সুলতানা কাকলি : মুসলমান ধর্মের বিশেষ দুটি ধর্মীয় উত্সব ঈদ। একটি হচ্ছে ঈদুল ফিতর অপরটি হচ্ছে ঈদুল আযাহা। কয়েকদিন পরেই আসছে ঈদুল ফিতর। রমজান মাসের সিয়াম সাধনার পর শাওয়াল মাসের চাঁদ উকি দিয়ে ঈদের আনন্দ বার্তা পৌছে দেয় প্রতিটি মুসলমানের ঘরে ঘরে।
রমজানের প্রথম থেকেই শুরু হয়ে যায় কেনাকাটার ধুম। শবে কদরের পর থেকে শুরু হয়ে যায় বাস,ট্রেনের টিকিট কেনার ব্যস্ততা। কর্মস্থল থেকে গ্রামের বাড়ীতে গিয়ে নিজের আত্মীয় স্বজন দের সাথে ঈদের আনন্দটুকু ভাগ করে নেওয়ায় থাকে মুল উদ্দেশ্য।
চাঁদরাত্রি থেকেই শুরু হয়ে যায় ঈদের আনন্দ বিভিন্ন উত্সবের মধ্য দিয়ে। বাড়ির গৃহিণীরা মেতে ওঠেন বিভিন্ন রকমের রান্নার আয়োজনে। বাচ্চাদের মেহেদী পরার আনন্দটুকুও উপভোগ করেন বাড়ির বড়রা। শিশু,কিশোর, যুবা, বৃদ্ধ সবাই একমাস রোজার পর ঈদের দিন নতুন কাপড় পরে ঈদের ময়দানে জামাতে নামাজ পড়ে কোলাকুলি করার আনন্দটুকু উপভোগ করার অপেক্ষায় থাকে। বাচ্চাদের আর একটা পর্ব থাকে যাকে সেলামি বলে। কে কত টাকা পেলো তা নিয়ে চলে জল্পনা কল্পনা। এছাড়াও ওদের মধ্যে আরও একটা আনন্দ থাকে নতুন জামা কাপড় জুতা সেরে রাখার প্রবণতা। ঈদে দিন নামাজের পর চলে আত্মীয় স্বজনের বন্ধু বান্ধবের বাড়িতে আসা যাওয়া কোলাকুলি ও খাওয়াদাওয়া। এই ঈদের দিনেই আত্নীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধবের আসাযাওয়ার মাঝেই তৈরি হয় মিলনের দৃঢ় সেতুবন্ধন। ধনি গরীব প্রতিটি মুসলমান বাড়ির আঙিনার চার পাশে গোস্ত,পোলাও ফিরনির সুবাসে বাতাস হয় মৌ মৌ। এদিনে অন্য ধর্মাবলম্বি বন্ধুদের জন্যও থাকে আপ্যায়নের বিশেষ ব্যাবস্থা। তারাও আমাদের ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়।
ঈদের পর দিন বাড়ির গৃহিণীরা উত্ফুল্ল থাকে বাবার বাড়ি যাবার আনন্দে।
ঈদুল ফিতরের দুমাস পরে আসে ঈদুলআযহা। এ সময় মানুষের আনন্দ হয় অন্যভাবে। আল্লাহ র সন্তষ্টির আসায় যার যার সামর্থ অনুযায়ী লেগে যায় গরু,ছাগল কেনার ধুম। ঈদের দিনে গরু,ছাগল কোরবানি দিয়ে সারাদিন চলে গোস্ত বিলির ব্যস্ততা।
আজ আমরা করোনার কারণে লকডাউনে গৃহবন্দী। ব্যস্ত পৃথিবীর চাকা আজ থমকে আছে, সমস্ত উন্নতি আজ বিপর্যস্ত। চারিদিকে চলছে নিরন্ন মানুষের হাহাকার। অর্থনৈতিক চাকা সচলের আশায় সরকারের সামান্য লকডাউনের শীথীলতায় লক্ষ নরনারীর বিভিন্ন শপিং মলে চলছে কেনাকাটার ভিড়। বিপর্যয়ের এই মুহুর্তে কি দরকার ছিল এতো কেনাকাটার? এরা মনে হয় কেনাকাটার সাথে বিনা মুলো করোনাকে নিয়ে ঘরে ফিরেছে। চৌদ্দদিন পর বোঝা যাবে এর পরিনতি কি? করোনার ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে ১৭ই মে থেকে দেখা যাচ্ছে যে,অসংখ্য মানুষ মৃত্যু ভয়কে উপেক্ষা করে ঢাকা হতে বিভিন্ন জেলায় পায়ে হেঁটে, ট্রাকে ও নানা রকম যানবাহনে চেপে গ্রামে যাচ্ছে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে। কে জানে আগামি কোরবানির ঈদ এদের কজনার ভাগ্যে জুটবে? আজ করোনায় হয়ে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। তাই আসুন আমরা নিজেরাই ঘরোয়া পরিবেশে ঈদের নামাজ আদায় করি। নাইবা হলো হই-হুল্লোড় মুখর ঈদ, নাইবা গেলাম ভাই বাড়ি, বাবার বাড়ি,নাইবা এলো ছেলে বৌমা, নাতিপুতি, নাইবা হলো বন্ধুদের সাথে আনন্দ আড্ডা, নাইবা খেলাম পাশের বাড়ির কালিয়া কোপ্তা, নাইবা খেলো তারা আমাদের বাড়ির কোর্মা পোলাও। সবার হাতে আছে ফোন। হোকনা ঈদের দিন ভিডিও কলে ঈদ আড্ডা। ২০২০ সালে এটাই হয়তো আমাদের বিধির বিধান।
সুলতানা কাকলি: লেখিকা, প্রাক্তন গার্লস গাইড