মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার নাওভাঙা গ্রামের রেবেকা বেগম বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ্য। সেই অসুস্থতা আরও বেড়ে গেছে গত কয়েকদিনে। একই অবস্থা ওই গ্রামের মধ্যপাড়ার গোলাম রসূলের। অন্যের ক্ষেতে মজুর খাটলেও পেটের অসুস্থ্যতা নিয়ে বাড়িতেই পড়ে আছেন।
মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর এবং রাজাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এই রকম আরও অনেকের অসুস্থ্যতার খবর পাওয়া গেছে। মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’র আওতায় ১০ টাকা দামের চাল সংগ্রহ করেছেন। আর এসব চাউল সরবরাহ করা হয়েছে মাগুরার খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অধিন বিনোদপুর খাদ্য গুদাম থেকে।
ঢেঁকিছাটা দেশি চালের মতো দেখতে বাজারের যেকোনো চালের চেয়ে আকৃতিতে বড় ও লম্বা গন্ধযুক্ত এসব চালের ভাত থেকে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আবার কিছুক্ষণের মধ্যেই সেগুলো নরম হয়ে খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। অনেকেই রান্নার পর সেগুলো গবাদি পশু কিংবা হাঁস মুরগির খাবার হিসেবে ফেলে দিয়েছেন বলেও ভূক্তভোগিরা জানিয়েছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছর করোনার প্রাদূর্ভাবের কারণে ভিড় এড়াতে সরকার খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়। নতুন করে এ বছরে মার্চের শেষ সপ্তাহে আবারও শুরু হয়েছে তালিকাভূক্ত দরিদ্র মানুষের মধ্যে ৩০ কেজি হারে চাল বিতরণ।
কিন্তু জেলার মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ও রাজাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের দরিদ্র পরিবারগুলো ডিলারের কাছ থেকে সংগৃহিত চাল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। জেলা খাদ্য বিভাগের অধিন বিনোদপুর খাদ্য গুদাম থেকে সরবরাহকৃত এসব চাল ওই দুটি ইউনিয়নের ৪ জন ডিলারের মাধ্যমে মোট ১ হাজার ৫৪২ জন দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
রাজাপুর ইউনিয়নের রাঢ়িখালি বাজারের অনুমোদিত ডিলার স্বপন কুমার রায় বলেন, ৩০ কেজি করে চাল একেকটি বস্তায় সেলাই করা। গুদাম থেকে যেমন দেয়া হয়েছে তাই বিতরণ করা হয়েছে। মান আগের চেয়ে খারাপ। অতিতে কখনও এমন চাল দেয়া হয়নি। কিন্তু আমাদের তো কিছুই করার নেই।
মাগুরা খাদ্য বিভাগের বিভিন্ন ডিলার ও চালকল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিনোদপুর গুদাম থেকে সরবরাহকৃত এইরকম চাল মাগুরার কোথায়ও তৈরি হয়না। কিন্তু ওই গুদামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পঙ্কজ প্রামাণিক নিজস্ব ব্যবসায়ীর মাধ্যমে মাগুরার বাইরে ‘থাই চাল’ নামে পরিচিত অস্বাস্থ্যকর এসব চাল কমদামে কিনে গুদামে ঢুকিয়েছেন। আর এই কাজটি সম্পন্ন করতে তিনি মাগুরা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তার সহযোগিতা নিয়েছেন। যাদেরকে প্রতি কেজির বিপরীতে উৎকোচ দিতে হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য ওই সূত্রটি জানিয়েছে।
তবে বিনোদপুর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা পঙ্কজ প্রামাণিক নিম্নমানের চাউল বরাদ্দের বিষয়টি স্বীকার করলেও কীভাবে এসব চাউল তার গুদামে ঢুকেছে সেটি মনে করতে পারছেন না বলে জানান। তবে ভবিষ্যতে চাল মজুদের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন বলে উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হাফিজুর রহমান উৎকোচ পাবার কথা অস্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে কারও কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। গত বছরের সংরক্ষিত চাল দেয়ার কথা। বিনোদপুর গুদাম কর্মকর্তা তো বাইরে থেকে চাল কিনে দিতে পারেন না। এ বিষয়টি প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।