মাগুরা প্রতিদিন : “মহান মে দিবসের চেতনায় শ্রমিক শ্রেণি ঐক্যবদ্ধ হও”-শ্লোগানকে সামনে রেখে মাগুরায় বাম গণতান্ত্রিক জোট মাগুরা জেলার উদ্যোগে ১ মে সোমবার সমাবেশ করেছে।
সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে মাগুরা জেলা প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাম গণতান্ত্রিক জোট মাগুরা জেলার সমন্বয়ক ও বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় নেতা শিক্ষাবিদ কাজী নজরুল ইসলাম ফিরোজ।
সমাবেশ পরিচালনা করেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ মাগুরা জেলা আহ্বায়ক প্রকৌশলী শম্পা বসু। বক্তব্য প্রদান করেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি মাগুরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এটিএম আনিসুর রহমান।
সমাবেশে বক্তাগণ বলেন, ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে ৮ ঘণ্টা কর্মদিবসের আন্দোলনে জীবন দিয়েছিলেন আগস্ত, স্পাইজ, এঞ্জেলস, ফিসার। মালিক এবং সরকার ভেবেছিল ফাঁসি দিয়ে শ্রমিক নেতাদেরকে হত্যা করে শ্রমিক আন্দোলন দমন করা যাবে। কিন্তু ন্যায্য দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলন হত্যা ও নির্যাতনের মাধ্যমে দমন করা যায় না। এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর দেশে দেশে। পরবর্তিতে ১৮৮৯ সালে ফ্রেডেরিক এঙ্গেলসের নেতৃত্বে ‘দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের প্যারিস কংগ্রেসে ১ মে আন্তর্জাতিক বিক্ষোভ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। ১৮৯০ সালে নিউইয়র্কে প্রথম মে দিবসের সমাবেশের প্রস্তাবে লেখা হয়, ‘৮ ঘণ্টা কাজের দিনের দাবি পূরণের সংগ্রাম আমরা চালিয়ে যাব কিন্তু কখনো ভুলবো না, আমাদের শেষ লক্ষ্য হল (পুঁজিবাদী) মজুরি ব্যবস্থার উচ্ছেদ সাধন’। তারপর থেকেই ৮ ঘণ্টা কাজ, ন্যায্য মজুরি আর পুঁজিবাদ উচ্ছেদের সংগ্রাম একসাথেই চলছে।
মানুষ প্রতিদিন যা কিছু ব্যবহার করে সবকিছুই মানুষের শ্রমে তৈরি। কিন্তু শ্রমিকের শ্রমে তৈরি সম্পদ থেকে শ্রমিকরা বঞ্চিত। শ্রমিক কাজের বিনিময়ে মজুরি পায় আর মালিক শ্রমিককে কাজ করিয়ে মুনাফা অর্জন করে। কার্ল মার্কস হিসাব করে দেখিয়েছিলেন, শ্রমিকের মজুরি যত কম দেবে এবং যত বেশি সময় কাজ করাবে, মালিকের মুনাফা ততই বড়বে। তাই আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলনে যে লাখো শ্রমিক ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল তারা চেয়েছিল এমন মজুরি যেন তাদের বাধ্য হয়ে ওভারটাইম পরিশ্রম করতে না হয়। সে যেন মানসম্পন্ন জীবনযাপন করতে পারে, সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারে, অসুখে চিকিৎসা, মাথা গোঁজার ঠাঁই নির্মাণ, বৃদ্ধ বয়সে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারে। ন্যায্য মজুরি না পেলে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও শ্রমিকের জীবনে স্বস্তি আসবে না। মাস শেষে মজুরি পেতে না পেতেই বাড়ি ভাড়া, দোকানের বাকি পরিশোধ করতে না করতেই আবার দেনায় জর্জরিত হয় শ্রমিক। যেহেতু শ্রমিককে শোষণ করেই মালিকের মুনাফা হয় তাই শোষণমূলক ব্যবস্থা বহাল রেখে ন্যায্য মজুরি আদায় করা সম্ভব হবে না। তাই ন্যায্য মজুরি আন্দোলন আর শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম একসাথেই করতে হবে।
সমাবেশ থেকে কাজ, ন্যায্য মজুরি ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শ্রমজীবী কার্ড প্রবর্তন করে শ্রমিকদের আর্মিরেটে রেশন ও বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করা, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার প্রতিষ্ঠা, শ্রম আইনের অগণতান্ত্রিক ধারা বাতিল করা, অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিলের নামে অধিকার হরণের অপচেষ্টা বন্ধ করার দাবি জানান হয়।