বইতে হয়নি৷ হাজার হাজার প্রাণে ছড়িয়ে আছে আমার বাবা। তাই বোধহয় আমার বা আমার পরিবারের শোক আজ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে। কৃতজ্ঞতা আপনাদের সবার প্রতি।   সবার প্রার্থনায়, সবার প্রাণে নিশ্চয় বেঁচে থাকবেন এই কর্মবীর।
মাজহারুল হক লিপু: শিক্ষক ও সাংবাদিক

শেয়ার করুন...




©All rights reserved Magura Protidin. 2018-2022
IT & Technical Support : BS Technology