সুলতানা কাকলি : চলছে বর্ষাকাল। আমাদের বাংলা ষড়ঋতুর মধ্যে আষাঢ়-শ্রাবণ এই দু’টি মাস প্রাণচঞ্চলা ঋতু বর্ষাকাল। এ সময়ে নদ, নদী, খাল, বিল, পুকুর পানিতে হয়ে ওঠে টুই টুম্বুর। নদীর ঘাটে ঘাটে নৌকা বাঁধা ও মাঝিদের হাঁক ডাক এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে।
এই বর্ষাকালে ভরা নদীতে কখনও কখনও বড় বড় মহাজনী নৌকার আনাগোনা দেখা যায়। আগে এই নৌকা বেশি দেখা যেত। সারা বছর মাঝিদের আনাগোনায় নদীপথ মুখরিত না হলেও এই বর্ষাকালে মরা নদী যৌবন প্রাপ্ত হয়ে নদীর প্রাণ যেন ফিরে আসে। জেলে ও মাঝিরা মনের আনন্দে গেয়ে ওঠে গান ” নাও ছাইড়া দে পাল উড়াইয়া দে ছলছলাইয়া চলুক রে নাও মাঝ দইরা দিয়া চলুক মাঝ দইরা দিয়া।” সারা বছর জেলেরা জাল বুনে অপেক্ষা করে এই বর্ষার। এই সময় জেলেদের মাছ ধরার এক ধুম পড়ে যায়।
শুধু তাই না বর্ষাকাল এলে শিশু কিশোররাও বাঁশ ও কলার ভেলা বানিয়ে আনন্দ উপভোগ করে এই সময়ে। ছেলেরা বাড়ির পাশের কাদায় ভরা মাঠে ফুটবল খেলার আনন্দে মেতে ওঠে। খেলা শেষে পরিশ্রান্ত ছেলেরা কাদা মেখে ভুত সেজে দল বেঁধে হৈচৈ করতে করতে পুকুর অথবা নদীতে লাফ দিয়ে ঝাপান খেলায় মত্ত হয়ে ওঠে, তাছাড়াও ওদের মাঝে সাঁতার প্রতিযোগিতা এবং ডুবোডুবি খেলার মাতম ওঠে। এমন কিছু এলাকা থাকে যেখানে নৌকা ছাড়া চলন এর কোনো বাহন থাকে না।
বর্ষা এলে কুটুমবাড়ি বেড়ানোর আনন্দে মেতে ওঠে ঐ এলাকার বাসীন্দারা। বর্ষায় প্রকৃতি নতুন রুপে সাজে অনেক আনন্দ পিপাসু মানুষেরা বের হয় নৌকা বিহারে। শুধু মানব জাতিই না প্রকৃতিও যেন পাল্লা দিয়ে সেজে ওঠে নতুন সাজে।চারিদিকে সবুজের সমারোহ।গাছে গাছে সবুজ পাতা ও ফুলের সমাহার দেখা যায়। কদম ফুল আর বর্ষাকাল মনে হয় হরিহর আত্মা। কদম গাছকে নিয়ে বহুল পরিচিত একটা গান আছে,” প্রাণো সখি রে ঐ শোন কদম্ব তলে বংশী বাজায় কে?” এই সময় মাছেদের প্রজণন মৌসুম। মাছেরা দল বেঁধে মিঠা পানিতে আসে ডিম পাড়তে। নতুন প্রজন্মকে জন্ম দিয়ে ফিরে যায় তাদের নিজ পুরানো আবাসস্থলে।
বর্ষায় একটানা রিমঝিম বৃষ্টি মনে আনে দারুণ ছন্দ। বর্ষাবন্দনা নিয়ে কতোনা মধুর গান রয়েছে। বৃষ্টি মুখর দুপুরে খিচুড়ির সাথে ডিম ভাজা বা ইলিশ মাছ ভাজা,কিংবা গোস্ত ভুনা সাথে রকমারী আচার মুখে অমৃতের স্বাদ এনে দেয়।টিনের চালে টাপুর টুপুর বৃষ্টি পড়ার শব্দ ও প্রকৃতির স্নিগ্ধ হাওয়া রাতে শান্তির ঘুম এনে দেয়।এ বিষয়েও একটি গান আছে “বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এলো বান, শিব ঠাকুরের বিয়ে হবে তিন কন্যা দান।”
বর্ষাকালে মাটির সোঁদা সোঁদা গন্ধ নিঃশ্বাসে নতুন আমেজ এনে দেয়। সব মিলিয়ে বর্ষকাল সবার কাছেই উপভোগ্য। কিন্ত এই করোনাকালে সব যেনো উল্টো গেছে। প্রকৃতির সব আনন্দ যেনো হারিয়ে যেতে বসেছে। আমাদের জীবনে ফিরে আসুক সেই আনন্দ।
সুলতানা কাকলি: লেখিকা, সাবেক গার্লস গাইড