আজ, শুক্রবার | ১৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | রাত ১২:০২


বীর মুক্তিযোদ্ধা বেবী সিদ্দিকীকে নিয়ে ভাগ্নী নীতার চিঠি

মাগুরা প্রতিদিন : লায়লা আরিয়ানী হোসেন বাংলাদেশ বেতারের প্রেজেন্টার এবং স্ক্রিপ্ট রাইটার। বন্ধু মহলে তিনি নীতা নামেও সমানভাবে পরিচিত। প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা বেবী সিদ্দিকীকে নিয়ে তিনি লিখেছেন চিঠি। অকোপটে উপস্থাপন করেছেন নিজের অভিব্যক্তি।
মাগুরা প্রতিদিনের সম্মানীত পাঠকদের জন্যে সেটি তুলে ধরা হলো:

প্রযত্নে, বেবী সিদ্দিকী, আমার ঠিকানা এটাই থাকবে সব সময়। আমার পরিচয়ও তাই, বেবী সিদ্দিকীর ভাগ্নী।

একটি নাম, বিশাল আকাশের মতো সে নামের পরিসর। একজন মানুষ, আপাতঃ দৃষ্টিতে সাধারণ মানুষ, অথচ সেই মানুষটার মাঝে অসাধারণ বৈশিষ্ট্য যা শুধু মুগ্ধতাই রেখে যায়। তাঁর স্নেহছায়া যে পেয়েছে, সেই জানে, কতটা প্রশান্তি তাঁর উপস্থিতিতে। তাঁর শারীরিক উপস্থিতির চেয়ে মানসিক উপস্থিতি এতো গভীর, সে শুধু প্রিয় কবিতার মতো অনুভবে রয়ে যায়।

সবাই বলে সময়ের সাথে নাকি সব ঠিক হয়, সব ক্ষেত্রে একথা ঠিক না। কিছু বেঠিক বিষয় লেগে থাকে জীবনের সাথে, কিছু কষ্ট গিলে হাসতে হয়, মেনে নিতে না পারা কিছু সত্য হজম করতে করতে জীবন এগিয়ে যায়।  কেন আমার বেবী মামাকে সবার আগে যেতে হলো? হারিয়ে যাওয়া বাবার মেয়ে আমি, আমার এই মামার স্নেহ, জীবনজুড়ে থাকা আমার জন্য অনেক কিছু।

অক্টোবর এমন এক মাস, যে মাসের জন্য অপেক্ষা করতাম এক সময়, এখন পালাতে মন চায়।পালানো তো যায়না, মুখোমুখি হয়ে, বারবার বলে দিয়ে যায়, মনে করায় কঠোর ভাবে, হারিয়েছি। অক্টোবর ৭, ছোটো মামা, অক্টোবর ৮, বেবী মামা। পরের অক্টোবর ২৬, ২০১৭ তে আম্মু আর ২০১০ বেনু খালাম্মু। পরিবারের ঘনিষ্ঠ আরো অনেকেই চলে গেছেন এ মাসে। হারায়না স্মৃতি গুলো, আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। নাহ, সব বিষয়ে সান্তনা চলেনা, একদম চলেনা। চুরমার হয়ে যেতে যেতে তবুও সামনে তাকাতে হয়, দারুণ সাহসে। ঐযে, বেবী সিদ্দিকীর ভাগ্নী আমি।

কোনো শব্দের ঠিকঠাক মানে খুঁজে না পেলে, গানের কলি হারিয়ে গেলে, জিজ্ঞাসা করার মানুষ আর নেই। নিজেই নিজেকে বলি, ব্রেইন ফগ, জোর করে লাভ নেই। একজন মানুষ চলে যেয়েও কত বেশী করে থাকেন জীবনে, বেবী মামাকে মনে পড়লে বুঝি।

তাঁকে যারাই  জানেন, সবাই মনে করেন। আত্মীয় স্বজন, পরিচিত, সবাই তাকে আলাদা করে মনে রাখেন। আগে কাউকে চিনতে না পারলে তাকে বললেই হতো, এখন নিজেরা মাথা খুঁটেও  মনে করতে পারিনা।

কোনো ক্ষমতার ব‍্যবহার, পদ পদবীর তোয়াক্কা না করা মানুষটার সিংহ হৃদয়। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে সমান ভাবে দেখতেন, ভালোবাসতেন। সাহিত্য সংস্কৃতি ইতিহাস রাজনীতি, অগাধ জ্ঞান থাকলেও, সে জ্ঞান নিয়ে গর্ব করেননি। বরং, তার কথায় কাজে সেই জ্ঞানের প্রকাশ ঘটেছে।

Giving makes us happy , contribute to society for wellbeing and improvement, এমন সব তত্ত্ব যতোই পড়ছি, আমি বেবী মামাকে আরো বেশী করে connect করতে পারছি। তাঁর দেয়ার ক্ষমতা ছিলো অনেক। কথা দিয়ে কাজ দিয়ে যখন যেমন পেরেছেন, দিয়েছেন। আমাদের অর্জন, প্রাপ্তিতে যেমন খুশী হতেন, সমাজের পরিবারের অন্যদের অর্জনটুকুও তিনি সেলিব্রেট করতেন সমানভাবে।

আর কোনো কিছু আমাকে এতোটা বিষন্ন করেনা, যতটা করে তাঁর না থাকা। এই না থাকা নিয়েই চলছি। মাঝে মাঝে নিজেকে অন্ধকারে বন্দী মনে হয়। আলো নেই, আবার ছায়াও নেই, কেমন এক চেপে ধরা শূন্যতা পেয়ে বসে বারবার।

প্রযুক্তির যুগে, মানুষ- মানুষ খোঁজে। Algorithm, Hashtags, social media কত মানুষকে সামনে এনে দেয়।তবু মানুষ  shout out দেয় একজন মানুষের খোঁজে।আমার জানা Best Human আমার স্মৃতিতেই থাকেন। কোনোভাবেই তাকে আর বাস্তবে পাইনা। অভিমান রাগ যাই করি, কেউ তার মতো করে এসে বলবেনা, চল, গরম রসমালাই খেয়ে আসি,তারপর রাগ করিস।

ঐ মানুষটাই বলেছিলেন, যা মন চায় করিস। আশেপাশের মানুষ কত কি বলবে, কানে নিসনা। ‍যা ভালো লাগে, তাই করিস। এইযে অক্টোবর, খুব ভারী হয়ে চেপে বসে গলার কাছে, বুকের মাঝে। শ্বাস আটকে যেতে চায় মাঝে মাঝেই। এতো তাড়াতাড়ি কেন যেতে হলো…..মাঝে মাঝে মনে হয়, কালপুরুষের ‍যেমন মহাকাশ, নক্ষত্র, সব পাহারা দেয় বেবী মামাও কি কালপুরুষের মতো পাহারায়? চোখ রাখছেন আমাদের উপর, তাঁর স্নেহধন‍্য সবার প্রতি।

বেবী সিদ্দিকীর ভাগ্নী হয়েই থাকবো। প্রতিদিন মনে হবেই। এভাবেই চলবে। মেনে নিয়েছি। তবু কষ্টও পাই। তার মজার গল্প করতে গেলেও আমার চোখ ভরে আসে, কন্ঠে বাষ্পের ওঠানামা।

It’s hard to live with the feeling of missing someone, but it’s good to feel, I have someone special to remember deeply everyday.To cry, to miss, to smile, to feel protected yet blank…empty ……. “Nothing can ever take away a love the heart holds.”

নীতা
প্রযত্নে-বেবী সিদ্দিকী
মাগুরা।

শেয়ার করুন...




©All rights reserved Magura Protidin. 2018-2022
IT & Technical Support : BS Technology