মাগুরা প্রতিদিন : শিক্ষা উপকরণের মূল্যহ্রাস সহ অপরিহার্য শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ।
৩১ জানুয়ারি ২০২৩ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সংগঠনের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তারা কাগজ, বই, খাতাসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণের দাম কমানো; জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২০ বাতিল করা; জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভুক্ত কলেজে বছরে ২১০ দিন ক্লাস, শিক্ষক-আবাসন-পরিবহণ সংকট নিরসনের দাবি জানায়।
মাগুরা সৈয়দ আতর আলী পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট মাগুরা জেলা শাখার সংগঠক গোলাম পারভেজের সভাপতিত্বে সভায় আলোচনা করেন বাম গণতান্ত্রিক জোট মাগুরা জেলার সমন্বয়ক শিক্ষাবিদ কাজী নজরুল ইসলাম ফিরোজ, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি মাগুরা জেলার সদস্য সচিব শিক্ষাবিদ শরীফ তেহরান টুটুল ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ মাগুরা জেলা শাখার আহ্বায়ক প্রকৌশলী শম্পা বসু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লাবনী সুলতানা ও বাসদ মাগুরা জেলা শাখার সদস্য সচিব ভবতোষ বিশ্বাস জয়।
বক্তাগণ বলেন, আমাদের দেশে শিক্ষা সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার। কিন্তু শিক্ষার ব্যয়ভার দিন দিন বেড়েই চলেছে। শিক্ষা হওয়ার কথা ছিল সর্বজনীন বৈষম্যহীন অর্থাৎ সবার জন্য সমান অধিকার। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী শিক্ষাকে অধিকার না, পণ্যে পরিণত করেছে। কে কেমন মানের শিক্ষা পাবে বা আদৌ শিক্ষা পাবে কিনা তা নির্ভর করছে টাকার উপর। “টাকা যার শিক্ষা তার” এই হচ্ছে বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষানীতি। কাগজ, কলম, বই, খাতাসহ সকল শিক্ষা উপকরণের দাম একবছরে দ্বিগুণ বেড়েছে। ইউনেসকোর এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে ব্যয়ের ৭১ শতাংশই বহন করতে হচ্ছে পরিবারগুলোকে। প্রাইভেট পড়ানোর খরচও দিন দিন বাড়ছে। বছরের শুরুতে স্কুলে নিম্ন মানের কাগজে ছাপা ভুলে ভরা বই শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া হয়েছে। সমস্ত কিছু লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতায় পরিনত হয়েছে। আর শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ বানিয়ে দায়িত্বহীনভাবে সিলেবাস ও পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন করা হচ্ছে।
বক্তাগণ বলেন, জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২০ অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের বার্ষিক মূল্যায়নকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ১ম থেকে ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত কোন পরীক্ষাভিত্তিক মূল্যায়ন থাকবে না। ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণিতে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৭০% আর পরীক্ষাভিত্তিক মূল্যায়ন থাকবে ৩০%। এভাবে পর্যায়ক্রমে পরীক্ষাভিত্তিক মূল্যায়ন বাড়ানো হবে। শিখনকালীন মূল্যায়ন করবেন স্কুলের শিক্ষকরা। একটা বড় অংশের নম্বর শিক্ষকদের হাতে থাকায় কোচিং ও টিউশন বাণিজ্য বাড়বে। এই নম্বরের জন্য শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের হাতে জিম্মি হয়ে যাবে।
বক্তাগণ আরও বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে এ সকল অব্যবস্থার মধ্যে মাগুরা জেলায় শিক্ষার মানের বেহাল দশা বিশেষভাবে দেখতে পাওয়া যায়। এই জেলায় কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নেই। জেলার প্রধান প্রধান কলেজে নিয়মিত ক্লাস হয় না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ভুক্ত এইসব কলেজে বছরে ২০০ দিন ক্লাস হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ৭০/৮০ দিন ক্লাস হয়। শিক্ষক সংকট অত্যন্ত তীব্র। কলেজের কোন পরিবহণ ব্যবস্থা নেই। ছাত্রদের জন্য কোন হল নেই। ফলে শিক্ষার্থীদের অনেক খরচ বহন করতে হয়। শিক্ষার্থীরা নিজের পড়াশোনার চেয়েও পার্ট টাইম চাকরি বা টিউশনি করানোর দিকে মনোযোগী হয়ে যায়। যা তার শিক্ষা জীবনকে ব্যাহত করে। শিক্ষাক্ষেত্রে এ সকল সংকট দূর করতে এবং শিক্ষার অধিকার রক্ষার দাবিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।