মাগুরা প্রতিনিধি : মাগুরায় ছুটিতে বাবার বাড়িতে গিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি খন্দকার লাবনি (৪০)। অন্যদিকে এ ঘটনার ৩ ঘন্টা পর মাগুরা পুলিশ লাইনে কর্মরত অবস্থায় সর্টগানের গুলিতে আত্মহত্যা করেছে এক সময় খন্দকার লাবনির দেহরক্ষি হিসেবে মাহমুদুল হাসান নামে এক কনস্টেবল।
এ ঘটনা নিয়ে পুলিশের বিভিন্ন বিভাগ তদন্ত শুরু করলেও একই দিনে তাদের মৃত্যুর বিষয়ে কোনো যোগসূত্র আছে কিনা পুলিশের কর্মকর্তারা সুষ্পষ্টভাবে তার কিছুই জানাননি।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি খন্দকার লাবনি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সারঙ্গদিয়া গ্রামের খন্দকার শফিকুল আজমের একমাত্র মেয়ে। এ সপ্তাহের রবিবার সে দুই সন্তান তাজকিয়া (৮) এবং তাজনিয়া (৪) কে নিয়ে মাগুরায় বাবার বাড়িতে আসেন। গত রাতে সে একাকি ঘরে ছিলেন। রাত ১২ টার দিকেও সে মোবাইল ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু রাত ১ টার দিকে বাড়ির গৃহকর্মীসহ অন্যান্যরা ঘরের ফ্যানের সঙ্গে তার ফাঁস নেওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারেন।
ঘরের কাজ শেষে করে বাড়ির গৃহ পরিচারিকা শাহানা এডিসি লাবনির ঘরের পাশে টিউবওয়েলে গেলে ঘরের মধ্যে অস্বাভাবিক শব্দ পেয়ে বাড়ির অন্যান্যদের জানান। পরে তারা ভিতরে ঢুকে ফ্যানের সঙ্গে ওড়নায় ঝুলন্ত অবস্থায় তাকে দেখতে পায়। দ্রুত তাকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ছুটি নিয়ে বেড়াতে এসে আত্মহত্যার বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কেউ কিছু জানাতে পারেন নি। তবে খন্দকার লাবনির বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক খন্দকার শফিকুল আজম জানান, মেয়ের স্বামী ব্যাংক কর্মকর্তা আবদুল্লাহ তারেক বেশ কিছুদিন ধরে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে ভারতের চেন্নাইতে আছেন। কিন্তু মেয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো নয়। পারিবারিক কলহ অনেকদিনের। উভয়েই আলাদা থাকতে বেশি পছন্দ করেন।
এই মাসের প্রথম সপ্তাহেও লাবনি খুলনার বাসাতে দু’ দু’বার আত্মহত্যার চেষ্টা করে। আর এর সবই পারিবারিক কলহের কারণে হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে কেএমপি এডিসি খন্দকার লাবনির দেহরক্ষি কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান গত মে মাসের ২৯ তারিখে মাগুরা পুলিশ লাইনে বদলি হয়ে আসেন। সুনির্দিষ্ট কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে দেহরক্ষির পদ থেকে অপসারণ করে তাকে মাগুরা বদলি করা হয়েছিলো কিনা সেই বিষয়টির দিকে নজর রাখছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
কনস্টেবল মাহমুদুল হাসানের বাবা এজাজুল হক খানও চুয়াডাঙ্গা পুলিশে কনস্টেবল পদে কর্মরত আছেন। তিনি বলেন, তিন বছর আগে সে চাকরিতে ঢুকেছে। সন্ধ্যায় তার সাথে কথা হয়েছে। কিন্তু আত্মহত্যা করবে এমন মনে হয়নি।
মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কলিম উল্লাহ জানান, আত্মহত্যার ঘটনা দুটি পৃথক। খবর পেয়ে লাশ দুটি উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। আইনগত যত প্রক্রিয়া আছে সেগুলো সম্পন্ন করা হচ্ছে।
দুটি মৃত্যুর মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কিনা সে বিষয়ে তিনি বলেন, তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলো বিষয়টি পরিস্কার হওয়া যাবে। তার আগে কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়।