মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : করোনা কালে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থিদের জন্যে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে পরিচালিত অদম্য পাঠশালার কার্যক্রমের মাসপূর্তি উপলক্ষে শনিবার মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শহরের দোয়ারপাড় সর্দার পাড়ায় আয়োজিত মতবিনিময় সভায় অদম্য পাঠশালার শিক্ষার্থি, অভিভাবক এবং স্বেচ্ছাসেবি শিক্ষকরা অংশ নেন।
বাসদ এর কেন্দ্রীয় পাঠচক্র ফোরামের সদস্য শম্পা বসুর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন অভিভাবক কল্পনা বিশ্বাস, শিল্পী বিশ্বাস, বাসন্তী বিশ্বাস, সেচ্ছাসেবক শিক্ষক ভবতোষ বিশ্বাস জয়, মোঃ সোহেল, শিক্ষার্থী কেয়া বিশ্বাস, তনুশ্রী আইচ ও ঐশী বিশ্বাস।
প্রকৌশলী শম্পা বসু বলেন, করোনা সংক্রমণ দেশে একদিকে স্বাস্থ্য ঝুঁকি অন্যদিকে অর্থনৈতিক দুর্দশার সৃষ্টি করেছে। সীমিত আয়ের পরিবারে অনেক সমস্যার মধ্যে তাদের সন্তানদের লেখাপড়া অব্যাহত রাখা ভীষণ কঠিন হয়ে পড়েছে। পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়ার আশংকাও তৈরি হয়েছে অনেকের ক্ষেত্রে। যাদের অনলাইনে ক্লাস করা এবং গৃহশিক্ষক রেখে প্রাইভেট পড়ার সুযোগ নেই শিক্ষা ক্ষেত্র থেকে তাদের ঝরে পড়া রোধে বিনাবেতনের স্কুল ‘অদম্য পাঠশালা’ কার্যক্রম শুরু হয় ১মাস আগে। আমরা বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ মাগুরা জেলা শাখার উদ্যোগে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের একদল স্বেচ্ছাসেবকের অংশগ্রহণে এবং শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তি বর্গের সহযোগিতায় শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘অদম্য পাঠশালা’ পরিচালনা করতে শুরু করি। আজ অদম্য পাঠশালা কার্যক্রমের এক মাস পূর্তি । শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষকদের পরামর্শ অনুযায়ী অদম্য পাঠশালা কার্যক্রমের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে আরও ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারবো বলে আশা করছি।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এর জেলা সংগঠক ভবতোষ বিশ্বাস জয় বলেন, এই শিক্ষার্থীদের কারোও ঘরে পড়ার টেবিল নেই। একটি ঘরে পুরো পরিবারের সদস্যরা থাকেন। ঘরে কোন পড়াশোনা করার পরিবেশ নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা অনেক মনোযোগী। এক মাস আগে যখন এখানে পড়ানো শুরু হয়েছিল তার থেকে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেড়েছে এবং তারা নিয়মিত অদম্য পাঠশালায় পড়াশোনা করতে আসে। এই শিক্ষার্থীদের কিছুটা হলেও সহযোগিতা করতে পেরে আমরা আনন্দিত।
অভিভাবক কল্পনা বিশ্বাস বলেন, আমাদের পাড়ার অধিকাংশ পুরুষ নাপিতের দোকানে কাজ করে আর মহিলারা মেসে রান্না করতেন । করোনা দুর্যোগে আমাদের কাজকর্ম নেই বললেই চলে। ছেলে মেয়েদের খাবার-ই ঠিকমতো জোগাড় করতে পারি না। গৃহশিক্ষক বা অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করবো কিভাবে?
শিক্ষার্থী ঐশী বিশ্বাস বলেন, অদম্য পাঠশালা শুরুর আগে আড়াই মাস কিছু পড়াশোনা করিনি। বই নিয়ে বসা-ই হতো না । সারাদিন ঘরের বাইরে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতাম । অদম্য পাঠশালায় প্রতিদিন ক্লাস করি, বাসায়ও এখন পড়াশোনা করি।
মতবিনিময় সভা শেষে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয় এবং সকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা সহায়তা সামগ্রী ও টিফিন বিতরণ করা হয়।