মাগুরা প্রতিদিন : তথ্য গোপন করে দুবাইয়ে ৪৫৯ বাংলাদেশির সম্পদ কেনা নিয়ে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বাংলাদেশ রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংস্থাগুলোকে এক মাসের মধ্যে অনুসন্ধানের বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত আবেদনের শুনানির পর রোববার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। তথ্য গোপন করে দুবাইয়ে ৪৫৯ বাংলাদেশির সম্পদ কেনা নিয়ে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
‘দুবাইয়ে ৪৫৯ বাংলাদেশির হাজার প্রোপার্টি’ শিরোনামে ১০ জানুয়ারি একটি দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস বৃহস্পতিবার এ আবেদন করেন। আবেদনে ৪৫৯ বাংলাদেশির সম্পদ কেনা নিয়ে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
আদালতে আবেদনের পক্ষে আইনজীবী সুবীর নন্দী দাসের সঙ্গে শুনানি করেন আইনজীবী সায়েদুল হক সুমন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
আদেশের পর আইনজীবী সুবীর বলেন, ‘প্রকাশিত প্রতিবেদনের বস্তুনিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে পত্রিকাটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে হলফনামা করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’ আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির তারিখ রাখা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান আইন কর্মকর্তা মানিক।
আইনজীবী সায়েদুল হক সুমন বলেন, ‘দুবাই, লন্ডনের বেগমপাড়ায় বাংলাদেশিদের বাড়ি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে শিক্ষা এবং চিকিৎসা বাবদ বিদেশে টাকা নেওয়া যাবে। কোনোভাবেই বাড়ি কেনা বা সম্পত্তি কেনা বাবদ বাংলাদেশ থেকে টাকা নেওয়া সরাসরি অবৈধ। কেউ নিয়ে থাকলে সেটিকে আইনসম্মত বা বৈধ বলার সুযোগ নেই।’
এর আগে বিদেশি ব্যাংক, বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে পাচার করা ‘বিপুল পরিমাণ’ অর্থ উদ্ধারে যথাযথ পদক্ষেপের নির্দেশনা চেয়ে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট করেছিলেন আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস ও আব্দুল কাইয়ুম খান। সে রিটের প্রাথমিক শুনানির পর ওই বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি রুলসহ আদেশ দেন হাইকোর্ট। পরে আরও কয়েক দফা শুনানি ও আদেশ হয় ওই রিটে।
গত বছর ৩০ জানুয়ারি আদেশে আদালত সুইস ব্যাংকসহ অন্যান্য বিদেশি ব্যাংকে দেশের কারা অর্থ জমা রেখেছে বা পাচার করেছে, তা জানতে চান। ওই রিটের ধারাবাহিকতায় ৪৫৯ বাংলাদেশির সম্পদ কেনা নিয়ে ওঠা অভিযোগের অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেন আইনজীবী সুবীর।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকাশ্যে-গোপনে বিপুল পরিমাণ মূলধন স্থানান্তরিত হচ্ছে দুবাইয়ে। এ অর্থ পুনর্বিনিয়োগে ফুলেফেঁপে উঠছে দুবাইয়ের আর্থিক, ভূসম্পত্তি, আবাসনসহ (রিয়েল এস্টেট) বিভিন্ন খাত। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজের (সিএডিএস) সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরি জানিয়েছে, বাংলাদেশে তথ্য গোপন করে দুবাইয়ে প্রোপার্টি কিনেছেন ৪৫৯ বাংলাদেশি। ২০২০ সাল পর্যন্ত তাদের মালিকানায় সেখানে মোট ৯৭২টি জমি-বাড়ি কেনার তথ্য পাওয়া গেছে, কাগজে-কলমে যার মূল্য সাড়ে ৩১ কোটি ডলার। তবে প্রকৃতপক্ষে এসব সম্পত্তি কিনতে ক্রেতাদের অনেক বেশি ব্যয় করতে হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।