আজ, মঙ্গলবার | ১৮ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | দুপুর ১২:৫৩


কৃষ্ণচূড়া যে পথ এঁকেছিলে, হয়নি সে পথে চলা…. অনন্যা হক

অনন্যা হক : পথ কেন এমন করে ডাকো আমায়? হাঁটছি বহু দিন ধরে। যেমন হেঁটে যাচ্ছি, জীবনের পথে, তেমনই হেঁটে চলেছি পৃথিবীর পথে।

পৃথিবীর এমন সুন্দর, মসৃণ পথ দেখলেই আমাকে টানে। কিন্তু হেঁটেছি সেই ছোট বেলা থেকে, বহু জায়গার বহু রকমারি পথে। সব পথ যেন টুকরো টুকরো ভাবে, আমার স্মৃতির পাতায় এঁকে বসে আছে ।

জানি সে সব পথে হাঁটা হবে না, হয়তো আর কখনও, কিন্তু আমি আমার কল্পনাতে হাঁটতে ভালবাসি । কখনও শুকনো সাদা মাটির পথে। কখনও কর্দমাক্ত, শ্যাওলা জমা পিচ্ছিল পথে ।

ঘাসের বুক চিরে যাওয়া, সাদা মাটির সরু পথে। সবুজ ক্ষেতের পাশ ঘেঁষে যাওয়া আল ধরেও হেঁটেছি । ঠিক এমনি করে জীবনের পথেও হেঁটেছি, হেঁটে যাচ্ছি। কখনও ফুল ঝরে থাকা সবুজ ঘাসের উপর দিয়ে । কখনও শুকনো পাতা পড়ে থাকা, ধুলি ওড়ানো পথে।খানা খন্দ, ইট পাটকেলের এবড়োখেবড়ো পথেও হেঁটেছি । ছোট বেলায় এমন পথ দেখলে ভয় পেতাম না । যেমন করেই হোক, হেঁটে, লাফিয়ে, ডিঙিয়ে, তবুও এই পথ পাড়ি দিতাম। তখন ভাবিনি, জীবনের কোন ধাপে এলে এমন পথ থাকবে। জীবনের এমন পথে কিন্তু হাঁটতে আমরা,কেউ চাই না। কিন্তু হাঁটতে হয়, জীবন আমাদের কাউকে ছাড়ে না,হাঁটিয়ে ছাড়ে।খালের উপর দিয়ে বাঁশ বাঁধা পথেও হেঁটেছি কখনও, দুলতে দুলতে । কত মজা পেয়েছি তখন। কিন্তু জীবনের পথের এক ফোটা দুলুনি,মনটা বিষাদে ঘিরে ফেলে।

এই ফুল ঝরে থাকা সুন্দর মসৃণ পথ আমাকে তীব্র আকর্ষণে ডাকে। ঠিক এমনি করেই ডাকে, সৌন্দর্যে ভরা মসৃণ জীবন চলার পথ। এই অবুঝ মন মরিয়া হয়ে থাকে, সুন্দরের খোঁজে । কিন্তু অবুঝ জীবন খড়্গ হাতে এসে দাঁড়ায়। মসৃণ পথ কে দুর্গম করে দিতে পারে এক নিমিষেই। পথই যেন শিখিয়ে দিল, এমনই তো জীবনের খেলা। তুমি যতই সুন্দরে ব্যাকুল হও না কেন, তোমাকে অসুন্দরেও হাঁটতে হবে। এক বাড়ি ভরা মানুষের মাঝে থেকেছি, এখনও থাকি আপন লোকের সাথে। কিন্তু আমি তখনও দেখেছি,এখনও দেখি, সেই কোন পথে যখন একাকী হেঁটে চলি, মনে হয় আমি কারো কেউ নই, কোথাও আমার কেউ নেই।

একদম অচেনা আমি, যেন নিজের কাছেও। যদিও পিছুটান রয়ে যায় হাজারো। কত মায়া মাখা মুখ রেখে আসি ভিন্ন ভিন্ন ঠিকানায়। সবাই একা হয়ে যায় কিন্তু মন বেঁধে রয় মনে মনে, যেন একের মাঝে কয় বসতি! যদি ভাবি যাচ্ছি কোথায় জানিনা, অসীম মায়া বুকে ভর করে। পেছনে আদরের মুখ ,মায়ায় মেখে ডাকতে থাকে।কিন্তু একদিন তো এমনই যাব অচেনা কোথায়। কত দিন, কার কতটুকু মনের গহীনে বসতি গেড়ে থাকবো আমি সে তো অজানাই থেকে যাবে,নাকি জানবো কখনও। পথের আছে একটা আলাদা নেশা। পথে বের হওয়ার সাথে একটা সংসার বিহীন অনুভূতি জেঁকে বসে মনে।

সংসার সে তো মায়ার খেলা আর পথ হলো আজন্ম নেশা! এ নেশা একসময় তীব্র হতে থাকে, দেখতে ইচ্ছে করে,জানতে ইচ্ছে করে অজানা অচেনা কে।তবুও জানা হয় না পৃথিবীর পথ, জানা হয়ে ওঠে না কখনও জীবনের পথ। চোখের সামনে একটা সীমানা আঁকা থাকা, সীমানা টা ধরতে গেলে আবার সীমানা এসে দাঁড়ায়। হাঁটা হয় পৃথিবীর সব পথে, সামনে সব অজানা কে রেখে আমরা অসীম শূন্যে বিলীন হয়ে যায়।

ঐ যে সুদূরে পথ মিশেছে আকাশের সীমানায়, পেঁজা তুলোর সাদা মেঘ ভাসে আশ্বিনের আলোয়, মন পড়ে রয় শতেক মনে, এক ঠিকানা পিছে ফেলে ছুটি অন্য ঠিকানায়। কাকে রাখি কাকে বাঁধি, পথ কে করি আপন সাথী,যেন ছুটছি সীমানায়! এমন করে পথে বেরোলেই,পথই মনে করিয়ে দেয় সেই অতি পুরনো কথা বার বার — আমি এসেছি একা কোন অজানা থেকে, যেতে হবেও একা কোন অচেনা গন্তব্যে ! পথই আমাকে মনে করিয়ে দেয়, এই পৃথিবী একটা মায়ারই খেলাঘর !!

লেখক : অনন্যা হক

শেয়ার করুন...




©All rights reserved Magura Protidin. 2018-2022
IT & Technical Support : BS Technology