মাগুরা প্রতিদিন : মিলাদের মিষ্টি কম দেওয়ার অভিযোগ তুলে মাগুরার শালিখা উপজেলার শতখালি গ্রামে জিসান (১৭) নামে এক কিশোরকে ছুরিকাঘাত সহ বেদম মারপিট করা হয়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত স্কুল ছাত্র জিসানের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় বুধবার তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে আহত জিসানের দিনমজুর বাবা এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিলেও হামলাকারী যুবক শিপন স্থানীয় বিএনপি নেতার ভাতিজা হওয়ায় পুলিশ অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু না করে উপরোন্তু পরিবারটিকে নানাভাবে নাজেহাল করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এলাকাবাসী জানায়, গত শুক্রবার শালিখা উপজেলার শতখালি গ্রামের দোয়ারপাড়া মসজিদে জুম্মার নামাজ শেষে মিলাদের আয়োজন ছিল। মিলাদ শেষে উপস্থিত মুসল্লিদের মধ্যে জিলাপি বিতরণ করা হয়। এই মিষ্টি বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয় মসজিদ পাশ্ববর্তি একই গ্রামের জহির শিকদারের স্কুল পড়ুয়া ছেলে জিসানকে। একে একে সকলের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করা হলেও ভাগে কম পরিমাণ মিষ্টি দেওয়ার অভিযোগ তুলে জিসানের উপর ক্রোধ প্রকাশ করে শালিখা উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব কিবরিয়া পাটোয়ারির ভাতিজা শিপন (২৪)। এদিন মিস্টি বিতরণ শেষে সবাই বাড়ি ফিরে গেলেও ওইদিন রাতে এশার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে জিসানকে ডেকে মিষ্টি কম দেওয়ার কৈফিয়ত চেয়ে শিপন তার উপর হামলা চালায়। এ ঘটনার পর তাকে শালিখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। কিন্তু মাথায় আঘাতের কারণে অবস্থার অবনতি হওয়ায় বুধবার তাকে যশোর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা শোচনীয় বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে ঘটনার পরদিন হামলার শিকার জিসানের বাবা রাজমিস্ত্রি জহির শিকদার শালিখা থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। উপরোন্তু সারাদিন বসিয়ে রেখে জানান, আজ না কাল আসেন। মামলা লেখা হয়নি নতুন করে লিখে আনেন। ছেলের ছবি তুলে প্রিন্ট করে দেন। মেডিকেল সার্টিফিকেট দেন কিংবা জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে আসেন ইত্যাদি কথা বলে নানাভাবে পুলিশ গত এক সপ্তাহ ধরে তাকে নাজেহাল করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে থানায় অভিযোগ দেওয়ায় হামলাকারী যুবকের পরিবারের পক্ষ থেকেও শিশুটির পরিবারকে হাসপাতালে গিয়েও নানাভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে বলেও জানা গেছে।
যশোর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুটির বাবা জহির শিকদার বলেন, ছেলের অবস্থা মরমর। বাড়ি বাড়ি রাজমিস্ত্রির কাজ করে আমাদের সংসার চলে। এর ভিতর দিনের পর দিন থানায় বসিয়ে রেখে পুলিশ দিনশেষে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। হামলাকারী যুবক শিপনকে এলাকার সবাই বখাটে হিসেবেই জানে। কিন্তু সে বিএনপি নেতার ভাতিজা হওয়ায় পুলিশ মামলা নিচ্ছে না। আবার থানায় অভিযোগ দেওয়ার কারণে তারাও আমাদের ভয় দেখাচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের চলাফেরা করাও দুস্কর হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে শালিখা থানার ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা মো. ওলি মিয়া ভিকটিমের পরিবারকে হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ ঘটনায় পুলিশের কোনো গাফিলতির নেই। মামলা রুজু হওয়ার আগে প্রাথমিক কিছু তদন্ত কার্য এবং কিছু প্রক্রিয়া সম্পাদনের কারণে দেরি হয়েছে। তবে খুব শিগগিরই অভিযুক্ত যুবককে আইনের আওতায় আনা হবে।