মাগুরা প্রতিদিন : শুধুমাত্র বাড়ির সামনে বসে সিগারেট খাওয়ার কারণেই প্রথমে কুপিয়ে ও পরে গলাকেটে হত্যা করা হয় মাগুরার পশু হাসপাতাল পাড়ার বাসিন্দা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সুজিত গুহ ভজনকে। এ ঘটনার পর পুলিশের হাতে আটক আবির হাসান মাগুরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিলেও স্বস্তিতে নেই গুহ পরিবারটি।
নিরাপত্তাহীনতার অভাব বোধ করছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
বিগত এক বছরে ওই এলাকার অন্তত ১০টি পরিবারের উপর হামলার ঘটনা এবং সর্বশেষ গলাকেটে হত্যাকাণ্ডের পর স্থানীয়দের অনেকেই নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
শনিবার (২৬) জুলাই রাতে মাগুরা শহরের ছায়াবিথী সড়কে নির্মমভাবে খুন হয় পশু হাসপাতাল পাড়ার আবুল কেরানীর ভাড়াটিয়া ভজন গুহ (৫৫)। এ ঘটনার পরদিন নিহতের ছেলে বিপ্লব গুহ মাগুরা সদর থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা সুমন হালদার জানান, হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনার রাতেই পুলিশের হাতে আটক যুবক আবির হাসান প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ব্যবসায়ী সুজিত গুহ ভজন হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেন। সোমবার তাকে আদালতে নেওয়া হলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায়ের সামনে তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধীও দিয়েছেন।
ভজন গুহ (৫৫) শহরের জামরুল তলায় কলার ব্যবসা করেন। দিন শেষে বাড়ি ফিরলেও বাড়িতে বড়ভাই সহ অন্যান্য থাকায় ধুমপান করতে ঘরের বাইরে যান। ঘটনার রাতে ১০ টার পর তিনি আবিরদের বাড়ির সামনে বসে ধুমপান করছিলেন। এ সময় আবির তাকে গালাগাল করলে ভজন গুহও গালমন্দ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আবির বাড়ির মধ্যে গিয়ে ছোরা নিয়ে বের হন। এ সময় ভজন দৌঁড় দিলে তার বাড়ির সামনে মুন্সীর বাড়ির গলিতে ফেলে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন। পরে গলা কেটে হত্যা করেন এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুমন হালদার জানিয়েছেন।
এদিকে ঘটনার রাতে পুলিশ আবির হাসানকে আটকের পর এলাকাবাসী তার উপর চড়াও হলে সে “সব দেখো নেবো” বলে হুমকি দেয়। এছাড়া বরাবরই নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সে এলাকার মানুষের প্রতি বিদ্বেষ দেখিয়ে এসেছে বলেও এলাকাবাসী জানায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত বছরের ৫ আগস্ট সে ওই পাড়ার স্বর্ণ ব্যবসায়ী ক্ষিরোদ কর্মকারের উপর অতির্কিতে ধারালো দাও নিয়ে হামলা করে। এছাড়া, একই সময়ে আনছার কলোনীর কানু জোয়ার্দার ও স্বপন জোয়ার্দারদের বাড়িতেও হামলা ও ভাঙচুর করে। সর্বশেষ এ মাসের প্রথম দিকে
বুলবুলি মালি ও ময়না মালি নামে দুই নারীর উপর হামলা ও মারধর করে।
নিহত ব্যবসায়ী সুজিত গুহ ভজনের ছেলে বিপ্লব গুহ বলেন, আমরা একই পাড়ায় মুসলিমদের সঙ্গে মিলেমিশে বাস করি। আবির বেশকিছুদিন ধরে স্থানীয়দের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। কেউ বাঁধা না দেওয়ায় সে আমার বাবার মতো সহজ সরল মানুষকে হত্যা করেছে। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করলেও বিচার পাবো কিনা জানি না। আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাই। জানমাল নিয়ে নিরাপদে বসবাসের নিশ্চয়তা চাই।
মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম বলেন, আবিরের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডটি সংগঠিত হলেও স্থানীয়রা শান্তিপ্রিয় মানুষ। ওই পরিবারটি ছাড়াও অন্যান্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশের নিয়মিত টহল কাজ করছে।