মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : মাগুরার শ্রীপুরে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে নদীতে ঝাপিয়ে পড়ার পর বুধবার সকালে আওয়ামীলীগ নেতা আমিরুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। খুলনা থেকে আসা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল প্রায় আধঘন্টা তল্লাশি চালিয়ে কুমার নদীর তলদেশ থেকে লাশটি উদ্ধার করে। এ সময় মৃতদেহের মাথায় ও চোখে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায় বলে জানা গেছে।
বুধবার সকালে নদী থেকে মৃতদেহটি উদ্ধারের পর ময়না তদন্তের জন্যে মর্গে পাঠানো হয়। এছাড়া নিহতের পরিবারের অভিযোগ এবং কর্তব্যে অবহেলার দায়ে ডিবি পুলিশের এসআই ওলিয়ার রহমান এবং কনস্টেবল বুলবুলকে ক্লোজ করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনার তদন্তে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে মাগুরা ডিবি পুলিশের একটি দল শ্রীপুর উপজেলার হাট শ্রীকোল বাজারে যায়। এ সময় শ্রীকোল ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আমিরুল ইসলাম ওই বাজারের মদনের চায়ের দোকানে বসেছিল। কিন্তু বাজারে হঠাত্ পুলিশের উপস্থিতি দেখে সে দৌঁড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ডিবি পুলিশের এসআই ওলিয়ার রহমান এবং কনস্টেবল বুলবুল তাকে ধাওয়া করলে আমিরুল কুমার নদীতে নেমে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
প্রত্যক্ষদর্শিরা জানায়, আমিরুল নদী সাঁতরে কিছুদূর যাওয়ার পর তাকে উদ্ধারের জন্যে সাহায্য চায়। কিন্তু এসআই ওলিয়ার তাকে উদ্ধারের কোন চেষ্টা করেনি। উপরোন্তু প্রদীপ নামে একজন মাঝি নৌকা নিয়ে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করলে এসআই ওলিয়ার তাকে ফিরিয়ে দেন। পরে তিনি মাঝির কাছ থেকে নৌকা নিয়ে আমিরুলের মাথায় বৈঠা দিয়ে আঘাত করেন। এ ঘটনার পর থেকেই আমিরুল নিখোঁজ ছিল। পরে খুলনায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলকে খবর দেয়া হলে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় তারা নদী থেকে লাশটি উদ্ধার করে।
এদিকে লাশ উদ্ধারের পর এলাকায় নিহত আওয়ামীলীগ নেতা আমিরুলের স্বজন এবং সমর্থকেরা শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান এবং ডিবি এসআই ওলিয়ারের বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করে।
এ সময় নিহতের বড়ভাই বাহারুল মোল্যা আমিরুলের মৃত্যুর ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ১০ জুন তারিখে আধিপত্য বিস্তারের ঘটনা নিয়ে শ্রীকোল গ্রামে দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এদিন পুলিশের উপর হামলার অভিযোগ এনে শ্রীপুর থানার ওসি মাহবুবুর রহমান আমার ভাই আমিরুলসহ ২১৮ জনের নামে মামলা দায়ের করে। শেষ পর্যন্ত প্রতিপক্ষ গ্রুপের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে পুলিশ আমিরুলকে ধাওয়া করে নদীর মধ্যে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।
মাগুরা পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ রেজোয়ান বলেন, প্রাথমিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত এসআই ওলিয়ার এবং কনস্টেবল বুলবুলকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। এছাড়া লাশ উদ্ধারের পর মর্গে পাঠানো হয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষার পরই তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
শ্রীপুরের হাটশ্রীকোল গ্রামের শামছুল মোল্যার ছেলে আওয়ামীলীগ নেতা আমিরুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলামকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ রেজোয়ান।