অনন্যা হক : পৃথিবীর ক জন পুরুষ জানে,অথবা ক জন সন্তান জানে, এক জন মহিলা তার শরীর থেকে একটা প্রাণ সৃষ্টি করে পৃথিবীর বুকে আনতে,তাকে লালন পালন করে বড় করতে, কি পরিমান আত্মত্যাগ করে থাকে? জীবনের পরতে পরতে, দিন ক্ষণ,মাস, বছরের প্রতি টা সময়ের কতটুকু সময় সে নিজের জন্য ভাবে? এক জন নারী জীবনে একবার মা হয়ে গেলে, আমৃত্যু সে সন্তানের মঙ্গল চিন্তায় বিভোর থাকে। এ কারণে ভুলে যায় তারা নিজের ভাল মন্দের হিসাব নিকাশ ।
সন্তান রুপি যে প্রাণ সে পৃথিবীর বুকে আনে,তাকে আনার আগে অনেক গুলো বছর মহিলা রা এক জটিল পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে দিনাতিপাত করে।হরমোন আপ ডাউনের এক জটিল পদ্ধতি তাকে মোকাবেলা করতে করতে জীবন যাপন করতে হয়। এরপর সন্তান ধারণের সময় টা তে,জন্ম দেয়ার সময় টা তে অনেক কঠিন প্রায় জীবন মরণ সমস্যার ভেতর দিয়ে নারী দের পথ অতিক্রম করতে হয়। কিন্তু সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তাবেদারী শুরু হয়ে যায় জন্মদাত্রীর থেকে অন্য গোত্রের মানুষের বেশী। বংশ পরিচয়, নাম রাখা, পদবী সব নিয়ে টানাটানি চলতে থাকে। তখন ঐ প্রাণ ধারণকারী নারী হয় যেন শুধু মাত্র ধারক।যাই হোক এখনকার যুগে আমরা মহিলা রা এসব খুব একটা কেয়ার করি না।এসব এখন পুরোনো বিষয়,মাথা ঘামিয়ে কাউকে প্রাধান্য দিতেও চাই না।এসব টানাপোড়েন এখন চুলোয় যাক।আমি বলছি নতুন একটা বিষয় নিয়ে কথা—-
যে প্রাণ সৃষ্টি তে থাকে এত জটিলতা, তবুও তার ভেতরে লুকিয়ে থাকে অসীম আনন্দ।কিন্তু যখন এই মহিলা গুলো আর এই প্রাণ সৃষ্টির উপযোগিতা হারিয়ে ফেলে, সক্ষমতাহারিয়ে ফেলে, কত জন পুরুষ রুপি স্বামী জানে বা বোঝে,ঠিক কত টা মানসিক বা শারীরিক কষ্ট তাদেরকে ফেস করতে হয়?
সম্ভবত বেশীর ভাগ পুরুষ জানে না, প্রাণ সৃষ্টি করতে যে কষ্ট নারী রা ভোগ করে, ঠিক প্রাণ সৃষ্টি সক্ষমতা হারিয়ে তারা যেন আরো এক গোলক ধাঁধার জীবনের গলির মধ্যে ঢুকে পড়ে। মহিলাদের জীবনের এই সময় টা কে বলে মেনোপজ জোন। তারা নিজেরাও প্রস্তুত থাকে না, কি এক কঠিন, জটিল, হাহাকার সময় তাদের জন্য সামনে অপেক্ষা করে আছে। শুরু হয় এক রহস্যময় অধ্যায়। সংসারের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। কখনও জীবন কে অর্থহীন মনে হয়। হরমোন ইমব্যালান্স এক অসহায় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।নানা রকম উপসর্গ যোগ হয় শরীরে সর্বপরি মনে। মাতৃত্ব বোধের এক অসীম আনন্দ, এক মায়াবী বোধে যে নারী দীর্ঘদিন আচ্ছন্ন ছিল, আর মা না হতে চাইলেও, অজানা এক আকুলতা, ব্যর্থতা তাকে গ্রাস করে।মাতৃত্ব বোধ নারী দের একছত্র আনন্দ, যার রেশ মাত্র অনুধাবন করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়।মেনোপজ এর সময় টা তে মহিলা রা কিছু টা বিভ্রান্ত, বিমর্ষ, মানসিক টানাপোড়েন, ডিপ্রেশন,কোন কাজে মনোনিবেশের সমস্যা সহ অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি অতিক্রম করে থাকে।
সকলের মাঝে থেকেও একাকীত্ব গ্রাস করে, সাথে বহুবিধ শারীরিক জটিলতার মধ্যে বসবাস করে। নারী প্রাণ সৃষ্টি করে বলে পৃথিবী টা এত সুন্দর এত বৈচিত্র্যময়। নারীর এই বহুমাত্রিক আত্মত্যাগের মূল্যায়ন করা, সহানুভূতির মনোভাব নিয়ে তার পাশে অবস্থান করে তার মানসিক সাপোর্ট দিয়ে যাওয়া প্রতি টা হাসবেন্ড এর কর্তব্য এবং মানবিক দায়িত্ব। এই বিষয় টা গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় রাখা উচিত, যেন কোন নারী এ অবস্থায় নিজেকে একা এবং অসহায় ভাবতে বাধ্য না হয়।
পিতৃত্বের আনন্দ এবং অধিকার প্রাপ্তির দায় থেকে এক জন পুরুষের উচিত ভালবাসা এবং মমতার সাথে স্ত্রীর পাশে থেকে শক্তি যুগিয়ে যাওয়া যাতে সে এই প্রতিকূলতা সহজে কাটিয়ে উঠে আবার স্বাভাবিক জীবনের আনন্দ উপভোগ করতে পারে। নারী, পুরুষ যারা জীবনের ঠিক এই পর্যায়ে পৌঁছেছে,তাদের অবশ্যই এ বিষয়ে বিশদ ভাবে জানতে হবে, যাতে করে এই জটিল পরিস্থিতি সহজে মোকাবেলা করা যায়।
মাতৃত্বের কষ্টের মধ্যে অনেক আনন্দ থাকে, যোগ হতে থাকে নতুন নতুন ঘটনা,নতুন কিছু পাওয়া। কিন্তু মাতৃত্ব হারানোর কষ্টের মধ্যে কোন আনন্দ যোগ হয় না, যোগ হতে থাকে শুধু বিয়োগের অধ্যায়।