আজ, সোমবার | ২রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | দুপুর ২:৪৩

ব্রেকিং নিউজ :
মাগুরার আঠারোখাদা গ্রামে ছেলের ছুরির আঘাতে বৃদ্ধ বাবা খুন মাগুরায় বাংলাদেশের আলো পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা বার্ষিকী উদযাপন মাগুরা জেলা যুবদল সভাপতি সম্পাদককে বহিস্কারের দাবি মাগুরায় ছাই কারখানা অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন মাগুরায় গণপ্রকৌশল দিবস এবং আইডিইবি’র ৫৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন মাগুরায় বাংলাদেশ কংগ্রেসের জেলা কমিটির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত শ্রীপুরে গাঁজা সেবনের দায়ে এক যুবককে কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত শ্রীপুরে নবান্ন উৎসব মাগুরায় চাঁদাবাজী-সন্ত্রাসী মামলায় রিয়া জোয়ারদার জেল হাজতে ছাত্র আন্দোলনে নিহত সোহানের কবর জিয়ারত করলেন মাগুরার ডিসি

বঙ্গবন্ধুর দৃঢ়তার নেপথ্যে বেগম ফজিলাতুন্নেছা

মাহবুব হাসান : ৮ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিনী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনে যার অসামান্য অবদান। যার সহযোগিতায় তিনি ‘শেখ মুজিব’ হয়ে উঠেছিলেন ‘বঙ্গবন্ধু’। পরবর্তীতে জাতির জনক নিজে যেমন তার সহধর্মিনীর অবদানের স্বীকৃতি দিয়েছেন, তেমনি তাদের বড় সন্তান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার বিভিন্ন বক্তব্যে কিছু কিছু উদাহরণ তুলে ধরেছেন। রাজনীতির সূত্রে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের সান্নিধ্যে আসা নেতাকর্মীরাও তার অবদানের কথা তুলে ধরেছেন। নেপথ্য থেকে বেগম মুজিবের দৃঢ়তা ও সংগ্রামের কথা উঠে এসেছে তাদের বক্তব্যে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম দুই সংগঠক নূরে আলম সিদ্দিকী এবং তোফায়েল আহমদ বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে তাদের সেই সময়ের কিছু স্মৃতি ভাগাভাগি করেছেন।

ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, ডাকসুর ভিপি এবং রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সচিব হিসেবে কাজ করার সুবাদে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে খুব কাছে থেকে দেখেছেন সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমদ। তিনি বেগম মুজিবকে বর্ণনা করেন একজন ‘মহিয়সী নারী’ হিসেবে। তোফায়েল আহমদ  বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ-বঙ্গবন্ধু যেমন সমার্থক, তেমনি বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা ছিলেন সমার্থক। জীবনে-মরণে তারা ছিলেন একে অপরের পরিপূরক।’

তিনি বলেন, ‘বেগম মুজিব সবসময় বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন, সেটা হোক সুখে, হোক দুঃখে। সংগ্রামমুখর রাজনৈতিক জীবন বা ঝুঁকিমূলক কোনও কাজে তাকে বাধা দেননি, বরং পাশে পাড়িয়েছেন ভরসা আর আশ্রয় হয়ে। জাতির জনক জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছেন আর পরিবার সামলেছেন বেগম মুজিব। কিন্তু কোনও দুঃখবোধ বা অভিযোগ তার ছিল না।’

তোফায়েল আহমেদ জানান, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব থাকাকালে তিনি প্রতিদিন সকালে তাদের বাসায় যেতেন, সেখান থেকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সচিবালয়ে যেতেন, সচিবালয় থেকে ৩২ নম্বর হয়ে বাসায় ফিরতেন। কোনোদিন বেগম মুজিবের মুখ হাসি-ছাড়া দেখেননি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি একটি ঘটনা বর্ণনা করেন এভাবে যে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু কারাগরে গেলে তত্কালীন বিখ্যাত আইনজীবী সালাম খানের কাছে জামিনের জন্য যান বেগম মুজিব। তাকে মামলার কাগজপত্র দেওয়ার পর সালাম খান বলেন, ‘কাগজপত্র দিলেন, আর তো কিছু দিলেন না। তখন বেগম মুজিব বলেন- আমি সেটা দিতে বিব্রতবোধ করছি, গাজী গোলাম মোস্তফাকে পাঠাবো। পরে নিজের গহনা বিক্রি করে সে টাকা গাজী গোলাম মোস্তফার মাধ্যমে সালাম খানের পাঠান বেগম মুজিব।’

বেগম মুজিবের সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত স্মৃতি উল্লেখ করতে গিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বাবার মৃত্যুর পর ঢাকায় ফিরলে বেগম মুজিব যে ভালোবাসা আর দরদ দিয়ে তাকে শান্ত্বনা দিয়েছিলেন, তা জীবনে ভুলবার নয়।’ তার এলাকার থানায় ফোন করে ডেকে নিয়ে দুই ছেলের বিয়েতে তার অনুপস্থিতিতে শুন্যতা অনুভব করবেন বলে বঙ্গবন্ধু ও বেগম মুজিব তাকে যে কমপ্লিমেন্ট দিয়েছিলেন তা তোফায়েল আহমেদ তার জীবনের অন্যতম মূল্যবান স্মৃতি বলে উল্লেখ করেন।

মুক্তিযুদ্ধের আরেক সংগঠক নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘১৯৬৯ সাল থেকেই সময়  উত্তাল হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যেমন তখন বার বার বা একাধারে অনেক দিন জেলে থাকতে হয়েছে, তার সঙ্গীদের অবস্থাও ছিল তাই।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল স্বায়ত্বশাসন থেকে স্বাধিকার, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার পথ পরিক্রমণের। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে ধানমণ্ডি-৩২ নম্বরে যেতাম পেছনের পাঁচিল টপকে। আমি অধিকাংশ দিনই মাথায় হুলিয়া নিয়ে সেখানে যেতাম। ভাবি (বেগম মুজিব) সাদরে ও স্নেহের সঙ্গে অভ্যর্থনা জানাতেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা থাকলে তা নিখুঁতভাবে বুঝিয়ে দিতেন। মুজিব ভাই জেলে থাকার কারণে আর আমাদের গ্রেফতারের হুলিয়া থাকায় তার কাছে গিয়ে অনেক বিষয় আলোচনা করার সুযোগ হতো না। তখন ৩২ নম্বরে গিয়ে বেগম মুজিবের সঙ্গে আলোচনা করতাম। তিনি বুদ্ধিদীপ্ত পরামর্শ দিতেন।’

ছাত্রলীগের সাবেক এই সভাপতি বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে বর্ণনা করেন এভাবে যে, ‘আটপৌঢ়ে সাধারণ বাঙালি গৃহবধূ কিন্তু তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন, ধৈর্যশীল, সংগ্রামী এবং স্নেহ-ভালোবাসার আধার।’ বেজম মুজিবের কাছ থেকে মাতৃতুল্য স্নেহ পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।

বেগম মুজিবকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু তার কারাগারের রোজনামচায় অসংখ্যবার উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে এক জায়গায় তিনি লেখেন, ”’সংসারের কথা, ছেলেমেয়ের লেখাপড়া, আব্বা আম্মার শরীরের অবস্থা আলোচনা করতে করতে চলে যায়। কোম্পানি আজও আমার প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা দেয় নাই, তাই একটু অসুবিধা হতে চলেছে বলে রেণু বলল। ডিসেম্বর মাসে আমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছি- চার মাস হয়ে গেলো, আজও টাকা দিলো না। আমি বললাম, ‘জেল থেকে টেলিগ্রাম করবো। প্রথমে যদি না দেয়, তবে অন্য পন্থা অবলম্বন করবো। আমার টাকা তাদের দিতেই হবে। কোনোমতে চালাইয়া নিয়ে যাও। বাড়ির থেকে চাউল আসবে, নিজের বাড়ি, ব্যাঙ্কেও কিছু টাকা আছে, বছর খানেক ভালোভাবেই চলবে, তারপর দেখা যাবে। আমার যথেষ্ট বন্ধু আছে যারা কিছু টাকা ধার দিতে কৃপণতা করবে না। যদি বেশি অসুবিধা হয়, নিজের বাড়ি ভাড়া দিয়ে ছোট একটা বাড়ি ভাড়া করে নেবো।’ রেণু বললো, ‘চিন্তা তোমার করতে হবে না।’ সত্যই আমি কোনোদিন চিন্তা বাইরেও করতাম না, সংসারের ধার আমি খুব কমই ধারি।”

শেয়ার করুন...




©All rights reserved Magura Protidin. 2018-2022
IT & Technical Support : BS Technology