মুরাদ হোসেন : বিনোদপুর বাজারের মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টারের কর্মচারি হিরণের তৈরি ফাইটার প্লেট আকাশে ওড়ে। ৪২ ইঞ্চি দৈর্ঘের খেলনা প্লেন আকাশে উড়িয়ে সে এলাকার সকলকেই তাক লাগিয়ে দিয়েছে। হিরণ মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর মোল্যাপাড়ার মৃত আবুল খায়েরের ছেলে।
তথ্যপ্রযুক্তির জোয়ারে ভাসছে বিশ্ব। নিত্যনতুন আবিস্কার সৃষ্টি করছে বিস্ময়। বাংলাদেশও তার থেকে পিছিয়ে নেই। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করছে নানা রকমের জিনিসপত্র, তাদের আবিস্কার দিয়ে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে দেশ বিদেশের মানুষকে। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে পিছিয়ে নেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের লেখাপড়া না জানা হিরণ।
মাগুরার মহম্মদপুরে খেলনা প্লেন তৈরী করে আকাশে উড়িয়ে এলাকাবাসী নজর কেড়েছে লেখাপড়া না জানা প্রত্যন্ত অঞ্চলের যুবক মো. হিরণ। সে খেলনা হিসেবে জেটফাইটার বিমান ও প্লেন তৈরী করে আকাশে উড়িয়েছে এবং স্পিডবোট তৈরী করে পানিতে চালাতে সক্ষম হয়েছে। যার কন্ট্রোল করা হয় রিমোট দিয়ে। হিরণ উপজেলার বিনোদপুরের মোল্যাপাড়া এলাকার এক অসহায় দিনমুজুর পরিবারের ছেলে।
হিরণ অভাব অনাটনের সংসারে থেকেও লেখাপড়ার পাশাপাশি অনেক স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে উঠা আলো ঝলমলে সদা হাস্যোজ্জ্বল যুবক। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াকালিন সময়ে ২০১৩ সালে দিনমুজুর পিতা আবুল খায়ের মারা যান। মা তাসলিমা বেগম ও দুই ভাইয়ের অভাবি সংসারের হাল ধরতে আর লেখাপড়া করতে পারেনি সে। দুই ভাইয়ের মধ্যে হিরণ ছোট।
অভাবি সংসারের চাহিদা মেটাতে এবং দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের জন্য শিশুকাল থেকেই ভ্যান চালানো, গ্যাস লাইট মেরামত ও গ্যাস ভরাসহ নানা ধরণের কাজ করতে হয়েছে। তার আয় উপার্জনে বড় ভাই এসএসসি পাশ করে ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকুরি নিয়েছিল। করোনার কারণে বেকার হয়ে বাড়ী ফিরে এসেছে। হিরণের আয়ে এখন চলছে চার সদস্য পরিবারের সংসার। তবে তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে পিছিয়ে নেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের লেখাপড়া না জানা হিরণ।
আঠারো বছর বয়সী আলো ঝলমলে সদা হাস্যোজ্জ্বল হিরণ বিনোদপুর বাজারে এনামুলের মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টারে বেতনভুক্ত সামান্য একজন কর্মচারী। মাসিক বেতন ৪ হাজার টাকা। কিন্তু হিরণের তুখোড় মস্তিষ্ক থেমে থাকেনি কখনও। মেধাবী হিরণ মনের আনন্দেই খেলনা হিসেবেই তৈরী করেছে ৪২ ইঞ্চি দৈর্ঘ ও ২৯ ইঞ্চি প্রস্তর দুইটা প্লেন, দুইটা জেটফাইটার বিমান ও দুইটা স্পিডবোট।
খেলনা হলেও প্লেন ও বিমান আকাশে উড়তে সক্ষম। অনেক গতিতে চারিদিকে দুই কিলোমিটার ঘুরে আসতে পারে এই প্লেন ও বিমান এবং স্পিডবোট ও পানিতে চলতে পারে। যার কন্ট্রোল করা হয় রিমোট দিয়ে। ব্যাটারীর চার্জ কমে গেলে একটা সংকেত দেয়, যার ফলে এটাকে হিরণ নামিয়ে আনতে পারে। খেলনা হিসেবে এলাকায় বিক্রয়ের জন্য তৈরী করলেও ব্যায়ভার বেশী হওয়ায় এটা সে বিক্রয় করতে পারেনি।
আট থেকে দশ হাজার টাকা ব্যায় হয় প্লেন-বিমান বা স্পিডবোট এর একটি তৈরী করতে, যা দিনমুজুর হিরণের পক্ষে এটা সম্ভব না। তাই যদি ভালো কোনো পৃষ্টপোষকতা পায় তাহলে হিরণ এটিকে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করতে পারতো বলে তার বিশ্বাস।
বিনোদপুর চৌরাস্তা বাজার বণিক সমিতির সভাপতি হরসিত ঘোষ বলেন, হিরণের বাবা হাট-বাজারে গান গাওয়াসহ বিভিন্ন সময় নানা ধরণের কাজ করে সংসার চালাতো। হিরণ ও রনি লেখাপড়া করতো, ওদের মেধা ভালো ছিল। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরতে গিয়ে লেখাপড়া শিখতে পারেনি। সহযোগিতা পেলে হিরণের মতো মেধাবিরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।