চারিদিকে চকচকে আলো, উপচে পড়া নীল আকাশময়। গভীর নীল আকাশে আনমনে ভেসে বেড়ায় স্বচ্ছ তুলোর মত মেঘ। আলোর বন্যায় ভেসে পৃথিবীর ও থাকে বোধহয় এক দুর্ভেদ্য অরণ্যের মত মন। যবে থেকে অভিমান জমে জমে পৃথিবীর মন ভার হয়, সাদা মেঘ গুলো ধূসর ছাইরঙা থেকে থমথমে কালো হয়ে অপেক্ষায় থাকে অঝোর ধারায় কাঁদবে বলে।জমে থাকা সব দুঃখ, কষ্ট, গ্লানি, জরা ধুয়ে মুছে হালকা করতে উন্মুখ হয়ে থাকে।
আসে বর্ষার আগমনী বার্তা। মেদুর মেঘের দল তখন নব নব রূপে সাজে। প্রকৃতি ভিজে ভিজে সেজে ওঠে,যেন এক স্নিগ্ধ হাস্যজ্জ্বল রমনী।অবগাহন করে এক সজীব বারি ধারায়।কদম বনে মঞ্জরীর উচ্ছ্বাস বইতে শুরু করে। গাছের শাখায় দোল খেতে থাকে ভেজা কদম, কামিনী আর কেয়া ফুলের দল।ময়ুর পেখম তুলে অরণ্যে নেচে যায়।
দেখতে পাচ্ছি প্রকৃতির এমন সময় আসন্ন। বর্ষা যেন এক ছলনাময়ী ঋতু। সে বিরহ জাগায়, বিষাদ ডাকে, উদাস করে আবার মিলনে উন্মুখ করে।এই রোদ, এই মেঘ, এই বৃষ্টি, যেন এক লুকোচুরি খেলা। যা আমাদের মনেও রেখাপাত করে সম তালে। পূর্ণতা পায় প্রকৃতি, হয়ে ওঠে নব যৌবনা।গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহের পর বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতি শীতলতার পরশে হেসে ওঠে। স্নিগ্ধতায় হয় লাবণ্যময়ী রূপসী। স্মৃতির জানালা খুলে যায়।শুনি বরষার রিনিঝিনি নুপুর ধ্বনি। সুর বাজে বুকে, তাল কাটে, মন হয় আনমনা।
কতদিন শুনি নি সোনা ব্যাঙের দলের বর্ষার নতুন পানি তে এক অব্যক্ত আনন্দে সমস্বরে দল বেঁধে সেই অবিরাম ডেকে যাওয়া! আজ এ মেঘলা দিনের আকাশ আমাকে নিয়ে গেল সেই যৌবনের মধুর দিন গুলিতে।আনমনা মন যেন মেঘের সাথে ছুটে যায়।
খুলে দিলাম দখিনের জানালা। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে, খোলা ছাদ ঘেঁষে, এক কামিনী গাছ।আমার আজন্ম সাথী।বেড়ে ওঠার পর থেকেই, তার সাথে আমার সখ্যতা। নিরাভরণ আকাশ টা ধূসর থেকে কালো হলো।শুরু হবে ঝুম বৃষ্টি, বাতাস পৌঁছে দিল সেই বার্তা। শুষ্কতায় তৃষ্ণা নিয়ে, কামিনী দাঁড়িয়ে আছে, বৃষ্টি ভেজা অবগাহনের অপেক্ষায় ।
এল অঝোর ধারায় শ্রাবণ,
মন সুর তোলে গুনগুন।
কামিনী ভিজে হলো একসার,
মনে ঈর্ষা জাগে বারবার।
ভুলে যাই আমি রমণী,
মনে ভর করে এক তরুণী।
গাছ টা যেন ইশারায় ডাকে, গিয়ে দাঁড়ায় তার পাশে। ফুলে ফুলে ছেয়ে যাওয়া গাছ।পাতায় ঘেরা সবুজের মাঝে সাদা ফুল, বৃষ্টির পানি তে মাখামাখি। যেন বরষার ভালবাসায় সিক্ত।
আমি সিক্ত প্রকৃতি, প্রেম, মোহে। ফুলে ভরা সুগন্ধি গাছ, তোলে বিষন্ন ভাল লাগার আবেশ। যেন অনিন্দ্য সুন্দরী রমণী!
এক ঝাঁক মৌমাছি উড়ে এল ফুলে,
ভিজে ভিজে সুর তোলে গুনগুনিয়ে।
শিহরিত কামিনী, উঠে যেন দুলে,
কি কথা বলে যায়, অবিরত কানে কানে,
উচাটন মন, দুলে ওঠে সেই তানে।
গুন্জরিত মৌমাছির উদ্বেলতায়,
আবেশিত বিষন্ন মাতাল মনে,
প্রকৃতির রুপ দেখি, এই বরষায়।
ফুলের কানে মৌমাছির গুন্জরণ, কামিনীর বুকে বাজে, প্রেমের অনুরণন। কামিনী কি বোঝে? কি বলে যায়, কেন বলে যায়, যেন বুঝি তার ভাষা, এক আশা দুরাশায়, দেখি এই বরষায় !
লেখক : অনন্যা হক