মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : মাগুরা মহম্মদপুর উপজেলার বাবুখালি ইউনিয়নের পাচুড়িয়া এলাকায় জনবসতিপূর্ন এলাকায় অবৈধ ভাবে গড়ে উঠেছে কয়েক হাজার মুরগির বিশাল পোলট্রি খামার। মুরগির খামারের বিষ্ঠার দূর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। অন্যদিকে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে শতাধিক পরিবার।
অভিযোগ উঠেছে, নীতিমালা উপেক্ষা করে গ্রামের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় খামারটি স্থাপন করা হয়েছে। এ বিষয়ে মহা পরিচালক পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকা, উপ-পরিচালক পরিবেশ অধিদপ্তর যশোর, জেলা প্রশাসক মাগুরা, পুলিশ সুপার মাগুরা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহম্মদপুর, ওসি মহম্মদপুর ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে গ্রামবাসী।
লিখিত অভিযোগ ছাড়াও গ্রামবাসিরা জানায়, তিন বছর আগে প্রভাব খাঁটিয়ে চরপ্চুড়িয়া গ্রামের মৃত অশিত বিশ^াসের ছেলে ধনঞ্জয় বিশ্বাস গ্রামের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্রয়লার মুরগির খামার স্থাপন করেন। বর্তমানে খামারে প্রায় ৪ হাজার মুরগি ও ৫ শত হাঁস রয়েছে। হাঁস- মুরগির বিষ্ঠার কারণে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
বিষ্ঠার দুর্গন্ধে তাদের ঘরের দরজা বন্ধ করে খাবার খেতে হয়। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ভুগছে তাদের স্বজনরা। খামারের চারদিকে মানুষের বসবাস করা সর্ম্পূণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অথচ নীতিমালা অনুযায়ী একটি মুরগির খামার স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ও প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত হতে হবে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং জনগণের ¶তি হয় এমন স্থানে খামার স্থাপন করা যাবে না। অথচ নিয়মের তোয়াক্কা না করেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই এ খামারটি করেছেন ওই ব্যাক্তি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খামারটির আশপাশে যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মুরগির বিষ্ঠা ও মরা মুরগি। সেখানে নেই পানিনিষ্কাশনের তেমন কোন ব্যবস্থা। খামারের চারপাশে প্রায় শতাধিক বসতবাড়ি। এসব বাড়ি থেকে তীব্র দূর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
গ্রামের বাসিন্দা স¤্রাট কুমার সিংহ বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশেই খামার। বিষ্ঠা থেকে সব সময় দূর্গন্ধ ছড়ায়। আশপাশে বসবাস করা কষ্টককর। ।’ পেট ভরে পরিবারের কেহই ঠিকমত দুমুঠো ভাত খেতে পারে না। গন্ধে দরজা জানালা খোলা যায় না কোনোভাবেই।
কলেজছাত্র অনিমেষ বিশ্বাস, অলোক বিশ্বাস, সোহাগ সরকার ও অনিক রায় বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে খামারটি সরানোর জন্য গ্রামাবাসির পক্ষ থেকে গত বছরের ১৬ ই জুন ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি কোনো ব্যাবস্থা নেন নি। পরে একই তারিখে ইউএনওর কাছেও অভিযোগ দেওয়া হয়। তিনিও কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ৭ অক্টোবর পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তর খামারটি পরিদর্শন শেষে খামার মালিককে খামার বন্ধের নির্দেশ দিলেও এখন পর্যন্ত সেটি রয়েছে বহাল তবিয়তে।
তারা আরো বলেন খামারটি স্থাপনে পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অনুমতি নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া আবাসিক এলাকায় অবস্থিত খামারের বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা নেই। খামারটি স্থাপনের ক্ষেত্রে জাতীয় পোলট্রি উন্নয়ন নীতিমালা-২০০৮ মানা হয়নি।
খামার মালিক ধনঞ্জয় বিশ্বাস জানান, খামার পরিচালনার সরকারি কোনো কাগজ পত্র তার কাছে নেই। তারপরও কীভাবে অবৈধভাবে খামারটি স্থাপন চালিয়ে যাচ্ছেন সে প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেনি তিনি।
এ বিষয়ে বাবুখালি ইউপির চেয়ারম্যান মীর সাজ্জাদ হোসেন বলেন, খামারটি বন্ধ করে দেবার কথা ছিল। কিন্তু এখনও কীভাবে চলছে বুঝতে পারছি না।
তবে মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামানন্দ পাল বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।