আনোয়ারুল হাসান রবীন : যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে মাগুরার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধায় নির্মিত শহীদ মিনারগুলো নিদারুন অবজ্ঞার শিকার হচ্ছে। টয়লেটের সাথে আবার কোথায়ও সিড়ির মুখে শহীদ মিনার নির্মাণের কারণে সেখানে চলছে চরম অবমাননার ঘটনা। জেলার মহাম্মাদপুর উপজেলার পাল্লা শিরগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একই উপজেলার চৌবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্কুল ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
ভাষা শহীদদের প্রতি অশ্রদ্ধা ও অবহেলার বিষয়টি তুলে ধরার পর স্কুল কতৃপক্ষসহ শিক্ষা কর্মকর্তারা দুঃখ প্রকাশসহ জরুরী ভিত্তিতে স্থানান্তরের আশ্বাস প্রদান করছেন।আর এসব ঘটনায় ক্ষুদ্ধ ও মর্মাহত ভাষা আন্দোলনের সৈনিক, শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী।
পাল্লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গেলে দেখা যায়, যেখানে শহিদ মিনারটি স্থাপিত তার মুখেই তৈরি করা হয়েছে দোতলায় ওঠার সিঁড়ি। যে কারণে প্রতিনিয়ত জুতা স্যান্ডেল পায়েই দুই তলায় উঠানামার সময় শহীদ মিনারের অবমাননা ঘটছে। অথচ শহীদ মিনার না মাড়িয়ে দ্বিতীয় তলায় আসা যাওয়ার আর কোন উপায় নেই সেখানে।
অপরিকল্পিত এমন স্থাপনার বিষয়ে ওই স্কুলের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী হোসনে আরা, সাব্বিরসহ অন্যরা ক্ষোভ ও কষ্টের অনুভুতি ব্যাক্ত করে অচিরেই স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছে।
তবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ শওকত আলী দুঃখ প্রকাশ করে বিগত দিনে দ্বায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট অন্যদের উপর দায় চাপিয়েছেন। জানালেন ১০ বছর আগে শহিদ মিনারটি নির্মিত হয়েছে। আর বছর চারেক হলো দোতলায় ৮ম ও ১০ম শ্রেণির দুইটি ক্লাসরুম নির্মাণ করা হয়েছে। দুই বছর আগে তিনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়েছেন। বিষয়টি নজরেও এসেছে। কিন্তু স্কুল তহবিলে তেমন অর্থ না থাকায় কিছু করা যায়নি। তবে ম্যানেজিং কমিটির সাথে অলোচনার মাধ্যমে জরুরী ভিত্তিতে স্থানান্তর করার ব্যাবস্থা নেবেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।
একই উপজেলার চৌবাড়িয়া বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় এক একরের বেশি জায়গা জুড়ে নির্মিত স্কুলের এক কোণে শহীদ মিনারটি স্থাপিত। কিন্তু তার সঙ্গেই গড়ে তোলা হয়েছে স্কুলের টয়লেট। কষ্ট আর ক্ষোভ নিয়েই শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বি, তানজিলসহ অন্যরা জানায়, শুধু বছরের এই সময়টাতেই শহীদ মিনার চোখে পড়ে। অন্য সময় মনেই পড়ে না এখানে ভাষা শহীদদের স্মরণে কিছু একটা আছে। কেননা বছরের অন্য দিনগুলোতে এর কোন চর্চাই দেখা যায় না।
টয়লেট সংলগ্ন শহীদ মিনারের বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবুল কালাম আজাদের কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি যেন কেবলই তার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারলেন; দুঃখ প্রকাশ করে জরুরী ভিত্তিতে এটি স্থানান্তরের ব্যাবস্থা নেবেন বলে তিনি জানান।
অপরিকল্পিত স্থাপনা ও শহীদ মিনার নির্মাণের অবজ্ঞা, অবহেলা আর চরম অবমাননায় ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। মাগুরার প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণে বিশেষ অবদান রাখা নাকোল ঘাশিয়াড়া গ্রামের ভাষা সৈনিক মোঃ আব্দুর রাশেদ মোল্লা, একই এলাকার অপর ভাষা সৈনিক হামিদুজ্জামানের সন্তান কবি সাগর জামানসহ আরো অনেকে ভাষা শহীদদের মর্যাদা রক্ষায় সারা বছর বিশেষ তদারকির দাবি তুলেছেন তারা।
এ বিষয়ে মাগুরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রনজিত্ কুমার মজুমদার জানান, মাগুরার প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শহীদ মিনার রয়েছে যার রক্ষনাবেক্ষনসহ মর্যাদা রক্ষার দায়ভার যথাযথ ভাবে পালনের দায়িত্ব নিজ নিজ স্কুল কর্তৃপক্ষের। কোথায়ও কোন ধরনের অবমাননার খবর জানা গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।