মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : দুই পরিবারের বিরোধে মাগুরার সেবা ক্লিনিকের মালিক কামরুজ্জামান স্বপনের লাশ গেলো হিমঘরে। সোমবার বিকাল সাড়ে ৫টায় মৃত্যু হলেও রাত ১২ টা পর্যন্ত মরদেহ পড়ে থাকে বাড়ির সামনে। স্ত্রী রিক্তা পারভিন লাশ দাফনের চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত নিহতের মা-ভাইয়ের আপত্তির কারণে পুলিশ খাটিয়া থেকে লাশ তুলে ময়না তদন্তের জন্যে নিয়ে গেছে।
মাগুরা টিবি ক্লিনিকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারি (মেড ব্রাদার) কামরুজ্জামান স্বপন (৫২) শহরের পিটিআই পাড়ার গোলাম খানের ছেলে। বেশ কিছুদিন ধরে সে তার দ্বিতীয় স্ত্রী রিক্তা পারভিনকে নিয়ে শহরের হাসপাতাল পাড়ায় প্রতিষ্ঠিত সেবা ক্লিনিকের দ্বিতীয় তলায় বসবাস করতেন। সোমবার সকালে হঠাত্ করেই রিক্তা পারভিন নিজেদের ক্লিনিকের ম্যানেজার আশরাফকে দিয়ে ফরিদপুর ডায়াবেটিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানেই বিকাল সাড়ে ৫টায় তার মৃত্যু হয়।
এদিকে কামরুজ্জামান স্বপনের মৃত্যুর পর দ্বিতীয় পারভিন রিক্তা পারভিন শ্বশুরবাড়ির লোকদের এড়িয়ে লাশ দাফনের চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ করেছেন তার মা হালিমা খাতুন এবং ভাই মিল্কি খান।
মিল্কি খান বলেন, আমার বড় ভাই স্বপন বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ্য। তাকে দেখতে চাইলে রিক্তা পারভিন বাড়িতে ঢুকতে দেয় না। তার সম্পত্তির লোভে ভাইকে নিয়মিত ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখে। সোমবার সকালে মারধর পর্যন্ত করেছে যে কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।
স্বপনের মা হালিমা খাতুন বলেন, ছোট বউ আমার ছেলের সম্পত্তি জালিয়াতি করে লিখে নিয়েছে। এখন তাকে মেরে ফেলে গোপনে দাফন করার চেষ্টা করছিল।
তবে স্বপনের মা-ভাইয়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্ত্রী রিক্তা পারভিন। তিনি জানান, তার স্বামী ডায়ালোসিসের রোগি। অনেকদিন ধরেই অসুস্থ্য। সোমবার সকালে বেশি অসুস্থ্য হয়ে পড়লে ১১ টার দিকে তাকে ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
কোনো মারধরের ঘটনা নেই। কার্ডিয়াক ফেইলিউরের কারণে স্বামীর মৃত্যু হয়েছে এমন দাবি করে রিক্তা পারভিন স্থানীয় সাংবাদিকদের সামনে ফরিদপুর ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দেয়া ডেথ সার্টিফিকেট উপস্থাপন করেন।
এদিকে হাসপাতালটির নেফ্রোলজি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. রেবেকা সুলতানা স্বাক্ষরিত ওই মৃতু সনদ থেকে দেখা যায়, কামরুজ্জামান স্বপনকে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর দুপুর ২ টায় সেখানকার ডায়ালাইসিস ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর স্বপন কুমার মন্ডলের অধিনে চিকিত্সাধিন অবস্থায় ৩ মার্চ সোমবার বিকাল সাড়ে ৫ টায় তার মৃত্যু হয়েছে।
এ অবস্থায় সোমবার সকালে অসুস্থ্য স্বপনকে ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে নিয়ে যাবার বিষয়ে প্রতিবেশিরাও নিশ্চিত করেছেন। অথচ দীর্ঘ এক মাসেরও বেশিদিন ধরে সেখানে ভর্তি থাকার সনদ এবং রিক্তা পারভিনের কথা বার্তার অসংলগ্নতার বিষয়টি জানিয়ে স্বপনের পরিবারের সদস্যরা থানায় অভিযোগ দেয়। যে ঘটনার প্রেক্ষিতে রাত ১২ টার পর দাফনের জন্যে প্রস্তুত স্বপনের লাশ সদর থানা পুলিশ ময়না তদন্তের জন্যে হিমঘরে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, লাশের সুরতহাল থেকে সন্দেহজনক তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। তবে নিকটাত্মিয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। মেডিকেল পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যু নিয়ে কোনো প্রশ্ন দেখা দিলে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মামলা নেয়া হবে।