শেখ যাহিদ ফুয়াদ : হ্যালো, এটা কি ৯৯৯? পুলিশ তুমি কি শুনছো? আমি যে বড় বিপদে পড়ে গেছি!
বেলা বোস ফোনটি অনেক দেরিতে রিসিভ করলেও ন্যাশনাল হেল্প-ডেস্ক- এর ৯৯৯ নম্বর থেকে কিন্তু সাথে সাথেই শুনতে পাবেন, “কিভাবে সহযোগিতা করতে পারি?”
কোনও সহায়তা চাইলে তারা লোকেশন সার্চ দেন, তারপর সবচেয়ে কাছে যে থানা সেটায় খবর দেন , আবার অ্যাম্বুলেন্স চাইলে নিকটস্থ সার্ভিসের খবর দেন। আগুন লাগলে কোথাও সবচেয়ে কাছের ফায়ার স্টেশনের খবর জানান।
বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করা হলে প্রশিক্ষিত পুলিশ সদস্যরা জরুরি ফায়ার সার্ভিস বা পুলিশ কিংবা এ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদানকারীর সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেন।
নাগরিকদের জরুরি সেবা দিতে ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছে আড়াই বছর আগে প্রবর্তিত বাংলাদেশ পুলিশের জরুরি সেবা ৯৯৯। আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত জরুরি সেবার হেল্পলাইন নম্বর ৯৯৯-এ দেড় কোটি ফোন কল রিসিভ হয়েছে। আক্রান্ত নারী কিংবা প্রভাবশালীদের কবলে পড়া পুরোনো গাছ উদ্ধারে ভূমিকা রেখেছে ৯৯৯, আশপাশ থেকে সচেতন নাগরিকদের ফোন পেয়ে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করেছে। আবার উঁচু দালানের কার্নিশে আটকে পড়া বিড়াল সহ ৯৯৯-এ ফোন করে ফায়ার সার্ভিসের সাহায্য নিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে বেশ কয়েকটি প্রাণীকেও। গত আড়াই বছেরে ৯৯৯ সেবায় বলার মতো আরও অনেক গল্প তৈরি হয়েছে।
গত বছরের এপ্রিলে ৯৯৯ মাদারীপুরের একজনের কল পান যে, স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি শহরের ডিসির ব্রিজ এলাকায় সড়ক ও জনপথের জায়গার একটি পুরোনো কড়ইগাছ কাটতে শুরু করেছেন। ৯৯৯ এর পুলিশ নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে তার কলটি মাদারীপুর সদর থানায় ট্রান্সফার করা হয়। তার অভিযোগ শুনে সদর থানার পুলিশ গিয়ে গাছটি রক্ষা করে।
স্বামীর মারধরে পাশের ফ্ল্যাটে আশ্রয় নিয়েছিলেন এক নারী। তাতেও নিস্তার মেলেনি। সেই ফ্ল্যাটের দরজায় গিয়েও ধাক্কা দিচ্ছিলেন স্বামী। রূঢ়ভাবে বাসায় ফিরে আসতে বলছিলেন। আবারও মারধরের শিকার হতে পারেন এমন আশঙ্কায় পুলিশের দ্বারস্থ হন ওই নারী। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯–এ ফোন দিলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
কদিন আগের ঘটনা৷ মোহাম্মদপুরের এক পরিবারের সদস্যরা ঢাকার বাইরে পটুয়াখালী চলে গেছেন৷ বাসায় ছিলেন বিবাহিত বড় ভাই৷ তার দাম্পত্য কলহ ছিল৷ তিনি রাত সাড়ে ১২টার দিকে পটুয়াখালীতে তার বোনকে ফোন করে জানান, ‘‘আমি আত্মহত্যা করছি৷ এছাড়া আরা কোনো উপায় নেই৷” ঢাকার বাসায় আর কেউ ছিলেন না যে তার পরিবারের সদস্যরা পটুয়াখালী থেকে ফোন করে কিছু একটা করতে বলবেন৷ ঢাকায় তেমন কোনো আত্মীয় স্বজনও ছিলেন না৷ তারপর ৯৯৯-এ ফোন৷ মাত্র ছয় মিনিটে পুলিশ পৌঁছে যায় মোহাম্মদপুরের বাসায়৷ তাকে উদ্ধার করা হয়৷ জীবন রক্ষা পায়৷ বোনের অনুরোধে বোন ঢাকা না আসা পর্যন্ত তার ভাইকে পুলিশের কাছে রাখা হয়৷
দুর্ঘটনায় সহায়তা, বাল্যবিবাহ রোধ, ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের গ্রেপ্তার, গৃহকর্মী নির্যাতন রোধ, পারিবারিক নির্যাতন বন্ধ ইত্যাদিতে ৯৯৯-এ তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছেন লাখো মানুষ। ৯৯৯-এ ফোন করে ঝামেলা এড়িয়ে সহজে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন জরুরি সেবা পেয়েছেন মানুষ।
ফোনকলের পরিসংখ্যান এবং বিভিন্ন ব্যতিক্রম ঘটনা সংরক্ষণ করে ৯৯৯। কয়েকটি ঘটনার ক্ষেত্রে ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশকে বিপাকেও পড়তে হয়েছে। কোন এক এপ্রিলের রাত সাড়ে ১২টায় ধানমন্ডি থেকে এক প্রতিবেশী ফোন করে জানান, তার পাশের ফ্ল্যাটে স্ত্রীকে মারধর করছেন স্বামী। চিৎকার–চেঁচামেচিতে তারা ঘুমাতে পারছেন না। বিষয়টি ধানমন্ডি থানার পুলিশকে জানালে তারা ঘটনাস্থল যায়। তখন স্বামী-স্ত্রী দুজনই চড়াও হন পুলিশের ওপর। তারা নিজেরা অভিযোগ করেননি, তারপরও পুলিশ কেন এসেছে, এর জবাব চান। একপর্যায়ে প্রতিবেশীর সহায়তায় বিষয়টির মীমাংসা করতে হয় পুলিশকে।
ঢাকা শহরে ৯৯৯ এর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দ্রুত সেবা পৌঁছে দেয়া আর এক্ষেত্রে ঢাকা শহরের যানজটকে বড় একটি প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা হয়।
৯৯৯-এ ফোন করে কাউকে পরবর্তী সময়ে কোনো আইনি ঝামেলা পোহাতে হয় না। এখানে তথ্যদাতার গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। তার তথ্য প্রকাশ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তথ্যদাতার পরিচয় প্রয়োজন হয়।
আপনি যদি কোন মোবাইল ফোন থেকে কল করে থাকেন তাহলে আপনার নম্বরটি খোলা রাখুন, যাতে অপারেটর যে কোনো মুহূর্তে আপনার সাথে পুনরায় যোগাযোগ করতে পারে।
লেখক : অ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার, বাংলাদেশ পুলিশ ।