মাগুরা প্রতিদিনের সম্মানীত পাঠকদের জন্যে কবি ও সাহিত্যিক অনন্যা হক এবার লিখেছেন-ঝরে যাওয়া গল্প শুনি।
বরাবরের মতোই তিনি তার কবিতায় সুনিপুনভাবে তুলে ধরেছেন প্রকৃতি ও প্রেমের সুন্দর অবয়ব।
ঝরে যাওয়া গল্প শুনি
-অনন্যা হকের কবিতা
সন্ধ্যা নেমে এলেই আমি নিজের কাছে এসে
বসি,বিদায়ের ঘন্টাধ্বনি বাতাসে প্রকম্পিত হয়,
পাখিদের আওয়াজ মৃদু হয়ে আসে।
সন্ধ্যা নেমে এলেই মায়াবী আঁধারের ঘোরে আলোয় প্রস্ফুটিত সত্তা
ধোঁয়াশার চাদরে ঢেকে নিস্তব্ধ রাতের
মতো একা হয়ে যায়।
এতদিনের জীবনের জমা খরচের হিসাব সন্ধ্যা আকাশে কেমন অবলীলায় বিলীন হয়ে যায়।
আমি আমাকেই হেঁটে যেতে দেখি,
আমাকেই হেঁটে যেতে দেখি আঁধার ভেদ করে
তোমার সাথে,নিয়ন বাতির আলোয় এক
কল্পলোকের স্বপ্নরাঙা মধুরতায়।
যে কথা আজ বলতে পারি না,
যে প্রেমকে স্পর্শ করতে পারি না,
যে স্বপ্নগুলো আজ অধরা,
কেমন করে এসে বুকের মধ্যে জড় হয়,
ঐ যে সন্ধ্যা আকাশের তারার মতো
ধীরে ধীরে প্রজ্জ্বলিত হয়ে আবার অস্ফুট হয়।
হিমেল হাওয়ার পরশে
অহর্নিশ স্মৃতির পাখিরা ডানা ঝাপটায়,
উন্মুখ হয়ে থাকি যে সুন্দরের জন্য,
আঁধারের পথ বেয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে,
আমি খিলখিল করে হেসে উঠি এক
চপলা যুবতীর মতো,
এক সহজ নারীর মতো।
এই তো বসে আছি,মনোহারিণী হেমন্তের রাতে স্নিগ্ধ চাঁদের আলোয় সিক্ত হয়ে,
শিশিরের টুপটাপ শব্দ ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যায় আঙিনার জোছনালোকে।
এক রাতের অতিথি পারিজাত শিউলি সবুজ পাতার উপরে শিশির মেখে ভিজে বসে থাকে,
আমি সুগন্ধি বাতাস মেখে তার ঝরে যাওয়া
গল্প শুনি।
এই তো এখনও রাতের গন্ধরাজের সুবাস মেখে দাঁড়িয়ে থাকি
খোলা ছাদের প্রান্তে এসে তোমার হেঁটে চলার পথের দিকে চেয়ে।
আমি চপলা যুবতীর মতো,
সহজ নারীর মতো,
এক প্রগাঢ় প্রেমে জীবনের কাছে নত হই,
আমি বারবার এই আমি,সেই আমিতে
একাকার হয়ে যাই!