মাগুরা প্রতিদিন ডটকম পরিবারের অন্যতম সদস্য অনন্যা হক। কবি, গদ্য লেখক।
জীবনকে উপলব্ধি করেন তিনি জীবনের গভীর থেকে; নিজস্ব আঙ্গিকে। গেলো বছর আর নতুন বছরের আবেগ, অনুভূতি আর আবেদন-আকাঙ্খার গল্প বুনেছেন শব্দের পরতে পরতে।
মাগুরা প্রতিদিনের পাঠকদের জন্যে তার এবারের আয়োজন-
নতুন আলোয় জীবন হোক আনন্দমুখর
– অনন্যা হক
এই তো সেদিন সব ছিল। ঝকঝকে সোনা ঝরা রোদের সকাল দিয়ে শুরু হওয়া দিনগুলো, কত স্বপ্নময়তায় মাখা, কত আনন্দমুখর। সকাল থেকে দুপুর, দুপুর থেকে রাত, আবার রাত থেকে সকাল। কত গতিময়তায় ভরপুর সে জীবন।
সারা দিনের কাজের পর আলো পড়ে গিয়ে
আসতো আঁধারে আচ্ছন্ন রাত। যে রাত ছিল বিশ্রামের পর আবার নতুন এক সকাল দেখার অপেক্ষার রাত।
ছন্দময় জীবনের পরতে পরতে সুখ দুঃখ, আনন্দ, বেদনার পাশাপাশি ছিল তবুও জীবনের নিশ্চয়তা। আকস্মিক মৃত্যুতে হয়তো আমাদের কোন হাত থাকে না, তবুও সেখানে ছিল না মৃত্যুভয়ে কাঁটা হয়ে থাকার কোন বিভীষিকা।
হঠাৎ করে পাল্টে গেল আমাদের জীবনের সব ছন্দ, গতি, তাল, সুর। থেমে গেল সব স্বপ্ন।যেন জীবনের একটাই মানে, শুধু বেঁচে থাকি, যেভাবেই পারি একটু বেঁচে থাকি।
সব লেনাদেনা স্তম্ভিত। বাহুল্য জীবন, আড়ম্বরপূর্ণ জীবন, চাকচিক্যময় জীবন যেন চাপা পড়ে গেল বেঁচে থাকার লিপ্সার কাছে, যখন শুধু বেঁচে থাকাটাই আমাদের অনেক বড় পাওয়া মনে হয়।
এই পৃথিবীর প্রতি কি অসম্ভব মায়া আমাদের, মানুষের প্রতি যে অসীম মায়া, জীবনের প্রতি মায়া, বুঝতে পেরেছি গত দুই বছর ধরে।
আমাদের মনের হাজারটা আকুলতা, ব্যাকুলতা, বাহানা হয়ে ছিল ঘরবন্দি। মন বন্দি করে বেঁচে থাকার দিকে তাকিয়ে কেটেছে অনেকগুলো দিন।
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চলে গেছে চির বিদায় নিয়ে ওপারে প্রায় অর্ধ কোটি মানুষ।
আমরা যারা এখনও বেঁচে আছি এটাই যেন এক বড় বিস্ময়।
দিন কত দ্রুত যায়, যেন চোখের পলকে। চলে গেল আরও একটা বছর। সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা এমন করে দিন, দিনের পর দিন করে বছর, এমন করেই চলে যায় এক একটা বছর জীবন থেকে।
পার করেছি জীবনের অনেকগুলো বছর। কিন্তু গত দুই বছর ছিল এক চরম বিভীষিকাময় সময়। মনে করতে চাই না। মন থেকে মুছে গেলেই বাঁচি যেন।
এখনও একেবারে নিঃশেষ হয়নি সে সময়। আমরা অতিক্রম করছি এক মহামারী ক্রান্তিকাল।
আজ দুই হাজার একুশ সালের শেষ দিন। বিকেলের শেষ আলোটুকু নিয়ে সূর্য চলে গেল আঁধারের ওপারে। রাত আর দিনের মতোই পর্যায়ক্রমে আশা নিরাশার দোলাচলে এভাবে অতিক্রান্ত সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা হেঁটে চলেছি যার যার গন্তব্যের দিকে। আবার সূর্য উদিত হবে সকালে নতুন একটা বছর সামনে নিয়ে। আমরা জানি না সময় আমাদের জন্য কি উপহার হাতে নিয়ে বসে আছে। তবুও আমাদের আশা থাকে সকালের ঝকঝকে আলোর মতো সুন্দর এবং শুদ্ধতায় ভরে উঠুক জীবন!
উন্মুখ হয়ে চেয়ে আছি একটা চকচকে রোদে ভরা স্বর্ণালী সকালের জন্যে, একটা নীরব স্মৃতিময় অলস দুপুরের জন্যে,একটা কোমল রোদের মায়াবী বিকেলের জন্যে, সোনালী আলোয় হেসে ওঠা গোধূলি সন্ধ্যার জন্যে।চাঁদের আলোয় আলোকিত এক নির্মল আঙিনার জন্যে। যেখানে কোন অদৃশ্য বায়বীয় বিষাক্ত জীবাণুর কোন অস্তিত্ব আর কোন দিন যেখানে স্থান পাবে না। আর একটা প্রাণ এর করাল গ্রাসে বিসর্জিত হবে না। সর্বপরি এক বিশুদ্ধ পৃথিবীর জন্যে।
আবার এলো নতুন বছর। নতুন দিনের সাথে
হেসে উঠুক আবার পৃথিবী,
ফিরে আসুক আবার প্রাণ চাঞ্চল্য,
আমরা আমাদের মনের সব কালিমা, জঞ্জাল, পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে যেতে পারি যেন
গতিময়তায় ভরপুর এক জীবনের ভেতরে। শুদ্ধ হোক পৃথিবী, শুদ্ধ হোক আমাদের মন ও জীবন।
সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রার্থনা– মানুষের আত্মশুদ্ধির মধ্য দিয়ে এক নতুন পৃথিবী হেসে উঠুক অচিরেই।
নববর্ষের শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা!