মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : সারাদেশে নারী, শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা বন্ধের দাবি নিয়ে সোমবার সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম মাগুরায় মানববন্ধন সমাবেশ করেছে।
নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসের ২৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে সকাল ১১ টায় চৌরঙ্গী মোড়ে মাগুরা জেলা প্রেসক্লাবের সামনে তারা এই মানববন্ধন সমাবেশ করে।
সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী শম্পা বসুর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মাগুরা জেলা করোনা দুর্যোগ মোকাবিলায় গণকমিটির আহ্বায়ক মহব্বত আলী, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের মাগুরা জেলা সদস্য ভবতোষ বিশ্বাস জয়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের শহর কমিটির আহ্বায়ক মোঃ সোহেল ।
বক্তাগণ ২৪ বছর আগে দিনাজপুরের দিনমজুরের ১৪ বছরের মেয়ে ইয়াসমিনের উপর নির্যাতনের প্রসঙ্গে উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন।
মহিলা ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী শম্পা বসু বলেন, ইয়াসমিন গৃহকর্মী হিসেবে ঢাকায় কাজ করতো। মায়ের অসুখের কথা জানতে পেরে ঢাকা থেকে বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ২৩ আগস্ট বিকালে বাসে ওঠে ইয়াসমিন । কিন্তু ভুল গাড়িতে উঠেছিল সে। রাত সাড়ে ৩টায় দিনাজপুরের উপজেলা দশমাইলে তাকে নামিয়ে দেয় বাসটি । ছোট বাসস্ট্যান্ডে কিছুক্ষণ পর টহল পুলিশের গাড়ি আসে। বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ইয়াসমিনকে গাড়িতে তুলে নেয় । কিছুদূর যাওয়ার পর গণধর্ষণ করে নৃশংসভাবে হত্যা করে ইয়াসমিনের ক্ষতবিক্ষত লাশ পাশের জঙ্গলে ফেলে চলে যায় ।
পরদিন ইয়াসমিনের লাশ পেয়ে বিচারের দাবিতে জনতা পুলিশ ফাঁড়ি ঘেড়াও করে। পুলিশ গুলি চালায় জনতার মিছিলে । ৭ জন মানুষ প্রাণ দেন বোন হত্যার বিচারের দাবিতে । আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে।
তিনি জানান, এই আন্দোলনের কারণেই নতুন আইন প্রণীত হয়। আইনে ধর্ষক ও খুনি পুলিশের শাস্তি সুনির্দিষ্ট হয়। ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যাকারী পুলিশদের ফাঁসি কার্যকর হয় । জনতার আন্দোলনের বিজয় রচিত হয় । এরপর থেকে ২৪ আগস্ট নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে ।
শম্পা বসু বলেন, ইয়াসমিন হত্যার পর কেটে গেছে ২৪টি বছর । নারীর প্রতি সহিংসতা বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে । এই করোনা মহামারির মধ্যে নারী নির্যাতন বেড়েছে ভয়াবহভাবে; নির্যাতনের ধরনও বেড়েছে ।
সমাবেশ থেকে কেরানীগঞ্জে ত্রাণ দেওয়ার কথা বলে বাড়িতে ডেকে নিয়ে ১০ বছরের কন্যাশিশু ধর্ষণ, টাঙ্গাইলে করোনা রোগী তল্লাশির নামে কিশোরী মেয়েকে অপহরণ করে গণধর্ষণ, ফেনীতে ফেসবুকে লাইভ করে স্ত্রীকে হত্যা, কক্সবাজারে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গরু চুরির অপবাদ দিয়ে মা ও মেয়েকে কোমড়ে দড়ি বেঁধে লাঞ্ছিত করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ এবং হত্যার ঘটনা বন্ধের দাবি জানানোর পাশাপাশি প্রতিরোধে সকলকে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয় ।