মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : পৌরসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় তফসিল ঘোষণার সাথে সাথে সরগরম হয়ে উঠেছে মাগুরার নির্বাচনী পাড়া। ২ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মাগুরা পৌরসভাসহ দেশের ৬১টি পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে ২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারি।
তবে মাগুরা পৌরসভায় কে পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন সেই আলোচনা এখন সবখানে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২০ ডিসেম্বর। মনোনয়ন পত্র বাছাই ২২ ডিসেম্বর এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৯ ডিসেম্বর। তবে মাগুরা পৌরসভায় এবারের নির্বাচনে ব্যালট পেপারের পরিবর্তে ইভিএম ব্যবহার হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ আলমগীর।
এদিকে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সাথে সাথেই কাউন্সিলর প্রার্থিদের অনেকেই নিজ নিজ এলাকায় নিজেদের নির্বাচনী অফিস সাজিয়ে ফেলেছেন। তবে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি মেয়র প্রার্থীরা বেশ আগেই তাদের কার্যক্রম শুরু করেছেন।
মাগুরা পৌরসভায় ২০১৫ সনের ৩০ ডিসেম্বর সর্বশেষ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন মাগুরা জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খুরশিদ হায়দার টুটুল। তিনি মাগুরা জেলা আওয়ামীলীগের প্রয়াত সভাপতি জননেতা আলতাফ হোসেনের ছেলে। ওই নির্বাচনে খুরশিদ হায়দার টুটুল নৌকা প্রতিকে নির্বাচন করে ২৭ হাজার ৯৫০ ভোট পেয়ে বিএনপি দলীয় প্রার্থি ইকবাল আকতার খান কাফুরকে পরাজিত করেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থি ইকবাল আকতার পেয়েছিলেন ১৫ হাজার ৫৫৯ ভোট। এ নির্বাচনে মেয়র পদের অপর প্রার্থি ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন দলের মোহাম্মদ মশিউর রহমান।
নতুন বছরের ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় এবারের নির্বাচনেও প্রার্থি হবেন বর্তমান মেয়র খুরশিদ হায়দার টুটুল। বিগত নির্বাচনে একেবারেই তরুণ প্রাথি হিসেবে নির্বাচিত হলেও দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং সংস্কারমূলক কাজের মাধ্যমে নানা চমক দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়া উন্নয়নমূলক কাজে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মী থেকে শুরু করে স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং পৌর নাগরিকদের সঙ্গে পৃথক পৃথক সভা করে তাদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। যা পৌর নাগরিকদের মধ্যে মেয়র খুরশিদ হায়দার টুটুলের প্রতি আস্থার পাশাপাশি জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিমত পৌর ভোটারদের অনেকের। এই বিষয়টি আসন্ন নির্বাচনে তাকে প্রার্থি হতে অধিক উত্সাহ যোগাবে বলে মনে করছেন তারা। তবে দলীয় প্রতিকে মেয়র পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় মনোনয়ন পেতে তাকে অবশ্যই নির্ভর করতে হবে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচনী বোর্ডের উপর। সে লক্ষ্যে খুরশিদ হায়দার টুটুল কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দলীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। আবার মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়েও নিজেকে অনেকটা নির্ভার মনে করছেন বর্তমান মেয়র খুরশিদ হায়দার টুটুল।
তবে মেয়র পদে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন আরো বেশ ক’জন। তাদের মধ্যে জেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি মুন্সি রেজাউল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক এড. শাখারুল ইসলাম শাকিল, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক সোহেল পারভেজ দ্বীপ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক রানা আমির ওসমান, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান স্বপন, সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র তপন কুমার রায় অন্যতম। তারা নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে জনসংযোগের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।
মাগুরা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি-সম্পাদক এড শাখারুল ইসলাম শাকিল নিজ এলাকায় উঠোন বৈঠক এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক রানা আমির ওসমান আস্থাভাজন তরুণদের নিয়ে জনসংযোগের মাধ্যমে সাধারণ ভোটারদের চোখে পড়ার চেষ্টা করেছেন। বিগত দিনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে সারা জেলাতেই তাদের পরিচিতি রয়েছে।
আওয়ামীলীগের নির্বাচনী বোর্ড মেয়র পদে নতুনদের প্রাধান্য দিলে তারা সেই আনুকল্য পাবেন এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন উভয় প্রার্থিই।
মেয়র পদে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চেয়ে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন বিমান বাহিনির স্কোয়ার্ডান লিডার (অব) রফিকুল ইসলাম কামালও। মাগুরা জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি গোলাম মওলা মোল্যার ছেলে কামাল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। দলীয় মনোনয়ন পেতে তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজ এলাকাতেও চালাচ্ছেন প্রচারণা।
মাগুরা পৌর সভায় বিগত নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে ইকবাল আকতার খান কাফুর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও এবারের নির্বাচনে প্রার্থি হবেন কিনা সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নন তিনি। দলীয় সিদ্ধান্ত এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে তার প্রার্থি হওয়া এবং না হওয়ার বিষয় বলে জানান তিনি।
তবে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন মাগুরা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মাসুদ হাসান খান কিজিল, জেলা বিএনপি নেতা এড. শাহেদ হাসান টগর এবং জেলা যুবদল সভাপতি এড. ওয়াসিকুর রহমান কল্লোল।
এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (ইনু) জাসদের পক্ষ থেকেও মেয়র এবং কাউন্সিলর পদে প্রার্থিতা দেওয়া হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। সেক্ষেত্রে মেয়র পদে জেলা জাসদ সাধারণ সম্পাদক সমীর চক্রবর্তি দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন বলে শোনা গেছে।
বিগত নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধিন জাতীয় পার্টি (এরশাদ) আওয়ামীলীগের প্রার্থির পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়। তবে এবার জাতীয় পার্টির নিজেদের কোনো প্রার্থী দেবেন কিনা সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেন নি জেলা জাতীয় পার্টি নেতা এড. হাসান সিরাজ সুজা।
এখন সময়ের জন্যে অপেক্ষা কে কোন দল থেকে মনোনয়ন পাচ্ছেন। আর কে হবেন আসন্ন পৌরসভার নতুন মেয়র। তবে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়নের জন্যে প্রার্থিদের অবশ্যই শেষ সময় ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।