মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : খরায় পুড়ছে মাঠ। জিকে খালেও নেই পানি। সরকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে প্রতি বছর জিকে সেচ প্রকল্পের খাল রক্ষণাবেক্ষণের নামে কোটি টাকা ব্যয় করলেও কোনো সুফল পাচ্ছে না কৃষকরা। বরং পানি সরবরাহে অব্যবস্থাপনার কারণে এ অঞ্চলে বোরো ধানের আবাদ কমতে কমতে একেবারেই তলানীতে এসে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় কৃষকদের দাবি, গত তিন দশকের মধ্যে শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের অধীন পরিচালিত খালগুলোতে কখনও পানি পাওয়া যায়নি। অথচ প্রতি বছর খাল সংস্কার এবং সেচ প্রকল্পের বিভিন্ন অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের নামে কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। যার সুফল পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ভোগ করলেও শুভঙ্করের ফাঁকে পড়ছেন কৃষকরা। তথ্যমতে, ১৯৫৪ সালের দিকে মাগুরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা এবং কুষ্টিয়া এই চার জেলায় উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদের জন্যে গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু গত তিন দশকে শুষ্ক মৌসুমে মাগুরায় প্রকল্পের আওতাধীন খালগুলোতে পানির সরবরাহ নিশ্চিত হয়নি। যে কারণে দিনে দিনে ওইসব এলাকায় ফসল আবাদের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে ধানের আবাদ থেকে একেবারেই সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯০ সালের দিকে শ্রীপুর উপজেলায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হতো। কিন্তু এখন মাত্র ৭০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে। জিকে সেচ প্রকল্প থাকার কারণে এখানে উচ্চ ফলনশীল ধানের আবাদ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ার কথা থাকলেও ফলাফল হয়েছে একেবারেই বিপরীত। শ্রীপুর উপজেলার বাখেরা গ্রামের বিদ্যুৎ বিশ্বাস বলেন, ওয়াপদা প্রতি বছর খালে মাটি কাটে। কিন্তু কোনো দিনই পানি আসতে দেখলাম না। পানি পাওয়া যায় সেই বর্ষাকালে-যখন দরকার হয় না। মাশালিয়া গ্রামের কৃষক মাজেদুল শেখ বলেন, এক সময় খালে পানি থাকত, সেচ দিয়ে ধান চাষ করতাম। ধানের পর করতাম পাট। কিন্তু এখন পানি পাওয়া যায় না বলে ধানের আবাদ বাদ দিয়েছি। সেখানে পেঁয়াজ চাষ করছি।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সালমা জাহান নিপা বলেন, পানির অপ্রাপ্ততার কারণে এ অঞ্চলে চাষাবাদের প্যাটার্নই বদলে গেছে। দিনে দিনে ধানের আবাদ কমে যাচ্ছে। সরকার বোরো আবাদে প্রণোদনা দিলেও স্থানীয় কৃষকরা সেটি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জিকে খালের অধীন মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায় এস-১১ কে, ১২কে এবং ১৩ কে খালের মোট দৈর্ঘ্য ৫৩ কিলোমিটার। এই তিনটি খালের অধীনে ১৬৫ মিটার টারসিয়ারি খালি রয়েছে। আর খাল এবং পার্শ্ববর্তী জমিতে পানির প্রবাহ নিশ্চিতকরণে কেবল মাগুরার অংশে ৪৮৮টি ছোটবড় অবকাঠামো রয়েছে। এসব অবকাঠামো এবং খালের তলদেশ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকার প্রতিবছর মাগুরায় দেড় থেকে দুই কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে থাকে। চলতি বছরও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ১৭টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ওই অর্থ ব্যয় করা হলেও এবারও পানি পেল না কৃষক।
মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, জিকে খালের ভাটির অংশে মাগুরার অবস্থান হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে শুরুতেই পানি পাওয়া যায় না। তবে গড়াই নদীতে অতিরিক্ত একটি পাম্প স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে কৃষকদের সমস্যা কমে আসবে।