অনন্যা হক : জীবন এক প্রবহমান নদী।
এক আর্তচিৎকারের মধ্য দিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়ে আলোর মুখ দেখে শুরু হয় জীবনের আস্বাদ গ্রহণ। এই অকূল দরিয়ার পৃথিবীতে অসংখ্য নদী অবিরাম বয়ে চলে সাগরের মোহনাতে মিলিয়ে যাওয়ার নেশায়। কূলে কূলে বাঁধা থাকে জীবন তরী।গুটি গুটি পায়ে সেই জীবন তরী তে আরোহণ করি আমরা।জীবন তরীর বৈঠা হাতে শুরু হয় বয়ে চলা।
নদীর নেশা সমুদ্রের মোহনা।বয়ে চলতে চলতে কত নদী অকালে শুকিয়ে পথ হারায় বা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। নদীর বুকে চর জেগে ওঠে তার অস্তিত্ব নিয়ে, যুগ যুগ ধরে বয়ে চলা পানির বালি, পলি, মাটি জমে জমে। বিলীন হয়ে যায় কুলকুল ধ্বনিতে বয়ে যাওয়া স্রোতরাশি। আবার কখনও ধ্বংসাত্নক স্রোতের ধাক্কায় পাড় ভেঙে যায় এক নিমিষেই। চলতে থাকে পাড় ভাঙা গড়ার খেলা।
জীবনের মাঝে লুকিয়ে থাকে এক মন,ঠিক যেন নদীর পাড়ের মত।মনেও চলতে থাকে অবিরত এক ভাঙা গড়ার খেলা।
মন ভাঙে, মন গড়ে।চলতে থাকে উজান ভাটির স্রোতের মত টানাপোড়েন অহর্নিশ। জীবনের মোহনার থাকে না কোন দিক্বিদিক। সামনে থাকে কত অজানা, অচেনা, অলক্ষ্য অস্হির মোহনা, দাঁড়িয়ে থাকে অপার রহস্যের মত।যেগুলো ছুঁয়ে যেতে যেতে এক সময় সামনে অপেক্ষা করতে থাকে সমুদ্রের মত এক স্হির মোহনা। জীবন এক প্রবহমান নদী। বেয়ে যেতে হয় উজানেও, ভাটিতেও। নদীটা কখনও শান্ত, উপরে নীল আকাশ, সাদা মেঘ, মন কাড়া ছন্দের ঢেউয়ের এক মসৃণ জলরাশি। নদীটা কখনও খরস্রোতা, উথালপাতাল, এলোপাথাড়ি, ছন্দহীন ঢেউয়ের প্রবহমান। ভয় নেই, বৈঠা থামালে চলবে না, একটু পরেই শান্ত হবে।
কখনও সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জনও শুনতে পাবে, কখনওবা এই ঢেউ গায়ে এসে পড়বে। অনেক রকম উপলব্ধি, আবেগ, অনুভূতি, এই ঢেউয়ের সাথে,পাল্টে যেতে থাকবে। কূল নেই, কিনারা নেই, হয়তো ভেসে যাবে, নাহলে খড়কুটো ধরে ভাসতে ভাসতে, কোন একটা কূলে ঠিকই পৌঁছে যাবে। হয়তো চেনা অথবা অচেনা। আমরা জীবন নদীর মাঝি।আমি, তুমি, সে, সবাই। কূলের শেষ জানিনা,শুরু জানিনা। কখনও অর্থপূর্ণ, কখনও বা অর্থহীন। প্রবহমান নদী যেমনই হোক, সবাই যেন নিজের বৈঠা নিজেই, বেয়ে পৌঁছে যেতে পারি, সেই অজানা, অচেনা কূলে।