আজ, শনিবার | ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | রাত ৮:৩২

ব্রেকিং নিউজ :
মাগুরার হাজীপুর সম্মিলনী ডিগ্রি কলেজের রজতজয়ন্তী উদযাপন ক্রীড়ালেখক হিসেবে সম্মাননা পেলেন মাগুরার জাহিদ রহমান মাগুরা জেলা বিএনপির নতুন কমিটিকে ছাত্রদলের অভিনন্দন মাগুরা জেলা বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণা মাগুরার রওশন ট্রাস্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার পদে নিয়োগ দিচ্ছে মাগুরায় বিএনপি সহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে মুক্ত দিবস পালন মাগুরার দারিয়াপুর কলেজ পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপির দু’ গ্রুপে ব্যাপক সংঘর্ষ গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানের অব্যাহতিতে মহম্মদপুরে আনন্দ মিছিল মাগুরার আঠারোখাদা গ্রামে ছেলের ছুরির আঘাতে বৃদ্ধ বাবা খুন মাগুরায় বাংলাদেশের আলো পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা বার্ষিকী উদযাপন

নারী নির্যাতন বন্ধ হোক চিরতরে-অনন্যা হক

অনন্যা হক : সহমরণ বন্ধ হয়েছিল এক সময় কারো মনে মানবিকতার উদয় হলে। তার আগ পর্যন্ত চলতো এই বর্বরতার চরম নিষ্ঠুরতম খেলা। বিধবা বিবাহ চালু হয়েছিল একসময়। তখনও কারো মনে জন্মেছিলো মানবিকতা, হৃদয়হীন সমাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে নারীর কষ্ট নিজের করে বুঝতে শিখেছিলো কিছু মানুষ।

নারীদেরকে তখন জন্তু, জানোয়ারের মতো এবং শুধু মাত্র ভোগ্য পণ্য হিসেবে গণ্য করা হতো। একই মানুষ, শুধু শারীরিক গঠনে ভিন্ন বইতো আর কিছু না। মানুষের মধ্যে কতটা পশু প্রবৃত্তি থাকলে, এসব বর্বরতা করা সম্ভব!

অন্দরমহলে নারীদের অব্যাহত লড়াই তো ছিলই আর কিছু গভীর অনুভূতি সম্পন্ন, সাহসী,মানবিক আলোকিত পুরুষ এগিয়ে আসার কারণে, এসব বর্বরতা থেকে বেরিয়ে আসার পথ তৈরি হয়। হয়তো কিছু অন্ধকারে আলো ঢুকেছে, তাই বলে কি সব অন্ধকার ঘুচে গিয়েছে? তা কিন্তু নয়।

এরই আলোকে এই লেখাটা। সেটা হলো, নারীর উপর শারীরিক নির্যাতন। এখনও ঘরে ঘরে অন্দরমহলে, নিম্নবিত্তে তো অহরহ,মধ্যবিত্ত,উচ্চবিত্ত সব মহলে, মহিলাদের উপর,বহু শারীরিক নির্যাতনের নজির আছে।

যে গুলো মহিলারা একেবারে নিরুপায় না হলে, পারতপক্ষে গোচরে আনে না কিন্তু অগোচরে বেশি দিন ঢেকেও থাকে না।

কিন্তু এসবের পাশে দাঁড়ানোর কাউকে পাওয়া যায় না, খুব কাছের পরিজনকেও অনেক সময় না। পরিবারের সহমর্মিতার অভাব নইলে ঘর ভেঙে যাবার ভয়ে অনেকেই সয়ে যায় জীবনভর। যেন এসব একটা মামুলি ব্যাপার, একেবারে নারী দের যার যার ব্যক্তিগত কষ্ট!

এই শারীরিক নির্যাতনটা একেবারেই একপাক্ষিক  ভাবে চালু রয়ে গেছে। এই ব্যাপারটা, একটা চরম অপমান এবং অসন্মানের। এর সাথে শারীরিক কষ্ট তো আছেই, তার থেকে বেশী আছে মানসিক কষ্ট।

সংসার শুরু করে, দুজন মানুষ দুজনের সমান প্রয়োজনে। এখানে দুজনেরই স্বার্থ জড়িত আছে।কেউ কারো দাসী না, গলগ্রহ না,অধীন না। সংসার করতে গেলে মতবিরোধ হবে,পছন্দ অপছন্দের বিষয় আসবেই । মানুষের রাগ প্রকাশ করার অনেক রকম পদ্ধতি থাকে। কিন্তু কারো গায়ে হাত দেয়ার অধিকার কিন্তু কেউ কাউকে দেয় না।পুরুষেরা যেন একাই এই অধিকার অর্জন করে বসে থাকে। এটা আসলে শক্তি প্রদর্শনের বিষয় থেকে মানসিকতার এক ধরনের প্রতিফলন বলা যায়।

এমন অনেক কাজ আছে,যা পুরুষেরা করে যায়, যে গুলো কিনা স্ত্রীর অনেক মনোকষ্টের কারণ হয়ে থাকে, তখন তো কোন স্ত্রী ভুলেও তার স্বামীকে শারীরিক অত্যাচার করার কথা ভাবে না। তাহলে পুরুষের মধ্যে এই প্রবণতা কেন? এটা কি বউকে অধীন, কেনা গোলাম, নাকি ব্যাক্তিগত সম্পদ মনে করার কারণে? আর সংসারটা কোন শক্তি প্রদর্শনের ময়দান নয়। এই আচরণ হোল,সম্পূর্ণ ভুল এবং বিকার গ্রস্ত মানসিকতা। মানুষের মতবিরোধ সব সম্পর্কের ক্ষেত্রেই হতে পারে, হয়। তাহলে স্ত্রীর ক্ষেত্রে  এসে এই নির্যাতন কেন? এটা কি পৌরুষত্ব দেখানোর অপচেষ্টা? এগুলো হোল এক ধরনের চারিত্রিক দুর্বলতা। জোর করে বশে আনার চেষ্টা অথবা পশু প্রবৃত্তির প্রকাশ। যে সব স্ত্রীরা এমন নির্যাতনের শিকার হয়, এর পরেও তাদের ঐ স্বামী বেচারার প্রতি,কতটুকু শ্রদ্ধা, ভক্তি, ভালবাসা অবশিষ্ট থাকার কথা? দেখা যায়, এসবের পরেও তারা ঘরে শান্তি, সুখ সবই আশা করে। কি অসীম শক্তির আধার এই নারীরা, যে দেখা যায়, সব থাকা সত্বেও, শুধু সংসার, মায়া, সম্পর্কের মোহে, এসব নীরবে সহ্য করে যায়। নিম্নবিত্তদের ঘরে এটা তো দৈনন্দিন চিত্র ।

যতগুলো বুয়া রেখেছি, খোঁজ নিয়ে দেখেছি তাদের জীবনের। তারা নিজেরাই আয় করে, বর অনেক সময় কাজে যায় ইচ্ছে হলে, অথবা যায় না, যা ইচ্ছে তাই করে ,জুয়া খেলে, নেশা করে ঘরে এসে, অহেতুক বিবাদ করে বউ পেটায়। সেই বউগুলোকেই পরদিন কাজ ঠেকাতে বাসা বাড়িতে কাজে আসতে হয় গায়ে গতরে ব্যাথা নিয়ে।

আবার তারা সেই স্বামীকেই ভালবাসে, যত্ন করে, মঙ্গল কামনা করে তার। এমন নারীদের কাছে, সমাজ, পৃথিবী, তথাপি এই পুরুষদের ঋণের কোন শেষ নেই। এখন এই যুগে অনেকে অবশ্য এমন সম্পর্কের সুতো ছিঁড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, সংসার ভাঙ্গার দায় শুধু মাত্র নিজের কাঁধে নিয়ে।তাদের প্রতি থাকবে আমাদের সবার ভালবাসা এবং আশীর্বাদ, আবার নতুন জীবনে ঘুরে দাঁড়াবার জন্য এবং বর্বরতার সাহসী প্রতিবাদের জন্য।

অত্যাচার করে শুধু মাত্র পশুত্বের নিবৃত্তি হয়, কিন্তু কোন মানুষকে জয় করা যায় না। সে এক সময় শেকল ছিঁড়বেই, অন্তত মনের শেকল। তখন এই সংসার একটা নরকে পরিণত হয়। সব মানুষ তো এক সময় স্বর্গে যেতে চায়, শান্তিতে থাকতে চায়, তাহলে পৃথিবীর জীবন এমন নরকে পরিণত করা কেন?

এসব নরকে অনেক সময় মৃত্যুও সংঘটিত হতে পারে, হয়ও। কারণ মানুষ তখন পশু হয়ে যায়। এসব ব্যবহার এর কি ব্যাখ্যা কে দিতে পারবে? অথচ আমি দেখি, সংসারের যে কোন জড় বস্তু তেও মানুষের কত মায়া,তার গায়ে একটা আঁচড় কাটতেও সবার কত দ্বিধা। কোন জীবন্ত মানুষের মূল্য, মায়া নিশ্চয় জড়ের থেকে বেশী? ঠিক অত্যাচারিত ব্যাক্তির জায়গায়  অবশ্যই যে কেউ নিজেকে ফেলে, বারবার ভেবে দেখা উচিত।

একটা পরিচ্ছন্ন, সুন্দর, নির্মল জীবন সবার কাম্য। মনে রাখা উচিত, এই পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষ এক একটা আলাদা সত্বা।

তাই অধীন ভেবে বশে আনা বা জয় করতে চাওয়া অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ। এই পৈশাচিক মনোবৃত্তির কি অবসান হওয়া উচিত। এর একটা জবাবদিহিতা অবশ্যই জরুরী। সমাজের বুক থেকে চিরতরে যে কোন কাউকে এই শারীরিক নির্যাতন বন্ধ করার ব্যবস্থা করা উচিত আইন করে।
অনন্যা হক: কবি, লেখিকা

শেয়ার করুন...




©All rights reserved Magura Protidin. 2018-2022
IT & Technical Support : BS Technology