মাগুুরা প্রতিদিন ডেস্ক : বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও কোভিডা-১৯ তার প্রভাব বিস্তার শুরু করেছে। এমতাবস্থায় এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ বের করতে সারা বিশ্বের মত দেশী ঔষধ কোম্পানিগুলোও নিষ্ঠার সাথে অনবরত কাজ করে যাচ্ছে। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বেশ কিছু ঔষধ এবং ভ্যাক্সিন তৈরি নিয়ে বিশ্বব্যাপী গবেষণা চলছে।
তবে নতুন একটি ঔষধ আবিষ্কার এবং বাজারজাত করা সবসময়েই সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, এর পাশাপাশি গবেষণার খরচ তো রয়েছেই। বিকল্প হিসেবে বিজ্ঞানীরা বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ঔষধের মধ্যে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী ভূমিকা খুঁজে বের করার উপওে জোর দিচ্ছেন। এতে সফল হলে সময়ও যেমন বাঁচবে, পাশাপাশি চিকিৎসার খরচ ও অনেক কমে আসবে।
ইতিমধ্যে একটি ঔষধ বিভিন্ন ছোট পরিসরের গবেষণায় বেশ আশার আলো দেখিয়েছে। সেটা হল হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন। ঔষধটি প্রথমত আবিষ্কৃত হয়েছিল ম্যালেরিয়া রোগের চিকিত্সার জন্য, কিন্তু বর্তমানে ব্যবহার করা হচ্ছে আর্থ্রাইটিস গেস লুপাস এরিথমেটোসাস রোগের চিকিত্সায়।
বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, চায়না এবং আরও বেশ কিছু দেশে প্রাথমিকভাবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিত্সায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন বেশ সফলতা দেখিয়েছে। ঔষধটি বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হাজারো রোগীর জন্য ব্যবহার হচ্ছে।১ এমনকি একজন মার্কিন চিকিত্সক দাবী করেছেন, এ পর্যন্ত ৫০০ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন দ্বারা।২
জাতীয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ) দেশীয় কোম্পানিগুলোকে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন উত্পাদন এবং সংরক্ষণ করতে নির্দেশ দিয়েছে। মাত্র ২ টি দেশী কোম্পানি এই ঔষধটি উত্পাদন এবং বাজারজাত করে। ইনসেপটা ফার্মা এটি বাজারজাত করে আসছে বিগত ১৫ বছর ধরে, যা বাজারে রিকোনিল নামে পরিচিত। মূলত এটিই বাজারে সর্বাধিক প্রচলিত এবং সর্বত্র পাওয়া যায়।
করোনা ভাইরাস মোকাবেলার জন্য প্রণীত ‘ন্যাশনাল গাইডলাইন অন ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট অফ করোনাভাইরাস ডিজিসেস ২০১৯ (কোভিড-১৯) এও বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ রোগীর জন্য হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।৩ বিশ্বের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থাও এই ঔষধটি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকরী বলে মনে করছে। এ কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ইউএসএফডিএ জরুরি ভিত্তিতে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন এর অনুমোদন দিয়েছে।৪ চায়না এবং ফ্রান্সের স্বাস্থ্য সংস্থাও তাদের করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় এই ঔষধটি ব্যবহার করেছে।৫ ইন্ডিয়ান মেডিকেল এসোসিয়েশন করোনা আক্রান্ত রোগীদের পাশাপাশি যারা ক্রমাগত করোনা আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে আসছেন বা সেবা দিচ্ছেন, তাদের জন্যও প্রতিরোধক হিসেবে ঔষধটি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।৬
যেহেতু হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ঔষধটি এখন বিশ্বব্যাপী বৃহত্ পরিসরে করোনা ভাইরাস চিকিত্সায় ব্যবহার হচ্ছে, তাই ভবিষ্যত্ পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে ইনসেপটাও এখন বৃহত্ পরিসরে ঔষধটি তৈরি করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইনসেপটা থেকে এই ঔষধটি আমদানি করতে চাচ্ছে, কিন্তু দেশের স্বার্থ বিবেচনায়, দেশের মানুষের কথা মাথায় রেখে ইনসেপটা বর্তমানে এই ঔষধের রপ্তানি বন্ধ রেখেছে। ইতিমধ্যে দেশের সব ঔষধের দোকানে পর্যাপ্ত পরিমাণে রিকোলিন ট্যাবলেট-এর সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে, যেন দেশের যেকোনো প্রান্তে যেকোনো আক্রান্ত রোগীকে চিকিত্সা দেয়া যায়।
দেশের মানুষের কথা বিবেচনা করে চিকিৎসকের নাগালের মধ্যে রাখার জন্য ইনসেপটা ইতিমধ্যে তেজগাঁও কেন্দ্রীয় ঔষধ সংরক্ষণাগারকে (সিএমএসডি) ৩০ লাখ রিকোনিল ট্যাবলেট সরবরাহ করেছে। এমনকি জাতীয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ) কেও ৩ লাখ রিকোনিল ট্যাবলেট বিনামুল্যে হস্তান্তর করেছে। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার, রিকোনিল ট্যাবলেট অনেক আগে থেকেই ব্রিটিশ স্বাস্থ্য সংস্থা (ইউকে এমএইচআরএ) অনুমোদিত এবং ইনসেপটা বিগত অনেক বছর ধরেই এটি ব্রিটেনে রপ্তানি করে আসছে।
শুধু তাই না, ইনসেপটা অতিদ্রুত আরও কিছু ঔষধ যেমন ফ্যাভিপাইরাভির, রিটোনাভির/লুপিনাভির কম্বিনেশন বাজারজাত করতে যাচ্ছে। এছাড়াও ইনসেপ্টা রেমিডিসিভিরসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ঔষধ আনার চেষ্টা করছে। এসব ঔষধ করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিষেধক হিসেবে সফলতার সাথে কাজ করবে বলে আশা করছেন গবেষকরা। কোভিডা-১৯ এর কারণে এমন একটি সংকটময় মুহূর্তে উন্নত দেশগুলোসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন ঔষধের স্বল্পতায় ভুগছে, তখন স্বস্তির বিষয় হচ্ছে যে বাংলাদেশে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন এর মত একটি ঔষধ পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে, যা কিনা যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য চিকিৎসকদের কাজে আসতে পারে। এটি নিঃসন্দেহে দেশের জন্য একটি সুসংবাদ।
[ এ বিষয়ে আরও জানার থাকলে প্রয়োজনে কথা বলতে হবে ফার্মাসিস্ট মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, ইনসেপ্টা ফার্মা, সেল: ০১৭১৩০৯০৪২৭ ]
প্রেরক: জাহিদ রহমান, মিডিয়া কনসালটেন্ট, ইনসেপ্টা ফার্মা, সেল নং ০১৯২১১৬১৬৮৭
References: