মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : মাগুরা শহরের ‘মায়া নীড়’ বাড়ির ছেলে আশফাক উল হক বাপ্পি। মায়ানমারে পেছনের সারিতে পড়ে থাকা ক্রিকেটকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে একাধারে দেশটির হেড কোচ এবং ফেডারেশনের জেনারেল ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক এই ক্রিকেটার।
মাগুরা শহরের পিটিআই পাড়ার মুন্সি আবু সাঈদ বিল্লু মিয়ার ছেলে বাপ্পি বিকেএসপির প্রথম ক্রিকেট ব্যাচের ছাত্র। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক গেম ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের গেম এডুকেশন ম্যানেজার সাবেক ক্রিকেটার বাপ্পি বর্তমানে মিয়ানমার জাতীয় পুরুষ ও মহিলা ক্রিকেট দলের কোচ এবং মিয়ানমার ক্রিকেট ফেডারেশনের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন একই সাথে।
বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক এবং বিসিবির ডিরেক্টর নাইমুর রহমান দুর্জয় এমপি, বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কোচ সালাউদ্দিনদের সাথে একই ব্যাচের ছাত্র তিনি। খেলতেন স্পিনার কাম ব্যাটসম্যান হিসেবে। ১৯৮৮-৯২ সাল পর্যন্ত শান্তিনগর দলের হয়ে খেলেছেন প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে। ১৯৯৩-৯৫ পর্যন্ত খেলেছেন আবাহনীর হয়ে। লেখাপড়ার চাপে ছাড়তে হয় ক্রিকেট। এরপরও ত্যাগ করতে পারেননি রক্তে মিশে থাকা ক্রিকেট। জড়িয়ে পড়া ক্রিকেট কোচিং পেশাতে। ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ছিলেন বিকেএসপির কোচ। এরপরই মিয়ানমারে চলে যান তিনি।
মিয়ানমারে ফুটবল, সেপাক তাকরো, বক্সিং, কিক বক্সিং আর বাস্কেটবলের ভিড়ে বেশ পেছনের কাতারে রয়েছে ক্রিকেট। আসিয়ান অঞ্চলের দেশটি ক্রিকেটে আরো এগোনোর চেষ্টা করছে। তাদের সেই প্রক্রিয়ার নেপথ্য নায়ক মাগুরার ছেলে আশফাক উল ইসলাম বাপ্পি।
অষ্টাদশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ আমল থেকে ক্রিকেটের চর্চা শুরু সাবেক বার্মা বা বর্তমান মিয়ানমারে। ভিতরে বন্ধ থাকার পর ২০০৫ সালে আবার চালু করা হয় খেলাটি। তখনই কোচিং সাইডে এসিসির সহযোগিতা চায় মিয়ানমার। ২০১০ সালে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) কোচ হন বাপ্পী। সে বছরই এসিসি তাকে মিয়ানমারের হেড কোচ হিসেবে পাঠায়। চার বছর এসিসির বেতনে এই দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) সাবেক এই ছাত্র। ২০১৫ সালে এসিসি তাদের বড় পরিসরের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। কিন্তু সরাসরি মিয়ানমার ক্রিকেট ফেডারেশনের অধিনে বাপ্পি সেখানে কোচিংয়ের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
মাগুরার কৃতি সন্তান আশফাক উল হক বাপ্পি বর্তমানে মিয়নামারে স্ত্রী রিজওয়ানা আহমেদ বাবুনি এবং দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করছেন। ইতোমধ্যে এসিসি/সিএ (ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার) লেভেল থ্রি কোচিং সার্টিফিকেট অর্জন করেছেন। ক্রিকেট কোচিংয়ের জন্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড-বিসিসি এখন বাপ্পিকে পেতে চায় বলে জানা গেছে। তবে আপাতত মিয়ানমারের হেড কোচ এবং ফেডারেশনের জেনারেল ম্যানেজারের চাকরি ছাড়ার ইচ্ছে তার নেই বলে জানিয়েছেন বাপ্পি।
মিয়ানমারে এখনো লংগার ভার্সানের ক্রিকেট চালু হয়নি। যা কিছু চর্চা টি-২০, সিক্স এ সাইড, টি-১০ এবং ৫০ ওভারের ম্যাচে। দেশটি এখন আইসিসি এশিয়া ইস্টার্ন রিজিয়ন কোয়ালিফায়ার্সে খেলে। তা পুরষ ও মহিলা দুই বিভাগেই।
২০১৭ সি গেমসে পুরুষদের ক্রিকেটে ইন্দোনেশিয়াকে হারায় তারা। এর আগে ভুটান ও চীনকে হারায় তা এসিসি আইসিসি ইভেন্টে। ২০১৮ সাল থেকে নিয়মিত চীনের যেকোনো লেভেলের দলের বিপক্ষে জিতে চলেছে মিয়ানমার। মহিলা দলে গত বছর থেকে শুরু হয়েছে আন্তর্জাকিতক ম্যাচ। সিঙ্গাপুরে হোম আ্যান্ড অ্যাওয়েতে তিন ম্যাচের সিরিজে ২টিতে জয়। এরপর সিঙ্গাপুর মিয়ানমারে এলে তাতে চারটিতেই জয় স্বাগতিকদের । জানুয়ারিতে থাইল্যান্ড ওমেন্স স্ম্যাশ টুর্নামেন্ট ছিল মিয়ানমার মেয়েদের প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক আসর। এতে দুই খেলায় জয় মালয়েশিয়া ও ভুটানের বিপক্ষে এই পারফরম্যান্স ১০ দলের মধ্যে ষষ্ঠ স্থান এনে দেয় মিয়ানমারকে। এই সাফল্যের ফলে ক্রিকেটের প্রতি মিয়ানমার সরকারের ব্যাপক আগ্রহ জন্মেছে বলে জানান তরুণ ক্রিকেট কোচ বাপ্পি।