মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : মাগুরায় লাইফ কেয়ার ক্লিনিক নামে একটি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ফারজানা (৩২) নামে একজন প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ডাক্তার নন্দ দুলাল বিশ্বাসের ভুল অপারেশনে ওই প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠলেও শেষ পর্যন্ত আড়াই লক্ষ টাকায় বিষয়টি দফারফা করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। নিহত ফারজানা শহরের কলেজপাড়ার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ১৯ মে বুধবার সকালে প্রসূতি ফারজানাকে মাগুরা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার ডাঃ নন্দ দুলাল বিশ্বাস রোগীর অবস্থা ভালো নয়, দ্রুত অপারেশন করতে হবে এমন কথা বলে তাকে শহরের ভায়না মোড়ে হাজী সাহেব সড়কের লাইফ কেয়ার ক্লিনিকে ভর্তির পরামর্শ দেন। নির্দেশনা মোতাবেক সেখানে ভর্তি করা হলে ডা. নন্দ দুলাল বিশ্বাস বিকালে তার শরীরে অস্ত্রোচার করেন। এ সময় প্রচুর রক্তপাতের ঘটনা ঘটে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি নাজুক দেখে ডাক্তার সন্ধ্যায় রোগীকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। কিন্তু সেখানে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ফারজানার মৃত্যু হয়।
এদিকে ডাক্তারের ভুল অপারেশনের কারণে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় স্বজনরা ওই হাসপাতাল এবং সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের উপর চড়াও হলে স্থানীয় একটি প্রভাবশালি মহলকে কাজে লাগিয়ে তারা বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ নেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি, বৃহস্পতিবার নিহত ফারজানার দাফন সম্পন্ন হলে রাতেই মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল এলাকার একটি ক্লিনিকে উভয় পক্ষ বিষয়টির মীমাংসায় বসে। অনেক দেন দরবারের পর শেষ পর্যন্ত ডাক্তার নন্দ দুলাল আড়াই লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন বলেও ওই সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে নিহত ফারজানা’র ভাই রকিব হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আর্থিক লেনদেন কিংবা বোনের মৃত্যুর বিষয় নিয়ে নতুন করে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
অন্যদিকে অভিযুক্ত ডাক্তার নন্দ দুলালের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে লাইফ কেয়ার ক্লিনিকের ম্যানেজার তারিকুল ইসলাম বলেন, ব্লিডিংয়ের কারণে কিংবা অন্য কোনো কারণে ওই প্রসূতির মৃত্যু হতে পারে। সংশ্লিষ্ট ডাক্তার এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। তবে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্যে নয়, মূলত নিহত প্রসূতির শিশুর পরিচর্যার জন্যে ওই অর্থ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
মাগুরার বিভিন্ন ক্লিনিকে এমনিভাবে একের পর এক রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই চলেছে। অথচ সংশ্লিষ্ট মহল একেবারেই নির্বিকার। এ অবস্থায় মাগুরার সেবা প্রত্যাশি সাধারণ মানুষ স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎকদের উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলছেন।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় এই একই চিকিৎসক নন্দ দুলাল মাগুরা শহরের আরোগ্য ক্লিনিকে জেলার সদর উপজেলার হাজিপুর গ্রামের প্রসূতি সালমা খাতুনের শরীরে অস্ত্রোপচারের সময় মুত্রনালি কেটে ফেলেন। এতে সালমা খাতুন শারীরিকভাবে বিকলঙ্গ হয়ে পড়েন। সালমার স্বামী নুরুল হাকিম তুহিন এ বিষয়ে মাগুরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। অভিযুক্ত চিকিৎসক নন্দ দুলালের স্বীকারোক্তি ও সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি দণ্ডবিধির ৩০৮ ধারায় বিজ্ঞ বিচারক তাকে ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ প্রদান করেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু অজ্ঞাতকারণে দণ্ডপ্রাপ্ত ওই চিকিৎসক এখনও রয়েছেন বহাল তবিয়তে।