সুলতানা কাকলি: সুখ-দুঃখ,আনন্দ-বেদনার দোলাচলে খুব সরবে চৌদিকে মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে চলে গেলো ২০২১ সাল। আর আমরা ফের অথবা প্রকৃতির
নিয়মের কারণে বরণ করে নিলাম নতুন বছর ২০২২। বিদায়ী বছরের দিন লিপির খাতার পাতায় হিসেব নিকেশের সাধারণ বিশ্লষণে, কী পেলাম অথবা কি হারালাম, কিংবা একজন মানুষ হিসেবে পরিবার সমাজ, দেশকে কী দিলাম? এটা ভাবতে বসলে কখনও মনের মাঝে সুখের বসত গড়ি, আবার কখনও দুঃখের ভেলায় চড়ে সাগর পাড়ি দিই।
অনেক সুখ দুঃখের মাঝে অতিক্রান্ত হয়েছে ২০২১সাল। ব্যক্তিগত ভাবে হারিয়েছি অনেক আত্মীয় ও পরিচিত জনকে। জাতি, দেশ হারিয়েছে অনেক সূর্য সন্তানদের।শিল্পী, সাহিত্যক, বুদ্ধিজীবি, সমাজসেবী, সাংসদ, প্রথিতযশাদের হারিয়ে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, কোনদিন তেমন ভাবে পূর্ণতা হবেনা হয়তো। তাদের বিদায়ের ক্ষণে ঝরেছে চোখের অশ্রু, হয়েছে বেদনায় মুহ্যমান। তার মাঝেও আবার তাঁদের শুন্য স্থানে জন্ম নিয়েছে অনেক নতুন শিশু। তাদের আগমনী চিৎকারে ভরে উঠেছে আকাশ-বাতাস, আনন্দে ভরেছে মানুষের মন। হয়তো তারাও একদিন বড় হয়ে এই জাতি ও দেশকে দুহাত ভরে দেবে প্রতিদান।
গত বছর আমার যাপিত জীবনের সকল সুখ ও রঙিন ভুবনের পাশাপাশি, অনেক দুঃখের ও কষ্টের সাগরে কেঁদে বুক ভাসাতে হয়েছে । বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে অকস্মাৎ হারাতে হয়েছে। সবচেয়ে বড় কষ্ট বুকের মাঝে অহরও হাতুড়ি মারে, যা স্মৃতিতে রইবে চির কাল অমলিন। আমার একমাত্র সন্তানের শল্য চিকিৎসার সময়ে স্কয়ার হাসপাতালে উপস্থিত হতে পারিনি, করোনার ভয়াল আগ্রাসনের কারণে।
শুধু ঘরে জায়নামাজে
বসে নামাজ পড়েছি
আর আল্লাহর কাছে
তার জন্য দোয়া প্রার্থনা করেছি। সবচেয়ে খুশির বিষয় এখন আমি পুরোপুরি নামাজী হয়ে গেছি।
ভাবনার অতলে হারিয়ে কখনও খুঁজে
পাই মুক্তো অথবা ঝিনুকের সুখ। কখনও
শুন্য হাতে, শুন্য মনে অন্তঃসারশূন্যতার প্রলেপে ভাসাই বুক।
গত বছরে কেউ বেঁধেছে জীবন চলার সুখের কাব্য। কেউবা আবার নিয়তির খেলায় ভেঙেছে জীবনের ওই সুখের কাব্য। ঘর ভাঙার যন্ত্রণায় বুকে তাদের দুঃখের মাতম। সেই মাতম লাঘব করার আছে কোন মলম?
২০২১ সালে করোনার করাল গ্রাসের থাবায় ঝরেছে
অনেক প্রাণ। সমগ্র পৃথিবী জুড়েই অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে মানুষ করেছে অসম যুদ্ধ। জীবন, রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ব্যহত হলেও থমকে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকেনি। ঠিকই কোমর শক্ত করে সভ্যতার, উন্নয়নের বিকাশ সাধনে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে।
করোনায় মানুষ প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে কিভাবে বাঁচতে হয়, তা সহজেই শিখে নিয়েছে। পৃথিবী খানিকটা পিছিয়ে গেলেও ক্ষতি কী? আমরা যে আশরাফুল মাখলুকাত। সৃষ্টির সেরা জীব। সব কিছু আমরা করবো জয় একদিন….!
শোনা যাচ্ছে, করোনা নতুন চেহারায় ওমিক্রন রুপে বিভিন্ন দেশে আবার আঘাত হানছে। এখন আর মানুষ ভীত নয়। নিশ্চয়২০২২ সালে করোনাকে সমূলে মানুষ করবে বিনাশ। করোনাকে পিছে হটিয়ে আবার আমরা স্বাভাবিক জীবনে ঘুরে দাড়াবো, আবার বন্ধু, আত্মীয়, শুভাকাঙ্ক্ষীরা মিলে মিশে নির্ভয়ে দূরে কোথাও দল বেঁধে বেড়াতে বেরুবো। আর যখন সংসার জীবনে একটু মনটা হাফিয়ে উঠবে তখন কয়েকজন বন্ধু মিলে রত্ন ভাই কিংবা হাসানের চায়ের দোকানে কোনো অলস সন্ধা গুলতানি মেরে কাটিয়ে দেবো।
মুরুব্বীরা বলেন,”যে দিন যায় তা আগামী দিনের তুলনায় ভালই যায় “হত্যা, ধর্ষন, দূর্নীতিরাজনৈতিক অস্থিরতা র মাঝেও, সমাজ জীবনে শান্তির সুবাতাস গায় মেখে, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না মিলিয়ে একুশ সালটা আমরা নিরুপদ্রবে পার করেছি।
আমাদের কাছে ২০২১’এর কী প্রত্যাশা ছিলো তা জানিনা, তবে সমগ্র পৃথিবীর কাছ এই সালটা ছিলো সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সব দিক হতে চ্যালেঞ্জিং। বড় বড় পরাশক্তির পতন, নতুন শক্তির আগমন, পরাধীনতার শৃংখল হতে কোন কোন দেশকে মুক্ত হতে দেখেছি। আমাদের দেশেও সরকারী- অসরকারী সংস্থা মিলে সরকারের লক্ষ্য পূরণে আশাবাদী ও দৃড় অবস্থান। পরিশেষে, অতীতের ভুল হতে শিক্ষা নিয়ে, ২০২১ এর বিদায়ের ব্যথা বুকে ধারন করে জরা, খরা, দারিদ্রতা, বৈষম্য, পারষ্পরিক দ্বন্দ্ব ভুলে ভবিষ্যত সুন্দর জীবনের প্রত্যাশায় ২০২২ সালকে স্বাগত জানাই।
লেখক : সুলতানা কাকলি : প্রাক্তণ গার্ল গাইড