মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : অবৈধ অনুপ্রবেশকারি হিসেবে আটক ভারতের ঝাড়খণ্ডের বৃহস্পতি পন্ডিত গত ৩ বছর ধরে মাগুরা কারাগারে পড়ে আছে। স্থানীয় আদালতের দেয়া ৬ মাসের কারাদণ্ড ভোগের পরও সে ফিরতে পারছে না তার দেশে।
ঝাড়খন্ড প্রদেশের ভারপুর জেলার মানুষ বৃহস্পতি পন্ডিত। বাবরি চুলে কৃষ্ণকায় পেটা শরীরের মানুষটির নেই কোনো পাসপোর্ট। ধার ধারেনি সরকারি ভিসার। রাষ্ট্রের সীমানা পেরিয়ে ঢুকে পড়েছে এই দেশে। ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছে গেছে মাগুরাতেও। কিন্তু কেউ বোঝেনা তার ভাষা। তাই রোহিঙ্গা সন্দেহে উত্সাহি এলাকাবাসি পুলিশে তুলে দেয় তাকে। ঘটনাটি ২০১৭ সালের ১৩ নভেম্বরের।
এরই মধ্যে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। স্থানীয় আদালত বাংলাদেশ কন্ট্রোল অ্যাক্ট আইনে অবৈধ অনুপ্রবেশকারি হিসেবে ২০১৮ সালের ২৮ মে তাকে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়। কিন্তু তার আগেই সাড়ে ৬ মাসের কারাবাস শেষ হয়েছে। এদিকে আদালতের রায় প্রদানের পর আরও ত্রিশ মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু বৃহস্পতি পন্ডিত ফিরতে পারেনি তার গ্রামে।
মাগুরা জেলা কারাগার সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতি ঝাড়খণ্ডের ভারপুর জেলার কাচুয়া থানার ধানরে গ্রামের পুটি পন্ডিতের ছেলে বলে পুলিশের কাছে তার পরিচয় দেয়। সাজার মেয়াদ শেষ হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তার বিষয়টি ভারতীয় দূতাবাসকে জানানো হয়েছিলো। যার প্রেক্ষিতে গত বছরের ২৭ ফেব্রæয়ারি থাঙসিং মাং নামে একজন ডিপ্লোম্যাট এবং দীপক দেবনাথ নামে একজন সহকারি কনসুলার মাগুরা কারাগারে বৃহস্পতি পন্ডিতের সঙ্গে দেখা করে ফিরে যায়। এরপর চলে গেছে প্রায় একটি বছর। বৃহস্পতির কারাবাস ক্রমেই দীর্ঘ থেকে হচ্ছে আরও দীর্ঘতর।
মাগুরা কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কারা কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, গত তিন বছরের মধ্যেই একবারই তার জ¦র হয়েছিলো। তখন সে স্বাভাবিক খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেয়। কিন্ত জেলা কারা কর্মকর্তা তায়েফ উদ্দিন তার জন্যে অতিরিক্ত খাবার বরাদ্দ করেন। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হলেও ভিনদেশি হওয়ায় তার সঙ্গে সকলেই ভালো আচরণ করে থাকে। বেশ সুঠামদেহি বৃহস্পতি বেশ নরম ও হাসিখুশি মনের মানুষ। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই একা একা থাকতে পছন্দ করেন।
তবে বৃহস্পতি মুখে কিছু শব্দ উচ্চারণ করলেও তার সবই দূর্বোধ্য। প্রচলিত হিন্দি নয়। যে কারণে কারও সঙ্গেই তার ভালো ভাব গড়ে ওঠেনি বলেও তিনি জানান।
মাগুরা কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত তত্ত¡াবধায়ক মাগুরা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার সাদ্দাম হোসেন জানান, ভারতীয় দূতাবাসকে বিষয়টি অবহিত করার পরও তারা এই ব্যক্তিকে ফিরিয়ে নেয়নি। অথচ তাকে কারাগার থেকে বের করেও দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট দূতাবাসকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা প্রয়োজন।