মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : সব ধরনের মাদক উদ্ধার এবং মাদক কারবারি ও প্রশয়দাতাদের প্রতিরোধে মাগুরা পুলিশ প্রশাসন ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করেছে। মাগুরা জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে গোয়েন্দা পুলিশের নিয়মিত নজরদারি এবং সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অভিযানে মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে পুলিশের ইতিবাচক ভূমিকা সর্বত্র প্রশংসিত হচ্ছে। তবে মাদকের বিস্তার রোধে আরো সাঁড়াশি অভিযান প্রয়োজন বলে মনে করছেন জেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এবং ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
মাগুরার নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মশিউদ্দৌলা রেজা জানিয়েছেন, মাদকের বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছেন তাঁরা। মাদক সংশ্লিষ্ট অপরাধের সাথে জড়িত কেউ তাই পার পাবে না। পুলিশের গোয়েন্দা শাখাও এ বিষয়ে খুবই তৎপর। শ্রীপুর, মুহম্মদপুর, শালিখাসহ প্রতিটি থানাতেও সেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তথ্যানুসন্ধ্যানে জানা গেছে, বিগত এক দশকের মধ্যে শেষ দুই বছর মাগুরায় সবচেয়ে বেশি এবং ভয়াবহ আকারে মাদকের বিস্তার লাভ করে। শহর এবং শহরতলী পেরিয়ে মাদক ব্যবসা অনেক গ্রামে ঢুকে পড়ে। অনেক গ্রামে এটি ওপেনসিক্রেট ব্যবসাও হয়ে পড়ে। গ্রামের কৃষক পরিবারের সন্তান, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, উঠতি তরুণ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেকেই এখন মাদকের ভয়াল ছোবলের শিকার। অনেক নিভৃত পল্লীতে সবার অজান্তেই ইয়াবাসহ নানা মাদকের পসরা বসিয়েছে এক শ্রেণীর কারবারিরা। যারা মাদক বিক্রি করে দ্রুত টাকা তৈরির একটা উপলক্ষ্যও পেয়েছে।
মাগুরাতে মাদকের ভয়াবহতা উন্মোচন হয় ২০১৮ সালের মে মাসে। ঐ সময় মাগুরা শহরের বাটিকাপাড়া এলাকাতে তিন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। নিহত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক আইনে একাধিক মামলাও ছিল। এই ঘটনা সে সময় সবাইকে অবাক না করে পারেনি। এর দু বছর পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মাগুরাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক ভয়াবহ তথ্য উপস্থাপন করে মাগুরা জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, কেবলমাত্র মাগুরা জেলাতেই প্রতিমাসে অন্তত ৪ কোটি টাকার ইয়াবা বেচাবিক্রি হয়ে থাকে।
সূত্রমতে, জেলায় প্রচলিত অবৈধ মাদকদ্রব্যের মধ্যে বিপুলভাবে সমাদৃত গাঁজার পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি মাত্রায় ব্যবহার হচ্ছে ফেন্সিডিল এবং ইয়াবা ট্যাবলেট। অবস্থানগত কারণে মাগুরা জেলার সঙ্গে ভারতের সীমান্তবর্তি জেলা যশোর, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ার রয়েছে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা। অন্যদিকে দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশদার হওয়ায় দেশের অবৈধ মাদক ব্যবসায়ীরাও মাগুরা জেলাকে নিজেদের নিরাপদ ট্রানজিট এবং ব্যবসায়ের অন্যতম টার্গেট হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে। ফলে আমদানি নিষিদ্ধ ফেন্সিডিলের রমরমা কারবার গড়ে উঠেছে এই জেলার অদৃশ্য সব পয়েন্টে।
অন্যদিকে সড়কের নানা প্রতিবন্ধকতার বেড়াজাল ডিঙিয়ে প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠীর সহযোগিতায় মাগুরায় অবাধে কক্সবাজার থেকে আসছে বিভিন্ন প্রকারের ইয়াবা ট্যাবলেট। যার মূল ক্রেতা কিশোর বয়সী থেকে পঞ্চাশোর্ধ নারী-পুরুষ পর্যন্ত। ইয়াবা এখন ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। ইতিমধ্যেই মাগুরা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিট বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবা জব্দ এবং জড়িতদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
এদিকে নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাগুরা শহর এবং আশেপাশের এলাকাতে কোড বা ছদ্মনামধারী সব মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। শহরের পারনান্দুয়ালীতে উঠতি বয়সি এক মাদক কারবারি ‘আফসোস’ নামে অধিক পরিচিতি। প্রতিদিন তার বিক্রি অন্তত ১ হাজার ২শত পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। শহর ও শহরতলী ঘিরে তার মতো চিহ্নিত অন্তত আরও ২০ জন ইয়াবা কারবারি রয়েছে। যারা প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার পর্যন্ত ইয়াবা বিক্রি করে থাকে। তবে সারা জেলায় এর সংখ্যা ৪ থেকে ৫ গুন প্রতীয়মান। একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর আশ্রয় প্রশ্রয়ে চিহ্নিত মাদক কারবারিদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা যুবকেরাও সরাসরি ইয়াবার বড় বড় চালান নির্বিঘেœ মাগুরায় পৌঁছে দিচ্ছে। ২ মে এমনই একটি চালান মাগুরার বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পর শ্রীপুর উপজেলার আমতৈল গ্রাম থেকে পুলিশের হাতে আটক হয় রোহিঙ্গা যুবক হুবায়েত।
মাগুরার নবাগত পুলিশ সুপার মশিউদ্দৌলা রেজা দায়িত্ব গ্রহণের পর চারটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাদক দ্রব্য উদ্ধারে পুলিশের নানামুখী অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইয়াবা, গাঁজা, ফেন্সিডিল উদ্ধারের পাশাপাশি বেশকিছু মাদক কারবারি পুলিশের হাতে আটকও হয়েছে।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাব্বারুল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘পুলিশ সুপার মহোদয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে । সেই নির্দেশনা মোতাবেক থানা পুলিশের বিভিন্ন টিম গোপনে কাজ করে যাচ্ছে।
মাদকের বিস্তার রোধে জেলা পুলিশ প্রশাসনের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে বলে জেলার অন্যান্য থানার পুলিশ কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন।