মাগুরা প্রতিদিন : সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি প্রস্তাবিত ৫ দফা আগামী ১০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়নের উদ্যোগ না নেওয়া হলে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
রবিবার সকালে বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি মাগুরা জেলা শাখা আয়োজিত মতবিনিময় ও সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
মাগুরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সম্মেলন কক্ষে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা ও সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ৫ দফা বাস্তবায়ন কমিটির মাগুরা জেলা শাখার আহŸায়ক মাগুরা জেলা শিক্ষা অফিসার আলমগির কবির, সদস্য সচিব মনিরুল ইসলাম মনজু, মাগুরা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নির্মল কুমার জোয়ারদার, সিনিয়র সহকারী শিক্ষক ফিরোজ কবির সহ অন্যান্যরা।
এ সময় বক্তারা স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা, সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষকের এন্ট্রিপদ ৯ম গ্রেডে উন্নীত করে ৪ স্তরীয় পদসোপান, আঞ্চলিক উপপরিচালকের প্রশাসনিক এবং আর্থিক ক্ষমতা সংরক্ষণসহ মাধ্যমিকের সকল কার্যালয়ের স্বাতন্ত্র্য ও মর্যাদা রক্ষা, বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখার সকল শূন্যপদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন এবং বকেয়া সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল এর মঞ্জুরী আদেশ প্রদানের দাবি জানান।
আগামী ১০ দিনের মধ্যে প্রস্তাবিত দাবিসমূহ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে চাকরিবিধি মেনে মানববন্ধন, মহাসমাবেশ আয়োজনসহ নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করা হবে বলে তারা জানান।
৫ দফা দাবি বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মনিরুল ইসলাম মনজু স্বাগত বক্তব্যে জানান, বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) ২০২৪ এর তথ্য অনুযায়ী মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২১,২৩২টি এর মধ্যে স্কুলের সাথে কলেজ রয়েছে ১৫১৪টি। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ২,৯৩,২৮৯ এবং ৯০,৬৩,৪২২। সারাদেশের মাধ্যমিক স্তরের অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী, জনবল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেখভাল করার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে মাত্র ১ জন উপপরিচালক ও ২ জন সহকারী পরিচালক আছেন। বিশাল সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালাতে গিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর হিমসিম খাচ্ছে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিঞার নেতৃত্বাধীন জাতীয় কমিশন-২০০৩ এর প্রতিবেদনের দ্বিতীয় অধ্যায়ের পৃষ্ঠা নং-৭৩, সুপারিশ অংশের ৪(২) এ বলা হয়েছে- “মাধ্যমিক শিক্ষার সার্বিক ব্যবস্থাপনা, তত্ত¡াবধান, প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠন করা কাম্য। উচ্চ শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়াদি অন্য অধিদপ্তর গঠন করে সেখানে ন্যস্ত করা যেতে পারে।” প্রতিবেদনের ৪(৫) এ বলা হয়েছে মাধ্যমিক শিক্ষাকে বিকেন্দ্রীকরণের জন্য ৯টি আঞ্চলিক শিক্ষা কার্যালয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ের জন্য একটি পরিচালকের পদ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। একইভাবে সুপারিশের ৪(৯) অংশে বলা হয়েছে-জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পদটি আপগ্রেড করে উপপরিচালক পদ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। অর্থাৎ পুরো মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে আধুনিক মানের একটি মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা পুনর্গঠনের অবশ্যকতা রয়েছে। জাতীয় শিক্ষা কমিশন ২০০৩ এর আলোকে শিক্ষা প্রশাসনকে পুনর্বিন্যাস করতে জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০ এর পৃষ্ঠা নং ৬৪, অধ্যায় ২৭ শিক্ষা প্রশাসন অংশে বলা হয়েছেশিক্ষা প্রশাসনে বর্তমান মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে দুইটি পৃথক অধিদপ্তর করে যথাক্রমে ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’ ও ‘উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা অধিদপ্তর’ গঠন করা হবে।
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রি. অনুষ্ঠিত সচিব সভায় মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রত্যেক মন্ত্রণালয়/বিভাগকে প্রয়োজনীয় সংস্কার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য মার্চিং অর্ডার প্রদান করায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ কর্তৃক গত ২৮ নভেম্বর ২০২৪ খ্রি. সময়াবব্ধ সংস্কার পরিকল্পনা দাখিল করা হয়। উল্লিখিত প্রস্তাবনাসমূহের মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’ এবং উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর’- এ দু’টি অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম ডিসেম্বর ২০২৫ এর মধ্যে সম্পন্ন করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের জানুয়ারি ২০২৫ খ্রি’র প্রতিবেদনে বাংলাদেশের শিক্ষা সার্ভিসের সংস্কারের জন্য নি¤œরূপ বিশেষ সুপারিশ করা হয়েছে। “মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর হতে মাধ্যমিক বিভাগকে পৃথক করে আলাদা ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মাধ্যমিক শিক্ষা অঙ্গীভ‚ত থাকার কারণে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা গুরুত্ব পাচ্ছে না
এবং ক্রমেই মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার মান হ্রাস পাচেছ। তাই এটি আলাদা হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।” ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠনের ফাইলে অনুমোদন দিয়েছেন বলে পত্র পত্রিকার খবরে জানতে পেরেছি। কিন্ত অজানা কারণে তা আটকে আছে।
সরকারি মাধ্যমিকের প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষক-কর্মকর্তার বিপরীতে পদোন্নতিযোগ্য পদ মাত্র ৪%। ফলে ৩২/৩৩ বছর চাকরি করেও পদোন্নতি ছাড়াই অধিকাংশ শিক্ষক অবসরে যান। ইতোমধ্যে সরকার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের পূর্বের সমমর্যাদার অনেক পদকে ১ম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদা প্রদান করে জনপ্রশাসনকে অধিকতর গতিশীল এবং জনসেবার মানোন্নয়ন করেছেন। ১৯৭৩ সালের পে-স্কেল অনুযায়ী সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষক, পিটিআই ইন্সট্রাক্টর, থানা শিক্ষা অফিসার সমগ্রেডের এবং পরস্পর বদলিযোগ্য পদ ছিল।
উক্ত পদগুলোর মধ্যে সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষক পদ ছাড়া অন্য সকল পদ ইতোপূর্বে ৯ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়। এমতাবস্থায় জাতীয় বেতনস্কেল ২০১৫ এর কারণে সৃষ্ট ক্ষতি ও বৈতন বৈষম্য দূরীকরণের নিমিত্ত সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষকের এন্ট্রিপদ ৯ম গ্রেডে উন্নীত করে সহকারী শিক্ষক (৯ম গ্রেড), সিনিয়র সহকারী শিক্ষক (৬ষ্ঠ গ্রেড), সিনিয়র শিক্ষক (৫ম গ্রেড) ও প্রিন্সিপ্যাল শিক্ষক (৪র্থগ্রেড) ৪ (চার) স্তর বিশিষ্ট একটি যুগোপযোগী ও যৌক্তিক পদ সোপান সৃষ্টি করা যেতে পারে। এটি আমাদের দীর্ঘদিনের দাবী। মাধ্যমিক শিক্ষা ক্যাডার চালু করে পদসোপান করা হলে বেতন বৈষম্য দূর হওয়ার পাশাপাশি পদোন্নতি জটিলতা কিছুটা হলেও দুর হতো, যা মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় ধরে রাখার পাশাপাশি মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সরকারি মাধ্যমিকে বর্তমানে শূন্যপদের তথ্য হলো- সিনিয়র শিক্ষক প্রায় ২৫০০টি, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার প্রায় ২৫০টি, সহকারী প্রধান শিক্ষক/সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রায় ৫২৫টি, প্রধান শিক্ষক প্রায় ৩০০টি, জেলা শিক্ষা অফিসার ৩৩টি, বিদ্যালয় পরিদর্শক ও সহকারী পরিচালক ২০টি, উপপরিচালক ১০ টি পদ দীর্ঘদিন যাবত শূন্য আছে। ৩২/৩৩ বছর চাকুরির পরও পদোন্নতিবিহীন অবসরে যাচ্ছেন শিক্ষকগণ। উক্ত পদগুলোতে পদোন্নতি প্রদান করা হলে সরকারের কোনো ব্যয় বৃদ্ধি পাবেনা। শিক্ষকদের পদোন্নতি সমস্যার সমাধানকল্পে এটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হতে পারে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ২০২১ অনুযায়ী সিনিয়র শিক্ষক পদ থেকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এর ৫০% পদে পদায়নের বিধান আছে। কিন্ত গত ৫ বছর পূর্বে উক্ত পদ সৃষ্টি হলেও এখনো পদায়ন দেওয়া হয়নি। সরকারি মাধ্যমিকের প্রায় ৬ হাজার শিক্ষক টাইমস্কেল-সিলেকশন গ্রেড বঞ্চিত। ৪ মে ২০২৫খ্রি. আপিল বিভাগের রায় দেওয়ার পরও কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো ধরণের ইতবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ভুক্তভোগী শিক্ষকগণের মাঝে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। উক্ত সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রæত সময়ের মধ্যে ডিপিসির মাধ্যমে শিক্ষকদের ন্যায্য পাওনা প্রদান করে বৈষম্যের শিকার সরকারি মাধ্যমিকের শিক্ষকগনের ক্ষোপভ, হতাশা ও বঞ্চনা প্রশমন করা উচিত, যা শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত তথা মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকল্পে দ্রæত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা ও এন্ট্রিপদ ৯ম গ্রেড বাস্তবায়নসহ ০৫ (পাঁচ) দফা’র বাস্তবায়ন চাই সরকারি মাধ্যমিকের প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষকের জন্য পদোন্নতিযোগ্য পদ মাত্র ৪%। যৌক্তিক কোনো পদসোপান না থাকায় দীর্ঘ ৩২/৩৩ বছর চাকুরী করেও অধিকাংশ শিক্ষককে পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যেতে হয়। পদোন্নতি অনিয়মিত বিধায় বেশকিছু পদ খালি পড়ে থাকে বছরের পর বছর। যা পদোন্নতি বঞ্চিতদের হতাশ করার পাশাপাশি মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। সরকারি মাধ্যমিকে শিক্ষক-কর্মকর্তাগণ প্রাপ্য বকেয়া টাইমস্কেল, পদমর্যাদা, পদোন্নতি, পদায়ন সহ চাকুরির বিভিন্নক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার।