সুলতানা কাকলি : বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলাসহ উপজেলা, শহরে-গ্রামে ছড়িয়ে আছে জানা অজানা হাজারো বিদ্যাপীঠ। যাকে আমরা বলি মানুষ গড়ার কারখানা। জীবন গড়ার প্রথম সোপান এই বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের হাত ধরেই গড়ে ওঠে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, ব্যারিস্টার, মন্ত্রী, লেখক, বিজ্ঞানীসহ বিভিন্ন মনিষী। আজ আমরা খুনি করোনার দাবড়ে ঘরবন্দী। দেশের সমস্ত বিদ্যালয় বন্ধ। বিদ্যালয়ে নেই কোনো কোলাহল, নেই ছাত্র,ছাত্রীর কিচিরমিচির আনন্দ উল্লাস। বাংলাদেশের সমস্ত বিদ্যাপীঠ এখন নিথর নিস্তব্ধতায় নিরব কান্নায় জর্জরিত।
আমাদের মাগুরার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত আমাদের মাগুরা সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। এক সময় এখানেই ছিল দশটা থেকে চারটা পর্যন্ত আমাদের পদচারণা। ব্যাগ ঘাড়ে করে স্কুলে আসতাম। সারাদিন ক্লাস, দৌড়াদৌঁড়ি। সেই কবে স্কুল ছেড়েছি। কিন্ত স্কুলতো আমাদের জীবনের বড় এক নস্টালজিয়া। এখনও স্কুলের ড্রেস পরা শিক্ষার্থী দেখলেইতো কৈশরে ফিরে যেত ইচ্ছে করে।
এইতো এই করোনাকালে বিশেষ কাজে প্রিয় স্কুল এর সামনে গিয়ে মনটা খুব বেদনা বিধুরভাবে কেদে উঠলো। দরজা দুটো একটু ফাঁকা দেখেও ভিতরে যতে মন সাই দিল না। সেই কোলাহল মুখর স্কুল প্রাঙ্গণ ছাত্রী বিহীন। দালান গুলো যেন নিরব কান্নায় কাঁদছে। স্কুলের কলের পাড়ে নেই কোনো পানি খাওয়ার পায়তারা। নেই কোনো টিফিন প্রিওডের অপেক্ষা। নেই প্রতি ঘণ্টার ঢং ঢং আওয়াজ। করোনা এসে সব কেড়ে নিয়েছে। এই প্রতিকী চিত্রতো সর্বত্র।
স্কুল গেটে নেই দারোয়ান-এর বসার সেই টুলটি। নেই সেই আইসক্রিমওয়ালা গোপালদার টুনটুন ঘণ্টা বাজিয়ে আইসক্রিম বিক্রি, বাদামওয়ালা, আমড়াওয়ালা, চাক ভাজাওয়ালার গেটের সামনে আগে বসার ব্যস্ততা। সত্যিই এ এক অদ্ভূত সময় পার করছে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা। বাসায় বন্দী হয়ে আসছে আমাদের নতুন প্রজন্ম।
সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেই কবে থেকে বন্ধ হয়ে আছে। নিথর, নিস্তব্ধতায় এভাবে আর কতদিন চলবে তা অজানা।
নিজের স্কুল দেখতে দেখেতে বারবার মনে হয়েছে আবার কবে আনন্দ মুখর হয়ে উঠবে আমাদের প্রিয় বিদ্যাপীঠগুলো? আবার কবে মুখরিত হয়ে উঠবে স্কুল প্রাঙ্গণ ! ঢং ঢং আওয়াজে, ছাত্রীরা দলবদ্ধ হয়ে স্কুল মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে গেয়ে উঠবে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’।
সুলতানা কাকলি: সাবেক গার্লস গাইড