মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : মাগুরা জেলায় বিজেআরআই তোষা পাট-৮ (রবি-১) চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন হচ্ছেন কৃষকরা। গাছ রোগ বালাই সহিষ্ণু, আঁশের সুন্দর রঙ এবং টেকসই হওয়ার পাশাপাশি ফলন ভালো হওয়ায় এ জাতের আবাদে তাদের অধিক আগ্রহ বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় মোট ২৫০ হেক্টর জমিতে এ জাতের পাটের আবাদ হয়েছে। এর বিশেষ বৈশিষ্ট হচ্ছে আগাম বীজ বপন ও ক্ষেত থেকে কাটাসহ এর জীবনকাল মাত্র ১১৫ থেকে ১২০ দিন। এ কারণে এ জাতের আবাদে কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগও আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
মাগুরায় গত ৩ বছর বিজেআরআই তোষা পাট-৮(রবি-১) এর আবাদ শুরু হয়েছে। এ জাতের পাট বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হচ্ছে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত। এটি অপেক্ষাকৃত উচু, জলাবদ্ধতাহীন দো-আঁশ এবং বেলে দো-আঁশ মাটিতে চাষের উপযোগী। স্বাভাবিক গড় উচ্চতা প্রচলিত জাত অপেক্ষা ৩০ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার বেশি। উন্নততর আঁশ বিশিষ্ট এ পাট অধিকতর উজ্জল এবং শক্ত। প্রচলিত জাতের তুলনায় এ জাতের গাছ কিছুটা লম্বা হয়। সবচেয়ে বড় কথা ফলা উৎপাদন ভালো হওয়ায় আগামীতে এ চাষ আরো বাড়বে বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগ।
জেলার মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ঘুল্লিয়া গ্রামের কৃষক আইয়ুব আলী জানান, তিনি ৫০ শতক জমিতে এ পাটের চাষ করেছেন। যেখান থেকে পাওয়া গেছে ১৬ মন পাট। আবাদ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার টাকা। এখন দাম আশানুরূপ হলে বিক্রি করে লাভোবান হবেন বলে তিনি আশা করছেন।
মাগুরা সদর উপজেলা আঠাখাদা গ্রামের কৃষক টিটুল বিশ্বাস জানান, তিনি মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ৭৫০ গ্রাম পাট বীজ সংগ্রহ করছেন। যা থেকে ৩৩ শতক জমিতে আবাদ করেছেন। পাট শুকানোর পর ভালো রঙের আঁশ পাওয়া গেছে। মোটা এবং লম্বাও বেশ।
বিনোদপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মৃনাল কান্তি দাস জানান, স্থানীয় কৃষকরা নিজেরাই এ জাতের পাট বীজ উৎপান করে তা কৃষকদের কাছে বিক্রি করতে পারবেন। সর্বোপরি এ জাতের পাটের গুনাগুন ও ফলন ভালো হওয়ায় চাষিরাও এই আবাদে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
চলতি বছর মাগুরা জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে। সেখানে আবাদ হয়েছে ৩৬ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১ হাজার ৬৫ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১১ হাজার ৪৫ হেক্টর, শ্রীপুরে ১১ হাজার ১৫০ হেক্টর, শালিখায় ৩ হাজার ৯৩৫ হেক্টর এবং মহম্মদপুর উপজেলা ১০ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে সাধরণ জাতের পাট চাষ হয়েছে। চাষকৃত জমি থেকে প্রায় ৫ লাখ ১৫ হাজার ৯১২ বেল পাট উৎপাদিত হবে বলে আশা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান জানান, চলতি বছর জেলায় মোট ৩৬ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে । এরমধ্যে ২৫০ হেক্টর বিজেআরআই তোষা পাট-৮ (রবি-১) চাষ হয়েছে। এই জাতের পাটগাছ রোগসহিষ্নু। ১১৫ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে পাট কর্তন করা গেলে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব। তবে দেরিতে কর্তন করা হলেও গাছ শুকিয়ে যায় না। বিধায় এ জাতটি এই দেশের আবহাওয়া এবং কৃষকবান্ধব।