ব্যথার পরে ব্যথা সাজিয়ে জীবন জুড়ে যেন এক ধাঁধার প্রাচীর।
এই প্রাচীর টপকে হেঁটে চলেছি এক সীমানা অভিমুখে।সীমানার ওপাশে অপেক্ষমান এক রহস্যময়ী ঠিকানা।
জীবনকাল ধরে অনেকটা পথ হেঁটে এলাম।এ জীবনে সুখের কোন বড়াই নেই।তুচ্ছ তুচ্ছ সুখ বড় বড় ব্যথার মাঝে পথ হারিয়ে গুমরে কেঁদে ওঠে।
দুপুরের ঢলে পড়া নরম রোদে আমার কৈশোর থেকে উড়ে আসা এক ঝরা পাতা দখিনা জানালার শার্শিতে ছুঁয়ে গেল আজ।মন যেন পুরোনো স্মৃতির বিষন্নতায় ছটফট করে ওঠে।এক অবিরাম ঝড়ো হাওয়া ঝড় তুলে পথ হারায়।
বুকের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা প্রজাপতি গুলো নানা রঙের আলপনাতে রেঙেছিল একদিন।
অসম্ভব স্বপ্নময় ছিল সে দিনগুলো।
জীবন ধীরে ধীরে ধূসরতার দিকে এগোতে থাকে।বাস্তবতার বেড়াজালে আষ্ঠেপৃষ্টে বেঁধে কোমল অবয়ব কঠিনে গ্রাস করে।
কঠিনের এই আবরণের অন্তস্হলে চোরাবালির বুদবুদে আচ্ছন্ন হয়ে যায়।না যায় ভাসা, না যায় ডোবা।
মৃত্যু চিরন্তন।পৃথিবী তে মৃত্যুর থেকে সত্যি কিছু নেই।একমাত্র স্মৃতিই আমাদেরকে মৃত্যুর বিপরীতে পরিচালিত করে।
জানা হয় না পৃথিবী কে,জানা হয় না মানুষ কে,জানা হয় না নিজেকে,জানা যায় না জন্ম, মৃত্যুর রহস্য কে।এক অপার রহস্যে
মন কে বেঁধে রেখে আমরা একে একে বিদায় নিয়ে চলে যাই।
জীবনের বাঁকে বাঁকে এই নেই নেই বিয়োগের ব্যাথা যোগ হতে হতে আমরা পৌঢ়ত্বের দিকে এগোতে থাকি।প্রাণ থাকতেও জড় বস্তুর শামিল হতে হয়।অস্তিত্ব হারানো এক অপরিসীম বেদনা গ্রাস করে মনে।
যৌবনে একদিন দেখেছিলাম,জোছনা মেখে ঘুমিয়েছিল চাঁদের বুকে এক গুচ্ছ মেঘ।জানালা ভেদে ঢুকতো কত বৃষ্টি হয়ে আলোর কণা।এক পা যেতেই আর এক পা অজানা শিহরণে থমকে দাঁড়িয়েছে।অপেক্ষারা রঙ বদলিয়ে পথের বাঁকে বাঁকে কল্পকথার মোড় ঘুরিয়েছে।
স্মৃতির রঙিন সুতো ধরে বারবার জীবন কে ফিরে পেতে চাই আমরা।কিন্তু ফিরে আসে কি শৈশব, কৈশোর, যৌবনের জীবনের অতলে তলিয়ে যাওয়া সেই সুখ, সেই আনন্দ?
ব্যাথার পর ব্যাথা সাজিয়ে জীবন হয় এক ধাঁধার প্রাচীর।পারিনা টপকাতে।
ফিরে আসে না কিছু।
রঙিন সুতো ধূসর হয়,
স্মৃতি রা সব ঝাপসা হয়,
আসবে বলে ঘুমের ঘোরে বেলা ফুরায়,
জানালা ভেদে দিনের আলো কখন যেন আঁধারে ছায়।
ঘুম ভেঙে সে প্রজাপতি বিষাদ মনে পথ যে হারায়,
ব্যথার পরে ব্যাথা গেঁথে আমরা সবাই জীবন সাজাই।