ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী : সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আবহমান বাংলার নৈসর্গিক সৌন্দর্য বিশ্বনন্দিত। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, প্রাচীন বাংলার সমৃদ্ধ জনপদ বরাবরই ছিল ভিনদেশি শাসক-শোষকের নিপীড়ন-নির্যাতন-নিষ্পেষণের অভিঘাতী অনগ্রসর গ্রাম। আর্য-দ্রাবিড়-রাঢ়-মৌর্য-তুর্কি-পাঠান-মোগল-ইংরেজ-পাকিস্তানসহ সব ঔপনিবেশিক আমলেই লুণ্ঠনের পরিণাম ছিল অভাগী বাংলার মানুষের দুঃখ-দুর্দশা। পক্ষান্তরে বিদেশি বণিকদের আকৃষ্ট করার মতো বিচিত্র ও মূল্যবান পণ্যসামগ্রীর সমারোহে বাংলার প্রকৃতি ছিল অতুলনীয়। সতেরো শতকের এ বাংলা সম্পর্কে ফরাসি ইতিহাসবিদ ফ্রান্সিস বার্নিয়ার বলেছিলেন, বিশ্বের সর্বাপেক্ষা মনোরম ও সুফলা দেশ হিসাবে মিশরকে বর্ণিত করা হলেও বিষয়টি আসলে প্রাপ্য ছিল এই বাংলার। সমগ্র অশুভ শক্তির অন্ধকারের দেওয়াল ভেঙে মাতৃভূমির মুক্তির লক্ষ্যে সামরিক ও সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রথম আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ ছিল মহান ভাষা আন্দোলন। ১৯৫২ সালে মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি আদায়ে রাজপথ রক্তভেজা হয়েছিল শহিদদের প্রাণ বিসর্জনে। মুক্তির মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনার সূচনাপাঠ ছিল ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি।
এ ধারাবাহিকতায় বাঙালি জাতিসত্তার নবতর উন্মেষ ঘটিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের অবিস্মরণীয় প্রজ্বলনে বাঙালি অর্জন করেছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। ৩০ লাখ শহিদ ও ২ লাখ জননী-জায়া-কন্যার সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে লাল-সবুজের পতাকা উড্ডীন হয়েছে মূলত ভাষা আন্দোলনের উৎসসূত্রে। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা ও রাষ্ট্রভাষা হিসাবে এর স্বকীয় বিকাশ ও বিস্তারে বিশ্বে এত বেশি রক্তদানের অধ্যায় একান্তই বিরল। প্রখ্যাত সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবী-লেখক ও কলামিস্ট সর্বজন শ্রদ্ধেয় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী রচিত এবং শহিদ আলতাফ মাহমুদ সুরারোপিত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গানটির মর্মস্পর্শী প্রাণস্পন্দনে উচ্চকিত পথযাত্রায় বর্ণিল হয়েছে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের অনবদ্য ইতিহাস। আজকের দিনে মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠায় রফিক-জব্বার-বরকত-সালামসহ সব শহিদ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তার নেতৃত্বে সংঘটিত মহান মুক্তিযুদ্ধে সব প্রাণ বিসর্জনকারী শহিদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। অতি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, প্রভাতফেরির অচিন্তনীয় ভাবাবেগে নারী-পুরুষ-শিশু ও কিশোর-তরুণ-প্রৌঢ়-বৃদ্ধ আপামর জনসাধারণের পদচারণায় ও শহিদ মিনারের বেদিমূলে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ তৈরি করেছে বাঙালির শাশ্বত অটুট বন্ধন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রচিত হয়েছে সৌহার্দ সম্প্রীতি প্রকাশে বাঙালির ঐতিহ্য-কৃষ্টি ও সংস্কৃতির অপরূপ বৈশিষ্ট্য এবং নির্ভীক-নান্দনিক-মাঙ্গলিক দেশপ্রেমের অবিচ্ছেদ্য পটভূমি।
সচেতন বাঙালি সম্যক অবগত আছেন-ভাষাভিত্তিক একটি জাতি হিসাবে বাঙালির আত্মপ্রকাশ ঘটেছে হাজার বছরের বহু আগে। ইংরেজি, ফরাসি বা জার্মান ভাষার সমরূপ বাংলা ভাষার ইতিহাস প্রায় দশম শতক থেকেই প্রবহমান। মূলত মানব সংস্কৃতির বস্তুগত উপাদান সৃষ্টির পটভূমিতে রয়েছে অবস্তুগত জ্ঞান-বিজ্ঞানেরই ধ্যান-ধারণা। অবস্তুগত সংস্কৃতির প্রধান উপকরণ মাতৃভাষা মানুষের মনোজগতের ভাব-কল্পনা, ধ্যান-ধারণা, সাহিত্য-শিল্পকলা ইত্যাকার সব অপার্থিব ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক রূপে চিহ্নিত। যেহেতু অন্য কোনো প্রাণীর ভাষা নেই, তাদের সংস্কৃতিও নেই। একমাত্র ভাষার কারণে মানুষ সংস্কৃতিবান হতে পেরেছে। বিজ্ঞজনের মতে, উপমহাদেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ভাষা হচ্ছে বাংলা ভাষা এবং বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় আসীন করার লক্ষ্যে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এতদঞ্চলে দ্বিতীয় নবজাগরণের দৃষ্টান্ত হয়েছে। বাঙালি জাতির মাতৃভাষা বাংলা। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশাল আত্মত্যাগের মহিমা বাঙালি জাতির জন্য শুধু গৌরবগাথা নয়, এটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসাবে গ্রহণ করে সমগ্র বিশ্ব আজ গৌরবদীপ্ত হয়েছে। খ্যাতিমান ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, ৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে এর প্রকাশকালকে যদি চিহ্নিত করা হয়, তাহলে এই ভাষার সমৃদ্ধির ইতিহাস প্রায় চৌদ্দশ বছর।
বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ, বিকাশ ও প্রসারে এ মাতৃভাষার ভূমিকা শুধু ঐতিহ্য বা কৃষ্টিমণ্ডিত নয়, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে জাতিকে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে এ ভাষার অবদান ব্যাপক। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পটভূমিতে দীর্ঘ সংগ্রামের পথপরিক্রমায় ঋদ্ধ প্রাণশক্তিতে পরিপুষ্ট হয়ে মাতৃভাষা বাংলা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের শক্ত ভিত হিসাবে উপহৃত। একুশের চেতনায় ভাস্মর মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক নীতিগুলো তথা সংবিধানসম্মত জাতির প্রধান চার আদর্শ-জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রকে জাতি তাদের সামগ্রিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির সনদ হিসাবে গ্রহণ করেছে। মাতৃভাষা বাংলাকে প্রায়োগিক অর্থে যথাযথ মূল্যায়ন এবং সর্বত্র এর বিকাশকে অগ্রাধিকার না দিয়ে শুধু একুশে ফেব্রুয়ারি অথবা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে আমাদের তৎপরতা কোনোভাবেই জাতির সামষ্টিক আর্থসামাজিক ও মানবসম্পদ উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে না। মাতৃভাষার মাধ্যমে সব স্তরে এবং সব জনপদে শিক্ষাকে যদি কার্যকরভাবে জনপ্রিয় করা না যায়, তাহলে শিক্ষার হার বৃদ্ধি এবং এর প্রাসঙ্গিক উন্নয়ন নিয়ামকগুলোর তুলনামূলক প্রবৃদ্ধি কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
বাংলা ভাষাকে অবহেলা করার যে প্রবণতা, তা যে শুধু ব্রিটিশশাসিত ঔপনিবেশিক এবং পাকিস্তানশাসিত অভ্যন্তরীণ ঔপনিবেশিক যুগে সম্প্রসারিত হয়েছিল তা নয়। এর বহু আগে থেকে, বিশেষ করে তুর্কি শাসনের সময় থেকেই বাংলা ভাষার প্রতি বিরূপ ধারণা স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছিল। মধ্যযুগে বাংলা ভাষার মর্যাদাকে স্বশাসনে প্রতিষ্ঠাকল্পে কবি আবদুল হাকিম তার ‘বঙ্গবাণী’ শীর্ষক এক কবিতায় লিখেছেন: ‘যে সব বঙ্গেতে জন্মে হিংসে বঙ্গবাণী, সে সব কাহার জনম নির্ণয় ন জানি।’ এটি যে শুধু একটি ব্যঙ্গার্থক কথপোকথন বা কোনো রচনার পঙ্ক্তি ছিল তা নয়, এটা ছিল এই অপশাসন এবং বাংলা ভাষা অবমূল্যায়নের বিরুদ্ধে বৃহত্তর বাঙালি জনগোষ্ঠীর ক্ষোভ, যন্ত্রণা ও প্রতিবাদের প্রচীয়মান প্রকাশ। ‘আমার ধ্যানের ভারত’ শীর্ষক রচনায় ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী বলেছেন, ‘মাতৃভাষাকে স্থানচ্যুত করার পদ্ধতিকে ইংরেজদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ইতিহাসের একটি দুঃখজনক অধ্যায় বলে বর্ণনা করা যেতে পারে।’ তিনি বলেন, রামমোহন রায় আরও বড় সংস্কারক এবং লোকমান্য তিলক আরও বড় পণ্ডিত হতে পারতেন, যদি তারা তাদের চিন্তাধারাকে ইংরেজিতে চিন্তা বা প্রকাশ না করে তাদের মাতৃভাষায় তার প্রকাশ ঘটাতেন।
অবশ্যই উল্লেখ্য, গুণী ব্যক্তিরা ইংরেজি সাহিত্যের সুসমৃদ্ধ রত্নভান্ডারের জ্ঞান দ্বারা উপকৃত হয়েছিলেন। তবে নিজেদের মাতৃভাষার মাধ্যমে না হওয়ায় এ জ্ঞান অর্জন কতটুকু জনগণের উপকারে এসেছে, তা প্রশ্নের দাবি রাখে। নিজের মাতৃভাষায় জ্ঞানের সমৃদ্ধিকরণকে অবহেলা করে গান্ধী মনে করেন, একদল অনুবাদকের সৃষ্টি করে কোনো জাতি মহৎ কিছু অর্জন করতে পারে না। মাতৃভাষায় চিন্তা, মতপ্রকাশ এবং সামগ্রিক অর্থে জ্ঞান অর্জনের যে ধারা; সেটি বিশ্বের শীর্ষ উন্নত দেশ যেমন চীন, জাপান, ফ্রান্স, জার্মান ইত্যাদির উন্নয়নের সফল ইতিহাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পরিপূর্ণ রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলা অভিষিক্ত হলেও এখনো আমরা দেখি যে, সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহারে কার্যকর ব্যবস্থা প্রবর্তনের নির্দেশনা চেয়ে ২০১৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে বাংলা ভাষায় একটি রিট আবেদন করা হয়। সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এবং বাংলা ভাষা প্রচলন আইন ১৯৮৭ বাস্তবায়নে নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, বাংলা ভাষা আইন সর্বত্র অনুসরণ করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং ওই আইনের ৪ ধারা অনুসারে প্রয়োজনীয় বিধি জারি করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না-এ মর্মে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবসহ সাতজনকে বিবাদী করে হাইকোর্টে রুল চাওয়া হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিজ্ঞ বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ইংরেজিতে থাকা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিজ্ঞাপন, গাড়ির নম্বর প্লেট, সব ধরনের সাইনবোর্ড ও নামফলক বাংলায় লেখার অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দিয়েছেন। পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শহরের অন্যান্য কলেজ, মুদ্রা, স্ট্যাম্প এবং নৌবাহিনীর নিয়োগ পরীক্ষাসহ সরকারি সব কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহার তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যেমন ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়েছিল, উল্লিখিত রিট আবেদন নতুন করে সেই ধারণাকে শানিত করেছে বলে আমার বিশ্বাস। ‘একুশ মানে মাথা নত না করা’-মাতৃভাষা আন্দোলনের এ বোধ এখনো কতটুকু জোরালোভাবে সঞ্চারিত হচ্ছে, এ রিট আবেদন তারই সাক্ষ্য বহন করে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি, ধ্যান-ধারণা, মূল্যবোধ, শিল্পসাহিত্য ইত্যাদির অপরিসীম উন্নয়ন মাতৃভাষা বাংলাকে ঘিরে এবং এর যথাযথ মর্যাদা এবং সর্বক্ষেত্রেই এর সামগ্রিক প্রচলন যতটুকু না প্রভাব বিস্তারের কথা ছিল, তা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়নি বলেই আমাদের এখনো আদালতের আশ্রয় নিতে হচ্ছে। বাঙালি জাতির জন্য এর চেয়ে বড় লজ্জা কী হতে পারে! সংস্কৃতির বিশ্বায়ন এমন এক ভঙ্গুর সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মোড়কে দীয়মান হয়েছে, যা প্রতিনিয়ত আমাদের ঐতিহ্যকে নষ্টামির চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করছে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের ধারণা অনুযায়ী, প্রচলিত নব্য-উদারনৈতিক বিশ্বায়নের মতাদর্শে গণমাধ্যম, জনসংযোগ শিল্প ও বিজ্ঞাপনের সাহায্যে তথা সংবাদ বুলেটিন, সাক্ষাৎকার, সম্পাদকীয়, বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান ও বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন যন্ত্র এমন এক অবস্থান দখলে নিয়েছে; যাতে সাধারণ নাগরিকরা পরিণত হয়েছে পণ্যসামগ্রীর উৎসাহী ভোক্তা ও ক্রেতায়। অধ্যাপক জ্যাকি বি. জেলিনাসের মতে, এ বিজ্ঞাপন কর্মযজ্ঞে প্রতিবছর কোম্পানিগুলো খরচ করে ১৪০০ বিলিয়ন ইউএস ডলারের বেশি, যা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মোট ঋণের ৭০ শতাংশ বা বিশ্বব্যাপী শিক্ষা খাতে বরাদ্দ সব সরকারি ব্যয়ের ৫০ শতাংশ। সংস্কৃতির এ বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, জাতিগত ঐতিহ্যিক অনুশীলন, ভাষার গুণগত চর্চা ইত্যাদি বাংলা ভাষাকেও দারুণভাবে প্রভাবিত করছে। ‘বাঙলিশ’ অর্থাৎ বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে সংবাদ পরিবেশন, বিনোদন কর্মকাণ্ড উপস্থাপন, বিজ্ঞাপন যন্ত্রে অতিমাত্রায় অনর্থক প্রযুক্তির ব্যবহার, আবৃত্তি, নৃত্যকলা, নাটক, ছায়াছবি ইত্যাদিতে এমন এক অপসংস্কৃতির ধারার বিকাশ ঘটাচ্ছে, টেলিভিশন ও বেতারনির্ভর এসব কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই যে বাংলা ভাষাভিত্তিক একটি উন্নত জাতির ভবিষ্যৎকে সত্য-সুন্দর কল্যাণ ও আনন্দের পথে এগোতে দেবে না-এটি অনেকটুকু নিশ্চিত করে বলা যায়। করোনার এ বৈশ্বিক ক্রান্তিকালে বাঙালির মাতৃভাষা আন্দোলনের আরাধ্য গন্তব্য বা স্বাধীন মাতৃভূমি প্রতিষ্ঠার প্রেরণা ও প্রেষণা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপনের সঙ্গে করোনামুক্তির জয়গানে পুরো বিশ্ব উদ্বেলিত হোক-এ প্রত্যাশা করি।
ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী : সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়