মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : মাগুরায় অবৈধ ইটভাটাকে ঘিরে চলছে রাম রাজত্ব। জেলা প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানার টাকা দিলেই চালানো যায় অবৈধ ইটের ভাটা। যে কারণে পরিবেশের জন্যে ক্ষতিকর এসব ভাটার সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েই চলেছে।
তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে মাগুরায় জেলা সদর, শ্রীপুর, মহম্মদপুর এবং শালিখা উপজেলায় অন্তত ১শ ৫টি ভাটায় ইট পোড়ানোর কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে ২৮টি ভাটায় জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে কয়লা। বাকি ৭৭টি ভাটায় ইট পুড়ছে সরকার নিষিদ্ধ টিনের চিমনির চুল্লিতে। আর এসব ভাটায় প্রতিদিন গড়ে পুড়ছে অন্তত ২০ হাজার মন জ্বালানি কাঠ।
সরজমিনে বিভিন্ন ইটভাটা ঘুরে দেখা যায়, সাড়ে ১০ লক্ষ জন অধ্যুসিত মাগুরা জেলায় পার্শ্ববর্তি অন্যান্য জেলার তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত হারে ইটের ভাটা গড়ে উঠেছে। যার অধিকাংশই আবাসিক এলাকা এবং কৃষিজ জমির উপর। এতে করে প্রতি বছরই আবাদি জমি যেমন কমে আসছে তেমনি বিশাল সংখ্যার ইটের ভাটায় জ্বালানির যোগান দিতে গিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে বৃক্ষরাজি।
মাগুরা জেলা প্রশাসনের নেজারত শাখার তথ্যমতে, জেলার কোন ভাটারই হাল নাগাদ লাইসেন্স নেই। আবার মাত্র দুটি ছাড়া বাকি কোন ভাটারই নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স। তবে অবৈধ ভাটাগুলোতে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের নাজির হরশিত শিকদার।
এদিকে জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির অভিযোগ, সরকারি নিয়ম মেনে জেলার ২৮ টি ভাটা মালিক কয়েক কোটি টাকা ব্যায় করে তাদের পুরণো ভাটাকে পরিবেশ বান্ধব ‘জিগজ্যাগ কিলন’ ভাটায় রূপান্তর করেছেন। যেখানে কয়লা পুড়িয়ে ইট উত্পাদন করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কখনোই অবৈধ টিনের চিমনির ভাটা স্থায়ীভাবে বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বরং জরিমানা আদায়ের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার এক ধরণের বৈধতা দেয়া হয়েছে। যে কারণে প্রতি বছরই অবৈধ টিনের চিমনির ভাটার সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
স্থানীয় ভাটা মালিক ও ম্যানেজারদের অভিযোগ, ভাটা চালাতে ঘাটে ঘাটে দিতে হয় টাকা। আর জরিমানার টাকা সবাইকে দিতে হয় বলেই সরকারি নিয়ম মানার ব্যাপারে কারো কোন আগ্রহ নেই। আবার কেবল জরিমানার টাকা দিলেই ভাটা চালানো যাচ্ছে বলে নতুন লাইসেন্স নেয়া বা নবায়নের ব্যাপারে কেউ উত্সাহ দেখাচ্ছে না।
মাগুরা জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম বলেন, মাত্র ৩০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেই টিনের চিমনিতে ইট পুড়িয়ে ভাল লাভ করা হয়। সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স কিছুই দেয়া লাগে না। কিন্তু সরকারি নিয়ম মেনে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে কয়লা পোড়াতে গিয়ে আমাদের উত্পাদন খরচ বেড়ে গেছে। প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে কেউ কেউ ভাটা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
গত বছর মাগুরায় ১শ ২টি ভাটায় ইট পুড়লেও এবার বেড়েছে আরো ৩টি অবৈধ ভাটা। অবৈধ ভাটার বিষয়ে মাগুরা জেলা প্রশাসক মোঃ আলি আকবর বলেন, অবৈধ ভাটায় এ বছরই প্রথম ইট পুড়ছে তা নয়। অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। তবে মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এসব ভাটাকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা অব্যাহত আছে।